কারাগারে খালেদার ২ বছর: করণীয় নির্ধারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিএনপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন দুই বছর হলো। দলের অনেক নেতা ও কর্মীরা তাকে আইনি ও রাজনৈতিক উপায়ে মুক্ত করার আশা হারাচ্ছেন।
দলের শীর্ষ নেতারা অবশ্য বলছেন যে ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগার থেকে বের করার জন্য তারা তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা আইনি ও রাজনৈতিক উপায়ে চেষ্টা করেছি। যেহেতু সরকার তাকে প্রতিহিংসার কারণে কারাগারে রেখেছে, তাই আমরা তাকে মুক্ত করতে পারিনি। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে খুব শিগগির আমরা সফল হব।”
দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সরকারকে বাধ্য করার মতো অধিক সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নামানোর মতো শক্তি তাদের নেই।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য এবং দুজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেছেন, তাদের চেয়ারপারসনকে রাজনৈতিক কারণে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে কঠোর আন্দোলন করা না হলে সরকার তাকে মুক্তি দেবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি যদি সরকারকে চাপ দিতে পারতো তাহলে খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে পারতেন। কারণ সরকার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলো। বিএনপির সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার আগেও চাপ দেওয়ার সুযোগ ছিলো। তবে দল কোনোটিই করেনি।
দলের একজন জ্যৈষ্ঠ নেতা বলেছেন, “পার্টি তাকে মুক্ত করার জন্য কোনও অস্ত্রই ব্যবহার করেনি।”
তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতারা কী কৌশল গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়ে একমত হতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করা হবে কি না, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
অনেক তৃণমূল নেতা এখনই রাস্তায় নামতে চান। তবে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা ‘ধীরে চলো’ নীতিতে চলতে আগ্রহী।
গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “সরকার আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার কারণে খালেদা জিয়া জামিন পাচ্ছেন না। তবে আমরা অবশ্যই তাকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন করব।”
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তি কেবল বিএনপির চাওয়া নয়, এটা এখন জনগণের দাবী।”
তিনি আরও বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিত আন্দোলনে বিশ্বাস করে।
২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তবে পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সেখানে খালেদা জিয়ার পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছে না বলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখতে পারেন। তবে তার জন্য আগে খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছিলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যৌথ ভাবে বিএনপির চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার উপায় খুঁজছেন।
তারা বিশ্বাস করেন যে দলের উচিত দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি এবং অন্যান্য পর্যায়ের নেতাদেরও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জড়িত করা।
গতবছর নভেম্বরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করলে বিষয়টি সামনে আসে।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির উচিত বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে খুব দ্রুত বৈঠক করা।
তারা বলেছেন, অনেক দলীয় নেতাকর্মী বিশ্বাস করেন ব্যাপক আন্দোলনই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার একমাত্র পথ।
বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতারা আশঙ্কা করছেন যে এই ধরনের আন্দোলন ব্যর্থ হলে দলের অস্তিত্বই ঝুঁকিতে পড়বে।
দলের নেতারা বলেছেন, লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানের পক্ষে এখন বিদেশ থেকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
দলের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, “স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য কয়েকজন নেতা যা জানান তার ভিত্তিতেই তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেন।”
তিনি আরও বলেন, দলের বেশ কয়েকজন ভাইস-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা এবং যুগ্ম-মহাসচিবরা তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অন্ধকারেই রয়েছেন।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। তবে গত ২২ মাসে তারা একটি বৈঠকেও বসেননি বলে জানিয়েছেন বিএনপির একজন যুগ্ম-মহাসচিব।
বিএনপির কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে একটি নতুন কাউন্সিল করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির ঢাকা মহানগরীর নেতারা সক্রিয় না হলে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সফল হবে না
Comments