ফাইভ জি ‘মিথ’!

5G
ছবি: সংগৃহীত

টেলিকমিউনিকেশন কর্মীরা নিরলসভাবে পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ জি) ওয়্যারলেস প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশে ফাইভ জি চালু করার জন্য অপারেটরদের শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ফাইভ জি চালু হলে কতোটা পরিবর্তন আসবে টেলিযোগাযোগে?

সম্প্রতি, ফাইভ জি নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কেভিন ওয়েরবেক। সিএনএনে প্রকাশিত সেই বিশ্লেষণে তিনি বলছেন, ফাইভ জি নিয়ে বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে অতি-প্রত্যাশা তৈরি করা হচ্ছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। সব ধরণের প্রযুক্তি পণ্য নিয়মিতভাবে উন্নত হচ্ছে। সেই ধারায় টেলিযোগাযোগও এগোচ্ছে। চতুর্থ প্রজন্ম (ফোর জি) থেকে পঞ্চম প্রজন্মে (ফাইভ জি) প্রবেশকে তিনি তুলনা করেছেন চলতি বছরের আইফোন যেভাবে পরবর্তী বছরে আপডেট হয়ে আসে তার সঙ্গে। প্রচারে যতোটা বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাছে ততোটা নয়। সাধারণ গ্রাহকের কাছে আইফোন ১০ এবং আইফোন ১১-র মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইভ জি ডিজিটাল বিশ্বে বিপ্লব ঘটাবে। তাদের কথা অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বিপ্লবে অংশ নেওয়ার ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

ফাইভ জি নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবর্তন আনবে বলে বলা হচ্ছে। তবে এই পরিবর্তন বর্তমান মোবাইল অভিজ্ঞতা থেকে খুব বেশি নতুনত্ব আনতে পারবে বলে মনে করছেন না কেভিন।

তার মতে, প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা ‘ফাইভ জি’কে ব্যবহার করছে বিপণন বাড়ানোর জন্য। প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হচ্ছে। সত্যিকারের ফাইভ জি’র মান কেমন হওয়া উচিত তা ঠিক করা আলোচনা-সাপেক্ষ ব্যাপার।

ফোর জি থেকে ফাইভ জি’তে প্রবেশ করতে কয়েক বছরের সময় প্রয়োজন। এর মধ্যে অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্ক নতুনভাবে উন্নত করবে এবং ব্যবহারকারীরা নতুন ফোন কিনবে।

তবে ফাইভ জি থাকা সত্ত্বেও টাওয়ার থেকে বেশি দূরে চলে গেলে কিংবা নেটওয়ার্ক ওভারলোড হয়ে গেলে সেই ধীর গতিই পাবেন ব্যবহারকারীরা। মূলত ফাইভ জি চালু হলেই জাদুকরী কোনো বিষয় সামনে চলে আসবে, তা নয়।

দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন ফাইভ জি বিস্তৃত করছে তাদের দেশজুড়ে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ ফাইভ জি চালু করেছে।

কেভিনের মতে ফাইভ জি চালু হলে সেকেন্ডে কয়েকশ মেগাবাইট বা গিগাবাইট গতির যে কথা বলা হচ্ছে তা বিভ্রান্তিকর। নেটওয়ার্ক টাওয়ার, আবহাওয়া এবং আরও কিছু কারণে ফাইভ জি’র গড় গতির তারতম্য হয়।

দ্রুততম গতির জন্য ‘মিলিমিটার ওয়েভ’ স্পেকট্রাম প্রয়োজন। ‘মিলিমিটার ওয়েভ‘ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দেয়াল ও গাছে বাধা পেয়ে গতি কমে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত যে গবেষণা, তাতে দেখা যায় নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির চেয়ে ‘মিলিমিটার ওয়েভ’ স্পেকট্রামের ক্ষেত্রে দেয়াল ও গাছের বাধায় গতি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মিলিমিটার ওয়েভের জন্য টাওয়ারের সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে। ফাইভ জির পরিপূর্ণ সেবা পাওয়ার জন্যে টাওয়ারের সংখ্যা যতো বাড়াতে হবে. অপারেটররা তা করবেন কী না সন্দেহ করেছেন কেভিন। কারণ টাওয়ারের সংখ্যা বাড়ানো মানেই বাড়তি বিনিয়োগ। বিনিয়োগের অর্থ উঠে আসবে কী না, তা নিশ্চিত নয়। আর টাওয়ারের সংখ্যা না বাড়ালে গ্রাহকের কাছে ফাইভ জি আলাদা কিছু মনে হবে না।

আমরা যেসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করি তার জন্য ফোর জি’র থেকে বেশি গতির ইন্টারনেট প্রয়োজন হয় না। যথাযথ গতির ফোর জি থাকলে তা দিয়েই আমরা পরিষ্কার ভিডিও কলে কথা বলতে পারছি, যেকোনো ওয়েব সাইট দ্রুত ব্রাউজ করতে পারছি, নিরবিচ্ছিন্নভাবেই দেখতে পারছি ভিডিও। ফাইভ জি প্রয়োজন হবে এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যেগুলো সরাসরি আমরা ব্যবহার করবো না।

চালকবিহীন যানবাহনগুলো যখন একটি অন্যটির সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ রাখতে যাবে তখন প্রয়োজন হবে ফাইভ জি। কিংবা রোবট দিয়ে সার্জারি করানোর জন্য এর প্রয়োজন হবে। এ ধরণের পরবর্তী প্রজন্মের বিষয়গুলো বর্তমানে শুধু দেখা যায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে। চালকবিহীন গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছে বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে বলা মুশকিল তা কবে নাগাদ পুর্ণাঙ্গভাবে বাজারে আসতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Iran's top security body to decide on Hormuz closure

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

15h ago