আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে পারে ইভিএম: মাহবুব তালুকদার
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার শুরু থেকেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে থাকলেও ঢাকার আসন্ন দুই সিটি করপোরেশনের ভোটে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকার দুটি কারণের কথা বলেছেন।
ইভিএম ব্যবহার হলে তার মতে, “এতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি করার সংস্কৃতির অবসান ঘটতে পারে।”
“দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে শতকরা একশত ভাগ ভোট পড়ার যে অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, ইভিএম ব্যবহারে তারও অবসান হবে।”
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় দেওয়া বক্তব্যে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে নিজের অবস্থান বদলের এই দুটি কারণের কথা জানান মাহবুব তালুকদার।
একাদশ জাতীয় সংসদের ফলাফল উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদের ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। পৃথিবীতে কোনো নির্বাচনেই এ ধরনের ভোটার উপস্থিতির নজির নেই। রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি ও কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার অপবাদ থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইভিএম-এর বাস্তবতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানের রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, যে কোনো অবস্থাতেই আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হবে। এর কোনো অন্যথা হবে না। যারা ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন, তাদের বক্তব্য অনেক সময় তাদের সমর্থক ভোটারদের মনেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, ইভিএম-এর জানাজা না পড়ে বরং এর জন্ম উৎসব পালনের কথা বিরোধীরা ভাবতে পারেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে সাম্প্রতিক উপনির্বাচন ও গত জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ও ব্যালটে ভোটের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, “চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বিহীন ব্যালট পেপারে যে ২৯৪টি আসনে ভোট হয়েছে, ভোটের হার যেখানে ছিল শতকরা ৮০ ভাগ, সেখানে ইভিএম ব্যবহারে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম ভোট পড়েছে।”
ভোটারদের মধ্যে ইভিএম ভীতির কারণে কম ভোট পড়ে থাকতে পারে উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, “এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএম যন্ত্রটির ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। আমার মতে যে কোনো নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এজন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে আবার ভোট গ্রহণ করা হয়। ইভিএম সম্পর্কে আমার বক্তব্যের বটম লাইন হলো, ইভিএম-এ যদি ৫০ শতাংশ ভোট না পড়ে, তাহলে ব্যালট পেপারে আবার ভোট হওয়া উচিত। এজন্য নির্বাচনী বিধি-বিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।”
Comments