করোনাভাইরাস শনাক্তে বিমানবন্দরের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়

গতকাল দুপুর সোয়া দুইটার দিকে চীনের কুনমিং থেকে যাত্রীবাহী একটি উড়োজাহাজ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রায় একই সময়ে ইস্তাম্বুল থেকে আসে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আরেকটি উড়োজাহাজ।
Shahjalal Airport
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

গতকাল দুপুর সোয়া দুইটার দিকে চীনের কুনমিং থেকে যাত্রীবাহী একটি উড়োজাহাজ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রায় একই সময়ে ইস্তাম্বুল থেকে আসে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের আরেকটি উড়োজাহাজ।

দুটি উড়োজাহাজের যাত্রীরা নেমে বোর্ডিং ব্রিজ পার হয়ে থার্মাল স্ক্যানারের ভিতর দিয়ে হেঁটে যান। এক পর্যায়ে, চীন থেকে আসা যাত্রীদের আরেকধাপ স্ক্রিনিং করার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সেখান থেকে তাদের আলাদা করেন।

বিমানবন্দরের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বর্তমানে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে বিভিন্ন ফ্লাইটের যাত্রীরা একে অপরের সংস্পর্শে আসবে না, সেটা সম্ভব না।”

চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ইমিগ্রেশনের জন্য একই সারিতে দাঁড়াতে হয়।

তিনি বলেন, যদি কোনো যাত্রী করোনাভাইরাসের জীবাণু বহন করেন, তবে অন্য যাত্রীরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন।

এ বিষয়ে আলাপকালে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রবেশ রোধে সরকার নানা ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সামান্য ভুলের কারণে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই ইনকিউবেশন পিরিয়ডে কোনও লক্ষণ পাওয়া যায় না। যার কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যদের থেকে তাদের আলাদা রাখার উপর জোর দিতে হবে।

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়।

চীনে এ ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ পর্যন্ত ২৪ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন প্রায় ৫০০ জন। চীনের বাইরে কমপক্ষে ২০টি দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার যাত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন।

তাদের সবাইকেই থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চীন থেকে আসা যাত্রীদেরকে চিকিৎসকরা পৃথকভাবে আরেকবার স্ক্রিনিং করেন।

গত ১৫ দিনে চীন থেকে আগত ৬ হাজার ৭৮৯ জনকে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।

ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুন্সী গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বিমানবন্দরে যাত্রীদেরকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। কিন্তু, এ ধরণের ব্যবস্থায় ভাইরাসটি যে সংক্রমিত হবে না, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এটি ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয়। আমাদের প্রতিটি ছোটখাটো ব্যাপারেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সাইফ বলেন, “সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভাইরাস বহনের সম্ভাবনা আছে এমন যাত্রীকে অবশ্যই অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।”

বিমানবন্দরের সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাত বলেন, “চীন থেকে আসা যাত্রীদের জন্য আলাদা ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে, স্ক্রিনিংয়ের মূল উদ্দেশ্যই পূরণ হচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু, এখনও কিছু করা হয়নি।”

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সঠিক ভাবে স্ক্রিনিং করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাত্র সাতজন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ২০ জন কর্মী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

সাতজনের মধ্যে দুইজন এখানে নেই। চীনের উহান থেকে ৩১২ বাংলাদেশিদের ফেরত আনার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ‘কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন। আরেকজন চিকিৎসক অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন।

তারা বলেন, পাঁচজন ডাক্তার দিয়েই চব্বিশ ঘণ্টা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করাটা বেশ কঠিন।

যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করতে শাহজালাল বিমানবন্দরে সম্প্রতি তিনটি থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি বসানো হয়েছে ভিআইপি টার্মিনালে।

বিমানবন্দরে আটটি বোর্ডিং ব্রিজ রয়েছে। বিমান থেকে নেমে সেগুলো পার হয়ে থার্মাল স্ক্যানারের ভিতর দিয়ে সব যাত্রীদের স্ক্রিনিং হয়ে যেতে হয়।

সাধারণত, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা উড়োজাহাজগুলো প্রায় একই সময়ে বিমানবন্দরে নামে। সুতরাং, ইমিগ্রেশনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় অনেক দেশের যাত্রী এক জায়গাতেই জড়ো হয়।

বিমানবন্দরের সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ড. জাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “জনবল কম থাকায় আমাদের মান বজায় রেখে কাজ করা কঠিন। বিশেষ করে, যখন অনেকগুলো ফ্লাইট প্রায় একসঙ্গে নামে এবং সেখানে চীনের ফ্লাইটও থাকে, তখন সেটা আরো কঠিন।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও অভিমত দেন যে বর্তমান ব্যবস্থাপনায়  বিমানবন্দর থেকে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে।

তবে এই সম্ভাবনা একেবারেই কম বলে দাবি করেন তিনি।

ডা. কালাম বলেন, তারা ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।

বিমানবন্দরে আজ ১০ জন নতুন চিকিৎসক যোগদান করছেন বলে জানান তিনি।

দেশে করোনাভাইরাস যেন প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ডা. কালাম।

তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে, আমরা বলতে পারি ভাইরাস প্রবেশের সম্ভাবনা অনেক কম।”

“আমাদের এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে ভাইরাসটি প্রায় পুরো চীনে ছড়িয়েছে, বিশেষত উহান শহরে। চীনের বাইরে অল্প কয়েকটি স্থানে ভাইরাসটির খোঁজ পাওয়া গেছে। সুতরাং, আমাদের আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা মেনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য বিস্তাররোধে আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত আছি,” যোগ করেন তিনি।

সরকারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উহান ফেরত ৩১২ বাংলাদেশি রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে ‘কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন এবং তারা সবাই ভালো আছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago