মুশফিকের থাকা, না থাকা নিয়ে কেন সংশয়?

Mushfiqur Rahim
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় পাকিস্তানে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার ক্রিকেটারদের দিয়েছিল বিসিবি। মুশফিকুর রহিম পরিবারের সায় না পেয়ে তাই নিয়েছিলেন স্বাধীন সিদ্ধান্ত, নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পাকিস্তান সফর থেকে। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে অদ্ভুত সূচিতে হওয়া সিরিজে তিনি না যাওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। যার প্রভাবে জিম্বাবুয়ে সিরিজের একমাত্র টেস্টে তার থাকা-না থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কথার সঙ্গে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সুর মিলে যে আবহ তৈরি হয়েছে, তাতে আভাস মিলেছে, পাকিস্তানে আলাদা দুই সময়ে দুই টেস্টের মাঝে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে না-ও রাখা হতে পারে মুশফিককে।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটি খেলবে বাংলাদেশ। এরপর দেশে ফিরে বাংলাদেশ দল ব্যস্ত হয়ে পড়বে জিম্বাবুয়ে সিরিজে। ২২ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে হবে একমাত্র টেস্ট। মাস খানেকের বেশি সময় পর ৫ এপ্রিল করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলবে দ্বিতীয় টেস্ট।

গুঞ্জন চলছে, মুশফিক পাকিস্তান যেতে রাজী না হওয়ায় পাকিস্তানে দুই টেস্টের মাঝে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে আর তাকে দলে নিতে চায় না বিসিবি। তাকে দিয়ে সবাইকে বার্তা দিতে চায়, চাইলেই কোনো সিরিজে নিজেকে কেউ সরিয়ে রাখতে পারবে না। অথচ পাকিস্তান সফরে যেতে কাউকে জোর না করার কথা বলেছিলেন বিসিবি প্রধান।

দুদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের জন্য দল দেওয়া হলেও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, একই দল খেলবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও। মুশফিককে ফিরতে হবে নিজেকে বিসিএলে প্রমাণ করে!

পাকিস্তান যাওয়ার আগের দিন সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছেও গেল জিম্বাবুয়ে সিরিজে মুশফিকের থাকা-না থাকার প্রসঙ্গ। তিনি জানান, রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পর দল আবারও পর্যালোচনা করা হবে। কিন্তু মাঝে কেবল এক টেস্টের জন্যই ব্যাটিং অর্ডার বদলানো না-কি কঠিন, ‘আমার কাছে বার্তা আছে যে এটা কেবল এক টেস্টের স্কোয়াড। আমরা ফিরে আসার পর আবার পুনরায় পর্যবেক্ষণ করব। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে মুশফিক শেষ টেস্টেও রান করেছে। কিন্তু আমাদের আবার আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হচ্ছে। কেবল একটা টেস্টের জন্য ব্যাটিং অর্ডার বদল করা, এটা বেশ কঠিন। আমরা চাই ছেলেরা এখানে রান করুক। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ভারতে মুশফিক আমাদের সেরা খেলোয়াড় ছিল।’

বাংলাদেশের মূল খেলোয়াড়দের কাউকে নিয়ে এর আগে এরকম যদি-কিন্তুর পরিস্থিতি আসেনি। কোচ কেবল ভারত সফরের প্রসঙ্গই টেনেছেন, অথচ মুশফিক কেবল ভারতেই নন, টেস্টে বাংলাদেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বেশি ৬৯ টেস্ট খেলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২১০ রান করা মুশফিকের জায়গা নিয়ে কখনোই ওঠেনি প্রশ্ন। তাকে পরীক্ষা দিয়ে ফিরতে হবে, এর আগে কখনোই ওঠেনি এমন কথাও। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানরাও কোনো সিরিজে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে পরের সিরিজে ফিরতে গেলে আসেনি এমন কোনো প্রসঙ্গ।

অবশ্য পাকিস্তান সফরে মুশফিকের না যাওয়াতে বিসিবি যে খুশি নয়, তা বিসিবি প্রধানই জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম দফার টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিপর্যস্ত হয়ে ফিরে আসার পর গেল ২৯ জানুয়ারি নিজের বেক্সিমকো কার্যালয়ে বোর্ড প্রধান গণমাধ্যমকে ইঙ্গিত দেন বারবার ব্যাটিং অর্ডারে অদল-বদল করতে ইচ্ছুক নন তারা, ‘মুশফিকের চেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তো আমাদের নাই। এখন ধরেন, চারে নতুন একট ছেলেকে নিলাম। ও কি করবে? একটা টেস্টের জন্য খেলা যায়? ও যদি ভালো করে, ও জানে যে তারপরও ও সুযোগ পাবে না আর খারাপ করলে ক্যারিয়ারই শেষ। এই দুশ্চিন্তা নিয়ে তো খেলা যায় না। অন্তত তিন ম্যাচ তো খেলতে দিতে হবে। এরপর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলা। তখন মুশফিক খেলবে, আবার পাকিস্তানে যাব, আবার বদল। এত বদল। এই জিনিসগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করার সময় আছে। নতুন কাউকে সুযোগ দিলে পর পর অন্তত তিন ম্যাচ তো দিতে হবে।’

বোর্ড প্রধানের কথার সূত্র ধরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট এবং পরে আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচি টেস্টে একই দল খেলাতে চায় বিসিবি। বোর্ডের কাছ থেকে এমন আভাস পেয়ে টিম ম্যানেজমেন্টও হাঁটছে সে পথে।

বিসিবি প্রধান সেদিন উষ্মা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, সিনিয়র ক্রিকেটাররা হুট করে কোনো সিরিজের আগে নিজেদের সরিয়ে নিলে বোর্ড পড়ে বিপাকে। এমনটা আর তারা হতে দিতে চান না। অথচ পাকিস্তান সফর নিয়ে পিসিবির সঙ্গে বিসিবির আলাপ-আলোচনার মধ্যেই মুশফিক সেদেশে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বোর্ডকে জানিয়েছিলেন। বোর্ড প্রধানই একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন, মুশফিক একবারও পাকিস্তান যেতে চায় না। পাকিস্তান সফরেও কাউকে জোর করে পাঠাবেন না তারা, একাধিকবার এই কথাও বলেছিলেন তিনি। তবে কোন যুক্তিতে পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার খেসারত হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দর্শক থাকবেন মুশফিক?

Comments

The Daily Star  | English

BNP hosts discussion on first anniversary of July uprising

Leaders recall sacrifices, call for unity at Dhaka gathering

40m ago