শিল্প তৈরি করতে হলে শিল্পকে ধারণ করতে হবে: তৌকীর

তৌকীর আহমেদ। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

তৌকীর আহমেদ, দর্শক নন্দিত অভিনেতা ও দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক। নাটক পরিচালনা করে সাফল্য পেয়েছেন বহু আগেই। ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের জন্য এবছর পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গত বছর ‘অজ্ঞাতনামা’ সিনেমার জন্য আর ২০০৪ সালে ‘জয়যাত্রা’ নির্মাণ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে একাই পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সব মিলিয়ে পাঁচ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড তার। গেল বছর নির্মিত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমার জন্য সম্প্রতি ভারতের রাজস্থান থেকে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন। দ্য ডেইলি স্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তৌকীর আহমেদ জানিয়েছেন তার শিল্পভাবনার কথা।

সম্প্রতি ভারতের রাজস্থান থেকে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন, সেই বিষয়টি নিয়ে বলুন?

সম্প্রতি রাজস্থানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ষষ্ঠ রাজস্থান ইন্টারন্যাশনাল চলচ্চিত্র উৎসব। সেখানে আন্তজার্তিক বিভাগে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছি ফাগুন হাওয়ায় সিনেমার জন্য। ২২ জানুয়ারি ফাগুন হাওয়ায় সিনেমার প্রদর্শনী ছিল। সেদিন জুরিবোর্ড ও দর্শকরা এই সিনেমার বেশ প্রশংসা করেছেন। তারপর তো পুরস্কার পেলাম। এর আগে এই সিনেমাটি সার্ক-এ পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া লন্ডনের রেইনবো ফিল্ম উৎসবর পুরস্কার পেয়েছে। সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসিত হয়েছে।

ভাষা আন্দোলন নিয়ে  নির্মিত সিনেমা দেশের বাইরে প্রশংসিত হচ্ছে এবং পুরস্কারও পাচ্ছে, বিষয়টি ভাবতে কেমন লাগে একজন পরিচালক হিসেবে?

অবশ্যই ভালো লাগে। আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছি এবং তা দেশে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও প্রশংসা কুড়াচ্ছে এবং সুনাম বয়ে আনছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন এর বিষয়টি তারাও অনুধাবন করতে পারছে। একজন পরিচালক হিসেবে গর্ববোধ করি। সামনেই ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমাটি ভারতের চেন্নাই  ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাবে। এছাড়া দিল্লির রায়পুর ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালেও যাবে।

পুরস্কার একজন পরিচালককে কাজ করার ব্যাপারে কতটা অনুপ্রেরণা যোগায়?

শুধু পরিচালক নয়, যে কোনো সৃজনশীল মানুষ, যে কোনো শাখায় কাজ করে যখন পুরস্কার বা স্বীকৃতি পায় তখন বিষয়টি হয়ে ওঠে খুব আনন্দের। অনুপ্রেরণা তো বটেই। আমি বলব আমাকেও নতুন নতুন কাজ এবং অবশ্যই ভালো কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। বিদেশে যখন কোনো উৎসবে সিনেমা নিয়ে যাই, বহু মানুষ ও পরিচালকদের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন হয়। এটা তো বড় ব্যাপার। এতে করেও আমি অনুপ্রাণিত হই।

এবার নিয়ে পাঁচ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন, এই অর্জন নিঃসন্দেহে অনেক বড়, কী মনে করেন?

তা তো বটেই। রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পুরস্কার চলচ্চিত্র শাখায়। সেটি যখন আমার ঘরে আসে, আমারই কাজের ফসল হিসেবে, তাকে অনেক বড় অর্জনই মনে করি। পাশাপাশি দর্শকদের জন্য কাজগুলো করি। তারা যখন কাজগুলো দেখেন সেটাকেও পুরস্কার হিসেবেই দেখি।

অপনার পরিচালিত সবগুলো সিনেমা আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে, নতুন সিনেমার স্বপ্নটা নিশ্চয়ই বেশি দূরে নয়?

পরিচালক হিসেবে নতুন নতুন সিনেমা বানানোর স্বপ্ন তো সব সময়ই দেখি। কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে এগোচ্ছি। ফান্ড পেলেই কাজ শুরু করব। প্রস্তুতির মধ্যে আছি। নতুন সিনেমার বিষয় নিয়ে কাজ করছি।

এই মুহূর্তে কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

নতুন একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করছি। সিরিজের নাম ‘ঘোর’। এছাড়া নতুন ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিং করছি। নতুন ধারাবাহিকের নাম ‘রূপালী জ্যোৎস্নায়’। এটি চ্যানেল আইয়ের জন্য নির্মাণ করছি। প্রথম লটের শ্যুটিং শেষ হয়েছে।

একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে বই পড়া বা সিনেমা দেখা বা গান শোনার কতটা প্রয়োজন বলে মনে করেন?

পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি মনে করি ৫০ পাতা পড়ার পর এক পাতা লিখতে হবে। ধরুন আমি সিনেমা বানাই। মানুষ কেন আমার সিনেমা দেখবে? সেখানে কিছু তো থাকতে হবে? সেটা কিভাবে থাকবে? আমাকে কিছু তো দিতে হবে। দেয়ার জন্যই জানাশোনা দরকার। জানাশোনার জন্য দরকার বই পড়া। না পড়ে নিজেকে তৈরি করা সম্ভব নয়। বই পড়া, ভালো সিনেমা দেখা, গান শোনা সবই দরকার। শিল্প তৈরি করতে হলে শিল্পকে ধারণ করতে হবে। আমি সেভাবেই বিশ্বাস করি। আর লেগে থাকতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago