এবার বেড়েছে ভারত থেকে ফেনসিডিল আসার পরিমাণ

ভারতের কয়েকটি ফেনসিডিল কারখানা স্থানান্তরিত ও পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বেশ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিলের চোরাচালান বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
drug_traffickers
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার জামিনপুর গ্রামের কাছে ফেনসিডিলের মজুত করতে মাদক চোরাকারবারিরা বাংলাদেশ-ভারতের জিরো লাইনে এই খুপরি ঘর ব্যবহার করেন। স্থানীয় মাদক চোরাকারবারিরা ও মাদকাসক্তরা একজন ভারতীয় নাগরিকের মালিকানাধীন এই ঘর থেকে কাশির সিরাপ কিনছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কিন্তু জিরো লাইন হওয়ায় এই খুপরি ঘরে অভিযান চালাতে পারে না বিজিবি। ছবি: মোহাম্মদ জামিল খান/সংগৃহীত

ভারতের কয়েকটি ফেনসিডিল কারখানা স্থানান্তরিত ও পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বেশ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিলের চোরাচালান বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

২০১৬ সালের ১১ মার্চ ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফেনসিডিল নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশে এই ওষুধ আনা নিষিদ্ধ করা হয়। কর্তৃপক্ষ ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে থাকা কারখানাগুলো বন্ধ করে দিলেও কাশির সিরাপ উৎপাদন আসলে কখনও বন্ধ হয়নি।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী সম্প্রতি মাদক সিন্ডিকেটগুলো সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে সড়ে গিয়ে ভারতের বিহার রাজ্যে স্থানান্তরিত কারখানায় এই নিষিদ্ধ ফেনসিডিল উৎপাদন করছে।

বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এমন কিছু ফেনসিডিল কারখানা সম্পর্কে খবর পেয়েছেন যেগুলো পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে। কারখানাগুলোর সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে তারা যে তথ্য পেয়েছে তা ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন মাদক চোরাকারবারির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদহের কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার আগে ১০০ বোতল ফেনসিডিলের দাম ছিলো ২০ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা।

কারখানাগুলো স্থানান্তরিত ও পুনরায় চালু করার পরে এগুলোর দাম বেড়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এখন ১০০ বোতল ফেনসিডিলের দাম বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।

এদের মধ্যে একজন মাদক চোরাকারবারি বলেন, “আমরা কারখানার সঠিক অবস্থান জানি না। তবে বোতলগুলো এখন বাংলাদেশে আসছে মূলত ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ ও মালদহ থেকে।”

“এই ফেনসিডিলগুলো সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের এই জেলাগুলোর কোনোটিতেই উৎপাদিত হয়নি। কারণ আমরা বোতলের লেবেলে ‘মেড ইন বিহার’ লেখা দেখেছি।”

বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রাপ্ত তথ্য মতে, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে প্রায় ৩৮ জন ভারতীয় ফেনসিডিল চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।

তারা সীমান্তের কাছাকাছি কয়েকটি বাড়িতে বোতলগুলো জমা করে। অর্ডার পেলে সেগুলো বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয় বলে যোগ করেছে সূত্র।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) পরিচালক (অপারেশন) এএফএম মাসুম রাব্বানী বলেছেন, কোডাইন ভিত্তিক সিরাপের চোরাচালান সম্প্রতি বেড়েছে। তবে তারা এই সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।

drug_traffickers
স্থানীয় মাদক বিরোধী অভিযানকারীরা বিভিন্ন রাস্তা এবং আমের বাগান থেকে সংগ্রহ করা খালি বোতল ধ্বংস করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি তোলা ছবি। ছবি: মোহাম্মদ জামিল খান/সংগৃহীত

ডিএনসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেনসিডিল ও অন্যান্য ওষুধ ৫৮টি সীমান্ত পয়েন্টের মাধ্যমে দেশে আসছে।

ডিএনসির মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ গত ১৬ জানুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, সম্প্রতি ফেনসিডিলের চোরাচালান বাড়ার লক্ষণ রয়েছে।

“আমরা ইতোমধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি এবং তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।”

বাংলাদেশে ফেনসিডিল আসা বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা দেখেছেন যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মাদক ব্যবহারকারী একাধিক মাদক সেবনে অভ্যস্ত।

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির কারণে ইয়াবা সরবরাহ কমে যাওয়ায় মাদক চোরাকারবারিরা ফেনসিডিলের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।”

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদও একই কথাই জানিয়েছেন।

তিনি স্বীকার করেছেন যে ফেনসিডিল চোরাচালান কখনই পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এবং সম্প্রতি সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি এবং মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছিলো। তার আগের বছর সংখ্যাটি ছিলো আট লাখ ৭০ হাজার।

২০১৭ সালে জব্দের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে সাত লাখ ১০ হাজার এবং ২০১৮ সালে তা হয় সাত লাখ ১৫ হাজার। গত বছরের প্রথম দশ মাসে জব্দ করা বোতলের পরিমাণ সাত লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।

বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত মাসে বিজিবি সারা দেশ থেকে ৪০ হাজার ৭৪১ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে।

২০১৮ সালে দেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মিলে প্রায় ২৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিলো। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে তারা জব্দ করেছে ছয় লাখ পিস ইয়াবা।

সূত্র অনুযায়ী ইয়াবা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। তবে মাদক বিরোধী আইন অনুয়ায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০১৮ সালের মে মাস থেকে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করার পর মাদকের উন্মুক্ত বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।

ইয়াবা সিন্ডিকেটগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। যার মধ্যে আছে অনলাইনের ব্যবহার এবং বিক্রয় ও বিতরণের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার।

(আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা রবিউল হাসান ডলার এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন)

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago