করোনাভাইরাস: একদিকে রোগ আতঙ্ক, অন্যদিকে গুম আতঙ্ক

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চীনের নাগরিকরা। এমন সময়েই তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে আরেক আতঙ্ক। সেটি হলো, ‘গুম আতঙ্ক’।
করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে সিটিজেন জার্নালিস্ট চেন কুইশির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ছবি: এপি

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা, দিনকে দিন বেড়েই চলেছে এর প্রাদুর্ভাব।

চীনের সরকারি হিসাবে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৬৬৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৬৮ হাজার মানুষ।

যদিও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা বহুগুণ বেশি বলে অসমর্থিত সূত্রে জানিয়েছে কিছু সংবাদমাধ্যম।

চলমান পরিস্থিতিতে একরকম একঘেয়ে জীবন কাটাচ্ছেন চীনের নাগরিকেরা। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হলেও ইতোমধ্যে আরও অন্তত ৩০টি দেশে কোভিড-১৯ (নতুন করোনাভাইরাসের আনুষ্ঠানিক নাম) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন জাপান, একজন হংকং এবং আরেকজন ফিলিপাইনের নাগরিক। এছাড়া, ফ্রান্সেও একজন মারা গেছেন। তিনি অবশ্য চীনের নাগরিক।

চলমান পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ। চীন ভ্রমণে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া, চীনের ভেতরেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সবমিলিয়ে করোনা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চীনের নাগরিকরা। এমন সময়েই তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে আরেক আতঙ্ক। সেটি হলো, ‘গুম আতঙ্ক’।

আজ রবিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

করোনাভাইরাসের তথ্য দেওয়া সাংবাদিক নিখোঁজ

ভিডিও বার্তায় করোনাভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বের মানুষকে তথ্য দেন চীনা সাংবাদিক চেন কুইশি। এর কিছুদিন পর থেকেই তার খোঁজ মিলছে না।

চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সংবাদ তুলে ধরছিলেন চেন কুইশি। এজন্য গত ২৪ জানুয়ারি থেকে সেখানে অবস্থান করছিলেন তিনি। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

তার পরিবার জানিয়েছে, সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি চেন কুইশির প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাকে পাঠানো ক্ষুদেবার্তারও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৩৪ বছর বয়সী এই সাংবাদিক আগে থেকেই জানতেন যে তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারিতে পড়তে পারেন। তিনি কয়েকজন বন্ধুকে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে ঢোকার অনুমতি দিয়ে রেখেছিলেন। বন্ধুদের তিনি বলেছিলেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার কোনো খোঁজ পাওয়া না গেলে সেগুলোর পাসওয়ার্ড যেন পরিবর্তন করে ফেলা হয়।

তার বন্ধুরা বলেছেন, গত সপ্তাহের শেষ দিকে চীনের কর্তৃপক্ষ চেন কুইশির পরিবারকে জানায় যে, তাকে এক স্থানে আলাদা করে রাখা হয়েছে।

সরকারের সমালোনা করায় শিক্ষককে গৃহবন্দি

করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে চীন সরকারের সমালোচনা করেন অধ্যাপক সু সাংরুন। সেকারণে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাংরুনের বন্ধুরা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন।

সাংরুনকে গৃহবন্দি করার পর দেশটিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের।

সু সাংরুনের বন্ধুরা জানিয়েছেন, জনসম্মুখে সরকারের সামলোচনা করায় সাংরুনকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে এবং সামাজিকমাধ্যম থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছে। সবশেষ, ইন্টারনেট সংযোগ থেকেও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

এর আগেও সরকারের সমালোচনা করায় অধ্যাপক সাংরুনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ‘‘জাতীয় নায়ক’ খ্যাতি পাওয়া চিকিৎসকও

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চীনের চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং (৩৪)। এই ভাইরাসই তাকে চীনে ‘জাতীয় নায়ক’ হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছিলো।

গত ডিসেম্বরেই করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছিলেন লি। এজন্য জানুয়ারির শুরুর দিকে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে উহানের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর পরই তিনি চীনের ‘জাতীয় নায়ক’ হিসেবে পরিচিতি পান।

চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাট বার্তায় করোনাভাইরাস নিয়ে সহপাঠীদের আগাম সতর্ক করেছিলেন লি। ওই বার্তায় উহানে সার্স জাতীয় একটি ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার কথা জানান তিনি।

নিখোঁজ রয়েছেন কাপড়ব্যবসায়ী

কাপড়ের ব্যবসা করেন উহানের বাসিন্দা ফেং বিন। তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে ৪০ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। ভিডিওতে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতদের ব্যাপারে বলেছিলেন। এর দুই সপ্তাহ পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

চাপে চীনা সাংবাদমাধ্যমগুলোও!

চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোকেও চাপে রেখেছে দেশটির সরকার। যে কারণে তারা করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারছে না। তবে, এর মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের ব্যঙ্গাত্মক সংবাদ করছেন দেশটির কিছু সংবাদমাধ্যম। পাশাপাশি, যদিও দেশটির সামাজিকমাধ্যম সরকার নিয়ন্ত্রিত, এরপরও অনেকেই করোনাভাইরাস ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করছেন।

চীনের একটি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এনে দেশটিতে ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত করে এনেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরকার নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ শি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়েছে দেশটির সাধারণ জনগণ।

Comments

The Daily Star  | English
Mahmudullah

Mahmudullah announces retirement from T20Is after India series

Mahmudullah Riyad has announced that he will retire from T20Is after the completion of the ongoing three-match T20I series between Bangladesh and India. He made the announcement in the pre-match press conference before the second T20I in Delhi. 

1h ago