বিদ্যালয়ের মাঠে আখ ক্রয়কেন্দ্র

Sugarcan Buying Center Natore
বিদ্যালয়ের মাঠে আখ ক্রয় কেন্দ্র। ছবি: স্টার

চাষিদের কাছ থেকে আখ কিনতে শুরু করেছে নাটোর সুগার মিল। মিলের ক্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন চলছে মহা ব্যস্ততা। মহিষের গাড়ি, ভ্যানে আখ নিয়ে চাষিরা আসছেন ক্রয়কেন্দ্রে। সেখান থেকে ট্রাক্টর-ট্রলিতে ভরে নেওয়া হচ্ছে চিনিকলে। এই কর্মযজ্ঞে ভোগান্তিতে পড়েছে নাটোরের হাজারো শিক্ষার্থী।

নাটোর দরাপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিপ্রবেলঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলডাঙ্গা উপজেলার বুড়িভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িভাগ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাসুদেবপুর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যালয় নিকেতনের মাঠে চলছে আখ কেনা কার্যক্রম।

বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, চিনিকলের ক্রয়কেন্দ্র হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও সমাবেশ। সেই সঙ্গে রয়েছে দুর্ঘটনা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত আখবাহী যানবাহন বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে বিদ্যালয়ের মাঠে। যান চলাচলে ধুলায় আচ্ছান্ন হয়ে যায় চারপাশ।

Sugarcan Buying Center Natore
বিদ্যালয়ের মাঠে আখ ক্রয় কেন্দ্র। ছবি: স্টার

বুড়িভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “প্রতি বছরই অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত আখ মাড়াই মৌসুমের ছয় মাস বিদ্যালয়ের মাঠে চিনিকলের আখ কেনা-বেচা চলে। মাঠে আখ রাখায় এই সময় শিক্ষার্থীরা খেলতে পারেন না। গাড়ি চলাচলে শব্দের কারণে বাচ্চাদের মনোযোগ নষ্ট হয়। আবার অনেকে শিক্ষকের কথা খেয়াল না করে মাঠে গাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। আমরা শঙ্কায় থাকি— যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”

বুড়িভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আল-রাব্বী বলে, “মাঠে শব্দের কারণে আমাদের মাথায় সমস্যা হয়। সব সময় প্রচুর যানবাহন প্রবেশ করে। একটাই মাঠ, তাই আমরা এসবের মধ্যেই খেলাধুলা করি। আগে কয়েকবার ছাত্র-ছাত্রীরা আহতও হয়েছে। একই কথা বলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, সুমি খাতুন, মিলি খাতুন, রাসেল হোসেন ও হুজাইফা।

বুড়িভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জেসমিন নাহার বলেন, “আমি বিদ্যালয়ের মাঠে খেলি না। কারণ গাড়ি দেখে আমার খুবই ভয় লাগে।”

নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়েও দেখা যায় একই চিত্র। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিনুর রহমান বলেন, “আমরা মাঠে ক্রয়কেন্দ্র রাখতে চাই না। স্থানীয় কৃষকদের অনুরোধে রাখতে হয়েছে। তবে শিগগিরই সুগার মিলকে চিঠি দেওয়া হবে।”

বিদ্যালয়ের মাঠে আখ ক্রয় কেন্দ্র। ছবি: স্টার

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তৌহিদুর রহমান লিটন বলেন, “মাঠের কিছু অংশ সুগার মিলকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবুও শিক্ষার উন্নত পরিবেশ রক্ষা কথা বিবেচনা করে আগামীতে আমরা আখ ক্রয় কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য মিল কতৃপক্ষকে অনুরোধ করবো।”

এ প্রসঙ্গে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, “স্কুলের খেলার মাঠে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা মেনে নেওয়া হবে না। শিক্ষর্থীদের স্বাভাবিক বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সব আখ ক্রয়কেন্দ্র সরিয়ে নিতে সুগার মিলকে নির্দেশ দেওয়া হবে।”

নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম জিয়াউল ফারুক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মাঠে আমাদের নয়টি আখ ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে এতে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে তাহলে আমরা কেন্দ্রগুলো সরিয়ে ফেলব।”

Comments

The Daily Star  | English

UK agency freezes London properties owned by Salman F Rahman’s son

Sheikh Rehana, the sister of Sheikh Hasina and mother of former UK City minister Tulip Siddiq, has lived at the Gresham Gardens property

1h ago