আমিও একটা মাস্ক কিনে ফেললাম…

Mask
ছবি: স্টার

“ভাই এতো দাম চাচ্ছেন কেনো? এটা তো একটি সাধারণ জিনিস।”

“তাইলে ভাই আপনি নিয়েন না।”

দেড়শ টাকা দিয়েই কিনতে হলো মাস্কটা।

বের হওয়ার সময় দোকানদার বললেন, “কয়দিন পর এই দামেও পাবেন না।”

প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে মাস্কটা বের করে পরে নিলাম। মাস্ক জিনিসটা দমবন্ধকর। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। পাশেই সেলুনের আয়নায় নিজেকে এ ঝলক দেখে বুঝলাম, না, নিজেকে চেনা যাচ্ছে না।

প্যাকেটটা রাস্তায় ফেলতে গিয়েও ফেললাম না। জানতে ইচ্ছে হলো, মাস্কটা কোথায় বানানো। কিছুই লেখা নেই। রাস্তার একপাশে দাঁড়ালাম। মাস্কটা খুলে খুঁজতে থাকলাম, কোথায় বা কোন দেশের তৈরি। এ জাতীয় প্রায় সবকিছু তো চীন তৈরি করে। ‘করোনাভাইরাস’ আক্রান্ত চীন। মাস্কটাও চীনের না তো? মাস্কটার ডিজাইনটা প্রফেশনাল। নাকের উপর দাগ না পড়ার জন্য ফোমের দুটো চিকন স্ট্রিপ লাগানো। শ্বাস নেওয়ার ছিদ্রগুলো গুছিয়ে একটা ডুবুরি টাইপের বোঁচা নল করা হয়েছে। ঢাকার যেসব এলাকায় পানিতে ময়লা বেশি, প্রায়শই পানির পাইপলাইন আর স্যুয়েরেজের লাইন এক হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায় সেসব বাড়িতে। অথবা এমনিতেই সচেতনদের পানির ট্যাপে লাগানো ক্যারামের গুটি সাইজের ফিল্টারগুলোর মতো। কানে লাগানো ফিতার রাবারও ভালো মনে হল। কান টেনে ধরা টাইট নয়, আবার ঝুলে পড়া ঢিলাও নয়। পুরোটা মিলে একটা যন্ত্র-যন্ত্র ব্যাপার আছে। আমিও তন্নতন্ন করে খুঁজছি। দুই-তিনবার উল্টে-পাল্টে দেখলাম। কয়েকটা অক্ষরমাত্র দরকার। ছাই রংয়ের জমিনে অবশেষে খুঁজে পেলাম চাপ দিয়ে সিল মারা টাইপের দুইটি অক্ষর ও একটি সংখ্যা: PM 2.5।

পত্রিকায় পড়েছিলাম এই পিএম বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান। অতি অতি সূক্ষ্ম। এক ইঞ্চির ২৫ হাজার ভাগের এক ভাগ। বড় আকারের পিএমের প্রস্থ চুলের প্রস্থের ত্রিশ ভাগের এক ভাগ। ইংরেজি ফুলস্টপ যতোটুকু জায়গা নেয় সেখানে কয়েক হাজার পিএম এঁটে যাবে। পত্রিকায় এসব সূক্ষ্মতার ক্যারিকেচার পড়তে পড়তে আমি ভাবছিলাম মুখ বুজে থাকলেই চলবে না। বোজা মুখ ঢেকেও রাখতে হবে!

অবশ্য তখনও আমি মাস্ক কিনিনি।

রিকশায় কিংবা হেঁটে মেট্রোরেল প্রকল্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাক চেপে দমবদ্ধের কসরত করতে করতে যাই। উন্নয়ন যজ্ঞের ব্যাপকতার সঙ্গে আমার দম পেরে উঠে না। আমি হাত নামিয়ে ফেলি, বড় করে একটা দম নেই, কয়েক ট্রিলিয়ন (একটি জটিল পারমাণবিক হিসাব) পিএম গিলে ফেলি।

প্রথমে কয়েকদিন টিস্যু দিয়ে নাক চেপে ধরতাম। পরে রুমাল ব্যবহার শুরু করলাম। তবু কিন্তু মাস্ক কিনিনি। কোনো বিশেষ কারণ নেই। অভ্যস্ততার আলসেমি।

উহানে ভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যখন বেশ জেগে উঠেছে তখন চারপাশে মাস্কের ব্যবহার হুহু করে বেড়ে গেছে। রিকশায় অফিসে যাওয়ার পথে যেসব সুন্দর মুখ দেখতাম হঠাৎ তারা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।

বায়ুদূষণে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। করোনাভাইরাস এখনও এ দেশে আসেনি বা মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তাহলে মাস্কের এই অস্বাভাবিক দাম কেনো? করোনাভাইরাস আর বায়ুদূষণের মাস্ক তো একই। আর স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরাও বলছেন সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্যে মাস্ক পড়লে উপকারে আসবে না। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। অফিসের একজন সহকর্মী সেদিন বলছিলেন, “ভাই এক ডেঙ্গুতে যা অবস্থা হইলো, আপনার ধারণা সরকার করোনা সামলাইতে পারবে?”

আমি ভাবছি ডেঙ্গুও অসুখ, করোনাভাইরাসও অসুখ আর বায়ুদূষণের উন্নয়নও অসুখ। আশঙ্কা ও ভয়ের এই জটিল মনস্তত্ত্বের সুলুক সন্ধান করতে গিয়ে মাথা ধরে যাওয়ার উপক্রম। মরমী, আধ্যাত্মিক আমি নিজেকে প্রবোধ দিলাম ধীরে ধীরে কোনো না কোনোভাবে আমরা তো মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আর আপাতত আমিতো একটা মাস্ক কিনেই নিয়েছি!

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

4h ago