রোহিঙ্গা গণহত্যা

কী রায় দিবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত?

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) আজ (২৩ জানুয়ারি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার রায় দিবে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের অং সান সু চি।

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) আজ (২৩ জানুয়ারি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার রায় দিবে।

গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিলো পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মিয়ানমার তাদের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। তবে, মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিশেষজ্ঞরা এই মামলাটিকে ‘ঐতিহাসিক আইনি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মিয়ানমার সরকার আদালতের যেকোনও আদেশ মেনে নেবে কী না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তদন্ত কর্মকর্তা রিড ব্রোডি বলেছেন, “আমাদের সময়ের সবচেয়ে খারাপ গণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রায় দিতে চলেছে আইসিজে। এমন সময়ে রায় দিতে হচ্ছে, যখন সেখানে এখনো নিপীড়ন চলছে।”

লিউভেনের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক গ্লাইডার হার্নান্দেজ ওই তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে তিনি বলেছেন, “মামলার রায়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

আন্তর্জাতিক তদন্ত

আইসিজের সাবেক আইনজীবী মাইক বেকার জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। মামলাটিকে আরও আন্তর্জাতিক তদন্তের অধীনে রাখতে হবে। তবে তিনি আদালতের আদেশ নিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, “এটি হবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। পক্ষপাত ছাড়াই মামলার যোগ্যতা বিবেচনা করে রায় দেওয়া হবে।”

লিউভেনের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক গ্লাইডার হার্নান্দেজ আলজাজিরাকে বলেছেন, “গণহত্যা বন্ধ করতে আইসিজে বিচারকরা যেকোনও  রায় দিতে পারে। জাতিসংঘ পরিদর্শকদের সেখানে প্রবেশের মতো আরও সুনির্দিষ্ট কিছুর ইঙ্গিতও থাকতে পারে এই রায়ে।”

এর আগে ২০০৭ সালে আইসিজে অন্য একটি গণহত্যা মামলার রায় দিয়েছিলো। তখন আদালত জানিয়েছিলো বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ছিটমহলে গণহত্যা চালানো হয়েছে। সার্বিয়া ওই গণহত্যা রোধে দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছে।

আইনজীবী মাইক বেকার দাবি করেছেন, সার্বিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের অস্থায়ী রায় ‘অকার্যকর’ ছিলো।

তিনি বলেছেন, “তারা সার্বিয়ার বাহিনীকে সশস্ত্র সংঘাত চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ফলে বসনিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা অব্যাহত ছিলো।”

বেকার দুটি পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা বলেও উল্লেখ করেছেন। আইসিজের যদি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যায় তাহলে তা বসনিয়ার চেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

মিয়ানমার কি রায় মানবে?

যদিও অস্থায়ী রায়ের আদেশ বাধ্যতামূলক, তবুও আইসিজের এই রায় কার্যকর করার কোনো উপায় নেই। অনেকের মনে তাই প্রশ্ন, মিয়ানমার আইসিজের রায় বাস্তবায়ন করবে কী না, অথবা অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেওয়া হবে কী না?

এ প্রসঙ্গে ব্রোডি বলেন, “সু চির আদালতে উপস্থিতি প্রাসঙ্গিক। তাকে আদালতে পাঠিয়ে মিয়ানমার বিচার প্রক্রিয়ার পথকে প্রশস্ত করেছে। তাই আদালতের বৈধতা অস্বীকার করা এখন মিয়ানমার সরকারের পক্ষে সত্যিই কঠিন হতে চলেছে।”

যদি মিয়ানমার রায় মানতে রাজি না হয় তাহলে, গাম্বিয়ার মামলাটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হতে পারে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে তারা মিয়ানমারকে রায় মেনে চলতে বাধ্য করবে কী না। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের সুবিধা পাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তার পক্ষে রয়েছে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন চীন ও রাশিয়া।

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সের্গেই ভ্যাসিলিয়েভ বলেছেন, “আমি প্রত্যাশা করছি, আদালত গাম্বিয়ার সঙ্গে থাকবে এবং তাদের অধিকাংশ দাবি মঞ্জুর করবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago