যেভাবে বরণ করে নেওয়া হয় আকবরদের

রীতিমতো বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে আকবর আলি-শরিফুল ইসলামদের।
Akbar Ali
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বাংলাদেশ জাতীয় দল যখন একের পর এক হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক সে সময় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাতে এলো বিশ্বকাপ শিরোপা। ক্রিকেটপাড়ায় যেন স্বস্তি ফিরে এসেছে। আবারো কোনো কিছু নিয়ে উদ্বেলিত হওয়ার সুযোগ মিলেছে দেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) অনেক দিন পর উচ্ছ্বাস দেখানোর, উল্লাস করার সুযোগ পেয়েছে। তাই তো রীতিমতো বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নিয়েছে আকবর আলি-শরিফুল ইসলামদের।

দুদিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, আপাতত আয়োজনটা থাকছে সাদামাটাই। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে ও ক্রিকেটারদের বিশ্রামের কথা মাথায় রেখে পরবর্তীতে কোনো এক সময়ে তারা সংবর্ধনা দেবেন যুবাদের। কিন্তু বাস্তবে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঘটেছে তার উল্টোটাই। অবশ্য এর পুরোটাই হয়েছে ভক্ত-সমর্থকদের উন্মাদনায়। এদিন আকবরদের অভ্যর্থনা জানাতে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন প্রায় হাজার পাঁচেক সমর্থক। ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’ আর ‘আকবর! আকবর!’ ধ্বনিতে স্টেডিয়ামে মাতালেন তারাই।

শুধু যে মিরপুরেই উপস্থিত হয়েছেন ভক্তরা তা-ও নয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও ছিলেন প্রায় তিন শতাধিক সমর্থক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চোটের কারণে মাঝপথে বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে আসা আকবরদের সতীর্থ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও। উপস্থিত ছিলেন অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের সদস্যরাও। সবমিলিয়ে উৎসবমুখর এক পরিবেশ। ভক্ত-সমর্থকদের উৎসাহ ও বিসিবির এত আয়োজন দেখে অবাক হয়েছেন খোদ অধিনায়ক আকবরও, ‘আমরা ধারণা করেছিলাম বাংলাদেশে আসলে বড় কিছু একটা হবে। তবে এত বড় কিছু যে হবে, তা সত্যিই ভাবতে পারিনি।’

Bangladesh u 19
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বিকাল পাঁচটার দিকে বিমানবন্দরে চ্যাম্পিয়নরা পা রাখলে, প্রথমেই ফুল ছিটিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর করানো হয় মিষ্টিমুখ। খেলোয়াড়, কোচসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। প্রত্যেকের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় ফুলের মালা। এরপর তাদের মিরপুর স্টেডিয়ামে আনার জন্য ব্যবস্থা করা হয় বিশেষ বহরের। লাল-সবুজ রঙে রাঙানো একটি বাসে চড়ে মিরপুরে আসেন চ্যাম্পিয়নরা। আর গাড়িতে ক্রিকেটারদের ছবিসহ ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন।’ বহনকারী বাসের সামনে ছিল কয়েক শত মোটরসাইকেলের বিশাল এক বহর। রাস্তার দুই পাশেও ছিল সমর্থকদের উপস্থিতি।

মিরপুরে যখন ক্ষুদে টাইগাররা ঢোকে, তখন চারদিকে চলছিল সেই ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’ স্লোগান। হাজার হাজার সমর্থকদের মাঝে স্টেডিয়ামে ঢোকাই ছিল দায়। কড়া নিরাপত্তায় যুবাদের নেওয়া হয় ভেতরে। আর স্টেডিয়ামে তারা পান লাল গালিচা সংবর্ধনা। বাংলাদেশের প্রথম কোনো ক্রিকেট দলকে দেওয়া হয় এমন সংবর্ধনা। এখানেও আরও একবার ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় আকবরদের। এরপর মূল স্টেডিয়ামে ঢোকেন তারা। এখানেও লাল গালিচা। মাঠে ঢুকে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন অধিনায়ক আকবর ও বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। এ সময় আতশবাজি পোড়ানো হয় স্টেডিয়ামে।

এরপর কাটা হয় কেক। অধিনায়ক আকবরকেকে খাইয়ে দেন বিসিবি সভাপতিসহ আরও বেশ কিছু বিসিবি কর্তা, বাদ যাননি দলের অন্যান্য সদস্যরাও। কেক কাটার পর ট্রফি হাতে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন খেলোয়াড়রা। এ সময় কানায় কানায় পূর্ণ ছিল গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড। অনেকেই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছেন চ্যাম্পিয়নদের। কেউ পেরেছেন। তাতেই যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছেন তারা! সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলাতে আকবরদেরও ছিল না কোনো ক্লান্তি।

এরপর মিডিয়া কনফারেন্সংস কক্ষে হয় সংবাদ সম্মেলন। সেখানে আকবর, এত বড় আয়োজনের কথা একেবারেই ভাবেননি তিনি। তারপর বিসিবি কর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন ক্রিকেটাররা। রাতে বিসিবির একাডেমিতে থাকবেন ক্রিকেটাররা। আগামীকাল তাদের প্রায় সবাই ফিরছেন নিজ নিজ পরিবারের কাছে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সপ্তাহখানেক পর তারা ফিরবেন ঢাকায়। কারণ এরপর যে আরও এক দফা সংবর্ধনা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিশ্বজয়ীদের বরণ করে নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Comments