রম্য রচনা

নেই শরৎ-বসন্ত

বসন্ত কোথায়?— কবি আর প্রেমিকের কল্পনা ছাড়া প্রকৃতি থেকে লাপাত্তা ঋতুরাজ।

আর শরৎ?— সে তো আকাশে সাদা-নীলের লুকোচুরি খেলায় টুপ করে গ্রীষ্মে গিয়ে বিলীন।

‘ষড়ঋতুর বাংলাদেশ’ কেবল নামে থাকলেও প্রকৃত অর্থে দীর্ঘ নয় মাসের গরমকালেই আয়ু হারিয়েছে বসন্ত আর শরৎ। আর তাই এখন থেকে চার ঋতু নিয়েই বাঙালিকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে বলছে মেট অফিস।

গতকাল শুক্রবার দুই কাল হারানোর খবর জানিয়ে মেট অফিসের কর্মকর্তা ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ফরিদ এফ ফারজান বলেন, “জলবায়ু সংকট বাড়ছে, প্রতিবছর গরম নিয়ে মানুষজনের অভিযোগও বাড়ছে। বসন্ত-শরৎকাল হারিয়ে যাওয়ায় তাই খুব একটা বিস্ময় জাগার কিছু নেই।”

তবে বাঙালি যখন ঋতুরাজের আগমনী দিনকে স্বাগত জানাতে সব আয়োজন সেরে ফেলেছে, তখনই জানা গেল তার হারিয়ে যাওয়ার খবর। যাকে নিয়ে এতো আয়োজন তিনিই না কী সাম্রাজ্য হারিয়েছেন!

নর্থওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিয়ানা রহিম। কুঁড়ি বছরের তারুণ্যদীপ্ত আরিয়ানা নতুন রঙিন পোশাক আর নানা আয়োজনে যখন বসন্ত বরণ প্রস্তুতি শেষ করেছেন, তখনই জানলেন হারিয়ে গেছে বসন্ত। “এখন আমার কী করা উচিত? এটি কি পয়লা ফাল্গুন নাকি গ্রীষ্মের প্রথম দিন?” প্রশ্ন আরিয়ানার।

এদিকে, ঋতুরাজকে তার আসন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভে নামেন ঢোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রনেতা পিস্টন সাহা বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন আঘাত করল যখন, আমরা চুপ ছিলাম। আর এখন তো আমাদের ঋতু উদযাপনেও সেই পরিবর্তন আঘাত হেনেছে। এখনও যদি চুপ থাকি তাহলে আর মুখ খুলব কবে?”

অন্যদিকে, শরৎ-বসন্তের রূপের বর্ণনায় এসএসসির পরীক্ষার খাতা রাঙিয়ে তুললেও ফারিয়া চিন্তিত তার গ্রেড নিয়ে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় ‘ষড়ঋতুর বাংলাদেশ’ রচনায় শরৎ-বসন্ত বন্দনায় আট পাতা লিখেছে ফারিয়া। “আমি সৃষ্টিশীল আর কাব্যিক হতে চেয়েছিলাম। আর এখন শুনি দুই ঋতু উধাও, আমার আসলে সবার মতো ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান’ রচনা লেখা উচিত ছিল,” চোখে পানি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এই এসএসসি পরীক্ষার্থী।

এসবের মধ্যেই বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবে প্রতিটি ঋতুকে আলাদা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানালেন বাংলা কাউন্সিল অব এল্ডার্সের মহাপরিচালক নারাজি মাহমুদ। তিনি জানিয়েছেন, কাউন্সিল এখন নতুন ও অপ্রয়োজনীয় বানান নিয়ে কাজ করছে। “হাতের কাজ শেষ হলেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঋতু সংজ্ঞায়ন নিয়ে আমরা বসব।”

গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত— মোটা দাগে এই তিন ঋতুরই প্রাধান্য। শীতের আগ দিয়ে নরম স্নিগ্ধ বাতাস জানান দেয় হেমন্তের আগমনী। তবে ড. ফরিদ বলছিলেন, কয়েক বছরের মধ্যে হেমন্তের টিকিটিও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। একসময়ে ফসল সংগ্রহের সঙ্গে মিল রেখে ঋতু তালিকায় নাম লেখালেও আবহাওয়ার সঙ্গে নাকি এর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না বলে জানান তিনি।

পরে এক অনুষ্ঠানে ড. ফরিদ বলেন, “পহেলা ফাল্গুন নিয়ে ছেলেমেয়েরা এতো হতাশ কেন? আমাদের ওপর তারা ক্ষুব্ধ কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন সত্য আমরা জানিয়েছি।”

তার মতে,  কাউন্সিল অব এল্ডার্সই বসন্তকে বাদ দিয়েছে যখন তারা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করে পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে গুলিয়ে ফেলেছে। “বসন্ত তখনই তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। আমি কেবল বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নিয়ে এসেছি যে আবহাওয়ার হিসাবে বাংলাদেশের গ্রীষ্মের সঙ্গে বসন্ত ও শরতের কোনো পার্থক্য নেই। বাস্তবে শরৎকাল গ্রীষ্মের চেয়েও গরম," ড. ফরিদ উত্তেজিত হয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে জানান।

তবে ড. ফরিদের বিশ্লেষণে ক্ষুব্ধ জনতা শান্ত হয়নি। পিস্টন সাহার লেফট ইনক্লিনিং স্টুডেন্ট পার্টি (এলআইএসপি) গত রাতে শাহবাগে এই বিজ্ঞানীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Banks deposit growth in 2024

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

13h ago