কম ভোটার উপস্থিতি অনিবার্য ছিলো

serajul_islam_choudhury.jpg
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্টার ফাইল ছবি

গতকালের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে না এমনটা অনুমিত ছিলো। কারণ, সাধারণ মানুষ নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন যেভাবে হয়েছিলো, তা নির্বাচনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করেছে। যার কারণে বড় সংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাননি। তারা জানতেন তাদের মতামত নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে না।

সাধারণত, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনসাধারণের তেমন একটা গুরুত্ব দেখা যায় না। তবে এবার সবচেয়ে খারাপ যা হলো তা হচ্ছে- ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কেও তেমন একটা ধারণা রাখেননি। আগে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের তথ্যসহ স্লিপ দিয়ে আসতেন। নির্বাচনকে প্রাণবন্ত করে রাখতেন। আমার মনে হয় না প্রার্থীরা এবার এই কাজটি করেছে। অনেকে বিভ্রান্তও হয়েছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে কে কোন দলের, তা জানতেন না অনেক ভোটার।

একটি দলের প্রার্থীরাই নির্বাচনী প্রচারণার দাপটে ছিলো। আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে বিরোধীদলের প্রার্থীদের তৎপরতা খুব বেশি দেখিনি। বিরোধীদলের প্রার্থীদের কোনো পোস্টার ছিলো না এবং সাধারণ মানুষ দেখতেই পারছিলেন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নেই। যা দেখে বোঝা যায় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার যে নির্বাচনী পরিবেশ দেখে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাবেন, তা তৈরি করা হয়নি।

শুধু এটাই নয় যে মানুষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস রাখতে পারছে না বলে ভোট দিতে যাননি। প্রচারণা যেভাবে হয়েছে তাতেও তারা বিরক্ত। যেদিকেই গিয়েছেন সেদিকেই প্রচারণার অপ্রয়োজনীয়তা চোখে পরেছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে শহরের পরিবেশ উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, প্রচারণার সময় তারা যা করেছেন, তা তাদের প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীত। লেমিনেটিং করা পোস্টার এবং লাউডস্পিকার ব্যবহার করে যেভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশ। এটা চলবেই। আমাদের বুঝতে হবে যে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এবং যেই নির্বাচিত হন না কেনো, তার উচিত একে বসবাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা। দুঃখের বিষয়, প্রচারণার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রার্থীরা জনসাধারণকে একটি ধারণা দিয়েছেন যে তারা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম নন।

তাছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ভোটারদের সন্দেহ ছিলো। প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। ইভিএমের কার্যকারিতা সম্পর্কেও সন্দেহ ছিলো। যথাযথ মেশিন কেনা হয়েছিলো কী না, তদারকি করার কোনো ব্যবস্থা আছে কী না ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে ইভিএম প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। নির্বাচন কমিশনও নিশ্চিত করেছে যে প্রশ্নটি কখনই যাতে মুছে না যায়। শুরু থেকেই ইভিএমের বিষয়টি যেভাবে সামনে এসেছিলো, তা মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করেছিলো। ভোটের প্রতি নিরুৎসাহিত হওয়ার এটি একটি বড় কারণ হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, আমি বলবো নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা খুবই অসন্তোষজনক ছিলো। এটা পরিষ্কার ছিলো যে, নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে কাজ করছে না। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারেনি এবং কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যও করেছেন। প্রার্থী এবং প্রার্থীদের সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও তা তারা আমলে নেয়নি। প্রচারণার সময় সহিংসতা এবং প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনায়ও কাওকেই দায়বদ্ধ করা হয়নি।

জনগণ আশা করে নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্রভাবে কাজ করবে। তাদের কাজে ক্ষমতাসীনদের কোনো প্রভাব থাকবে না। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। প্রশাসনের উচিত তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলা এবং সব ধরণের সহায়তা দেওয়া। দুঃখের বিষয়, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং মানুষের আস্থা হারিয়েছে।

(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে লেখাটি তৈরি করেছেন নাজনীন তিথি)

Comments

The Daily Star  | English

Israel will take all of Gaza: PM

Strikes kill 52 more; WHO chief says 2 million 'starving'

6h ago