মূলত ইসরাইলের স্বার্থে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ‘ফিলিস্তিনকে দুর্বল, ইসরাইলকে শক্তিশালী করতে’ ভূমিকা রাখবে বলে মত প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিন নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, মূলত ইসরাইলের স্বার্থেই ট্রাম্প এই শান্তি পরিকল্পনা দিয়েছেন।
ME Peace Plan
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা’ প্রকাশের সময় টেলিভিশনের পর্দায় জুতা ছুড়ে মারেন এক ফিলিস্তিনি। ২৮ জানুয়ারি ২০২০। ছবি: রয়টার্স

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ‘ফিলিস্তিনকে দুর্বল, ইসরাইলকে শক্তিশালী করতে’ ভূমিকা রাখবে বলে মত প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিন নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, মূলত ইসরাইলের স্বার্থেই ট্রাম্প এই শান্তি পরিকল্পনা দিয়েছেন।

গতকাল (২৮ জানুয়ারি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও সব রাজনৈতিক দল তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

পরিকল্পনাটি প্রকাশের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইসরাইল পরিকল্পনা প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। শান্তির জন্য আজ বড় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। “আমার লক্ষ্য উভয়ের জন্য সমান-সমান সুযোগ দেওয়া। অবিলম্বে এর বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশা করছি,” মন্তব্য ট্রাম্পের।

নতুন শান্তি পরিকল্পনাকে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর জন্যে ‘মুখ বাঁচানোর’ চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরাইলি বিষয়ক শিক্ষক ইয়ার ওয়ালাশ। তিনি সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, “নেতানিয়াহু যখন বুঝতে পারছেন যে দুর্নীতির দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হতে যাচ্ছেন তখনই এমন ঘোষণা এলো।”

তিনি মনে করেন, ইমপিচমেন্ট থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যে ট্রাম্প ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে হাজির হয়েছেন।

যা আছে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায়

পরিকল্পনায় সম্ভাব্য একটি মানচিত্রের কথা বলা হয়েছে। সেই মানচিত্রে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দ্বিগুণ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক জেরুজালেম শহরকে ইসরায়েলের ভূখণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে একে ইসরাইলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের রাজধানী থাকবে এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস চালু হবে।

শরণার্থীতে পরিণত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমিতে ফেরার অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে ট্রাম্পের পরিকল্পনায়। সেখানে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ও গাজা উপত্যকা নিয়ে নামমাত্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনও সেনাবাহিনী থাকবে না।

এই পরিকল্পনা মেনে নিলে ফিলিস্তিনে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিজ্ঞা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ফিলিস্তিনের প্রত্যাখ্যান

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প প্রথম যখন মুখ খুলেছিলেন বছর খানেক আগে তখনই সেই পরিকল্পনাকে ‘ইসরাইল ঘেঁষা’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছিলো ফিলিস্তিন। এটি প্রকাশের পরে গতকাল গাজা উপত্যকায় কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ করেছেন। তারা বলেছেন, শান্তি প্রস্তাবটি ‘ফিলিস্তিনকে দুর্বল এবং ইসরাইলকে শক্তিশালী করবে।’

‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে আরব লিগের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। যেসব আরব দেশ পরিকল্পনাটির পক্ষে রয়েছে বা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে তাদেরকেও প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বানও জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস।

তিনি বলেছেন, “আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দিবো না কেননা, এটি ফিলিস্তিনকে দুর্বল করবে।”

শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিন নয়, ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইলের আরব রাজনৈতিক দলগুলোও।

ইসরাইলের সংসদ নিসেটের সদস্য সামি আবু শাহাদা গণমাধ্যমকে বলেছেন, “এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। অধিকৃত অঞ্চল ও ইসরাইলের সব ফিলিস্তিনরা এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করবো।”

ঐতিহাসিক দিন: নেতানিয়াহু

শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের আগের দিন ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও বিরোধী দলীয় নেতা বেনি গান্তজ। সেসময় নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ইসরাইলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে তিনি এই চুক্তির প্রশংসা করে বলেছেন, “আমরা এই পরিকল্পনা এড়িয়ে যাবো না। আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। পরিকল্পনাটি দখলকৃত পশ্চিম তীরের জর্ডান উপত্যকায় ইসরাইলের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।”

গতকাল এই পরিকল্পনা প্রকাশের পরে ইসরাইলের সেনাবাহিনী সম্ভাব্য সংঘর্ষের মোকাবিলায় পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।

১ ফেব্রুয়ারি আরব লিগের বৈঠক

মিশরে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ মোকাবিলায় আরব লিগের একটি বিশেষ অধিবেশন চেয়েছে ফিলিস্তিন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

Comments