নাব্যতা সংকটে ব্রহ্মপুত্রে নৌচলাচল ব্যাহত

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে কুড়িগ্রামের চিলমারী রমনা নৌবন্দর থেকে রৌমারী, রাজীবপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
ব্রহ্মপুত্র নদের জোড়গাছ হাট থেকে দক্ষিণে মনতোলার চর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদের পানি কমে গেছে। ওই এলাকায় নৌকার যাত্রীরা পানিতে নেমে হাতে ঠেলে নৌকা পার করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ছবি: সংগৃহীত

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে কুড়িগ্রামের চিলমারী রমনা নৌবন্দর থেকে রৌমারী, রাজীবপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

গত চার সপ্তাহ ধরে নাব্যতা সংকট থাকলেও তা উত্তরণে সংশ্লিষ্ট মহলের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও নৌকার মাঝিরা।

ব্রহ্মপুত্রের বিশাল এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে চর। নদের প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় পরিবর্তন করা হয়েছে নৌচলাচলের পথ। বেড়েছে নৌপথের দূরত্ব। ঘাটের ইজারাদার কর্তৃক শ্যালোচালিত ড্রেজার দিয়ে নাব্যতা সংকট দূর করার চেষ্টা করা হলেও তাতে হচ্ছে না স্থায়ী কোনো সমাধান।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “উজান থেকে পানি না আসায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে গেছে। এছাড়াও, ছোট ছোট চর জাগায় নদের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে নাব্যতা সংকট তৈরি হয়েছে।”

পরিকল্পিত ড্রেজিং ছাড়া নাব্যতা সংকট নিরসন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

চিলমারী নৌবন্দর (রমনা ঘাট) থেকে উত্তরে টোনগ্রাম-সোনালীপাড়া সংলগ্ন নৌপথে নদের পানি কমে গিয়ে ডুবো চর সৃষ্টি হওয়ায় উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সঙ্গে চিলমারী নৌঘাটে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে চিলমারী নৌঘাট থেকে রাজীবপুরের মোহনগঞ্জ ও কোদালকাটি ইউনিয়নসহ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ নৌরুট এবং চিলমারীর অস্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে যাওয়ার একমাত্র নৌপথটিও নাব্যতা সংকটে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিলমারীর জোড়গাছ হাটে লেনদেনকারী ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মনজের আলী বলেন “নাব্যতা সংকটে নৌপথের দূরত্ব বেড়েছে। খরচ ও সময়ও বেশি লাগছে। আমরা সময়মতো হাটে পণ্য নিতে পারছি না। ব্যবসায়ীকভাবে খারাপ সময় যাচ্ছে।”

“নদের নাব্যতা সঙ্কট নিরসনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবো,” যোগ করেন তিনি।

নৌকার মাঝি কালা চাঁদ মিয়া বলেন, “জোড়গাছ হাট থেকে দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের মনতোলার চর এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদের পানি কমে গেছে। ওই এলাকায় নৌকার যাত্রীরা পানিতে নেমে হাতে নৌকা ঠেলে পার না করলে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। ফলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, কামারজানি, পাঁচপীর, চর কাপাসিয়াসহ রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের বড়বেড়, নাওশালা, কের্তনটারি, মোল্লারচর, কোদালকাটি ইউনিয়নের চরাঞ্চল, চর রাজীবপুর, কড়াইবরিশালসহ চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।”

তিনি আরও বলেন ঘাট ইজারাদারদের এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও তারা নাব্যতা সংকট দূর করতে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এই রুটে হাটের দৈনিক প্রায় অর্ধ শতাধিক নৌকা চলাচল করে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় নৌকার মাঝি সেকেন্দার আলী জানান, চিলমারী ঘাটের উত্তরে সৃষ্ট নৌ চ্যানেলে নাব্যতা সংকটে রৌমারী উপজেলা এবং রাজীবপুরের কিছু অংশ সহ উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, মেকুরের আলগা, জাহাজের চর সহ বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, “ঘাটের ইজারাদার রমনা ঘাটের উত্তরের মূল চ্যানেলটি শ্যালো চালিত ড্রেজার দিয়ে খননের ব্যবস্থা নিলেও সমাধান হচ্ছে না। নাব্যতার কারণে আমাদের আয় কমেছে আশংকাজনহারে।”

চিলমারী নৌ ঘাট ইজারাদারের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, “নদের নাব্যতা সংকটে নৌযোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কথা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে আমাদের ব্যবসা চলমান রাখার স্বার্থে নিজেরাই ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়ে সাময়িক ভাবে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।”

কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলেয়া খাতুন বলেন, নদের নাব্যতা সংকট নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। এটি একটি বড় কাজ।

Comments

The Daily Star  | English

9 die of dengue

Highest single-day deaths this year

27m ago