ভর্তুকির সার তামাক খেতে, প্রতিরোধে নেই উদ্যোগ

তামাক খেতে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিএপি সার। ছবি: স্টার

চলতি রবি মৌসুমকে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সামনে রেখে ফসল উৎপাদন বাড়ানো, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমানো ও পরিবেশবান্ধব টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারে ভর্তুকি দেওয়া হলেও সেই সুবিধা নিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়ায় তামাক চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।

গত ডিসেম্বরে ডিএপি সারের দাম কমাতে অতিরিক্ত ৮শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী, কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা এবং ডিলার পর্যায়ে কেজিপ্রতি ২৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে বিঘা প্রতি তামাক কোম্পানির সাশ্রয় হচ্ছে এক হাজার টাকা।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম। চলতি মৌসুমে তিনি ১২ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন। নজরুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি দুটি তামাক কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষি। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষের জন্য কোম্পানি থেকে আমাদের বিনামূল্যে ১০ থেকে ১৫ কেজি ডিএপি সার দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন হয় ১শ’ থেকে ১২০ কেজি সার।”

ওই গ্রামেরই আরেক চাষি শাহের আলী। তিনি বলেন, “ডিএপি সার হলো তামাকের প্রাণ। এটি ব্যবহার না করলে তামাকের ভালো ফলন পাওয়া যায় না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, “তামাক চাষে উৎসাহিত করতে ডিলারের কাছ থেকে আমরা সার কিনে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করি। একইসঙ্গে চাষিদের দেওয়া হয় সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা। ডিএপি সারের দাম কমায় কোম্পানিগুলোর মোটা অঙ্কের বাজেট সাশ্রয় হয়েছে।”

লালমনিরহাট জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন, “সার বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। যে কেউ সার কিনতে পারেন। প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদনে ডিএপি সার ব্যবহার করতে হয়। তাই কারা তামাক চাষে ডিএপি সার ব্যবহার করছেন, তা মাঠ পর্যায় থেকে পর্যবেক্ষণ না করে বলা অসম্ভব।”

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ১৭ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে এর পরিমাণ আরও তিনগুণেরও বেশি।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী নূর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “কৃষি কর্মকর্তারা কখনোই তামাক চাষে টেকনিক্যাল পরামর্শ দেন না। বরং তামাক চাষ থেকে কৃষকদের বের করে আনার পরামর্শ দেন। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে কী পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে সেই পরামর্শ তামাক কোম্পানির কৃষিবিদরা দিয়ে থাকেন।”

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কৃষকরা যাতে তামাক চাষ থেকে সরে আসেন, সেই লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি। কিন্তু কোম্পানিগুলো বিনামূল্যে সার বিতরণ ও সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দেওয়ায় দিন দিন তামাক চাষের হার বাড়ছে।”

“এ বছর তিন হাজার পাঁচ একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এটি চাষ করায় অন্য ফসল উৎপাদনের হার কমছে। এছাড়াও, কমছে মাটির সক্ষমতা,” যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago