ভালোবাসায় কোনো কাঁটাতার নেই
ভালোবেসে বিয়ে করেছেন কলকাতার চিত্রপরিচালক সৃজিত মুখার্জি ও বাংলাদেশের মডেল, অভিনেত্রী, উপস্থাপক রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। দুজনের ভালোবাসা কোনো কাঁটাতার মানেনি। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে বিশেষ এক আড্ডায় উপস্থিত হয়েছিলেন তারা দুজন। সেই আড্ডায় বলেছেন বিয়ের আগে প্রেমপর্বের কথা, বোঝাপড়া, বিয়ে, আগামী দিনের পরিকল্পনাসহ অনেক কিছু।
এক দেশ থেকে অন্য দেশ, লম্বা একটা দূরত্ব। এর মাঝেই প্রেম, ভালোবাসা, অবশেষে বিয়ে। কিভাবে সম্ভব হলো?
সৃজিত: আমার মতে লম্বা দূরত্বের ভালোবাসা খুব একটা টেকসই না। কিন্তু প্রেমে পড়ার পর তো আর দূরত্বের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তা ছাড়া কলকাতা এবং ঢাকার দূরত্বও খুব একটা বেশি না। আমি লেক গার্ডেনে থাকি। সেখান থেকে হাওড়া বা সল্ট লেক যেতে যে সময় লাগে, ঢাকায় আসতেও তেমনই লাগে। আমরা এমন কিছু পরিকল্পনা করছি যাতে দূরত্বটাকে ছোট করে ফেলা যায়।
সেটি কীভাবে সম্ভব হবে?
মিথিলা: আমরা এখনও ভাবছি। একটা সময় তো এক ছাদের নিচে একসঙ্গে থাকতে হবে। আপাতত দুজনেই যাওয়া আসার মধ্যে আছি। সৃজিত যেমন শ্যুটিংয়ের বিরতি পেলেই চলে আসে, আমিও ছুটি পেলেই চলে যাই। এখন এভাবেই চলছে। কিন্তু সামনের দিনে একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করছি।
সৃজিত: বাস্তবতা এবং সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। মিথিলার কাজের ধরনটা এমন, যে কোনো জায়গায় থেকেই ওর কাজটা করতে পারবে। অনেক ভ্রমণ করতে হয় ওকে। আর ভ্রমণ সব শহর থেকেই করা যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব না।
দুজনের প্রেমটা কীভাবে শুরু হল?
মিথিলা: প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হয়ে পড়েছে। শুরুটা ফেসবুকের মাধ্যমেই হয়েছিল।
কে আগে শুরু করেছিলেন?
মিথিলা : সৃজিত শুরু করেছিল। মনে হয় সৃজিত অনেক দিন আগে থেকেই অনুসরণ করতো আমাকে। আমার সব বৃত্তান্ত জেনেই সে এসব করেছে। জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। ও অনেক থ্রিলার লেখে এবং বানায়। কিন্তু আমার মাথায় সবসময় প্রচুর থ্রিলার ঘুরতে থাকে।
সৃজিত : আগে থেকে পরিচয় থাকলে বিয়েটাও আরও আগে হয়ে যেত, মিথিলার এই ভাবনাটা ঠিক না। কারণ আমি সময় নষ্ট করি না। প্রথমত কোনো সিঙ্গেল সেলিব্রেটি বা পাবলিক ফিগার যে মানুষগুলো রয়েছেন, তারাও সাধারণ মানুষের মতই। এটা সবাই ভুলে যায়। তাদের জীবনেও আর দশ জন মানুষের মতো একাকিত্ব, প্রেম, ভালোবাসা থাকে। কিন্তু আর দশ জন মানুষের মতো তাদের কর্মক্ষেত্র, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি পার করার পর মিথস্ক্রিয়ার জায়গাটা কমে যায়। সাধারণ মানুষের মতো সেটা হয় না। সবসময় মিডিয়ার স্পটলাইট থাকে। সবকিছু প্রকাশ্যে করা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন ডেটিং আ্যাপে প্রোফাইল করা কঠিন হয়। এ সব সমস্যার সমাধান ফেসবুক। ফেসবুক কিছুটা ঘটকালি করে। যেমন কিছু প্রোফাইল সবসময় চোখের সামনে আসতে থাকে। লক্ষ্য করলাম সপ্তাহ খানেক ধরে ফেসবুক খুললেই মিথিলার প্রোফাইলটা দেখা যেত। তারপর বিস্তারিত জানার জন্য একদিন তার প্রোফাইলে গেলাম।
তখন কি একটু একটু ভালো লেগেছিল, নাকি শুধু কৌতুহল থেকে ?
সৃজিত: তখন কৌতুহল ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে এমন ভাবে লেখা যায় যে আমার প্রোফাইল দেখলে আপনাদের মনে হবে আমি একাধারে ব্র্যাড পিট এবং রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু আমি কোনটাই না। একই রকম ভাবে একজন নারী সোস্যাল মিডিয়ায় রূপে-গুনে একদম শ্রেষ্ঠ, কিন্তু প্রোফাইলের ওপারের মানুষটাকে চিনতে তো একটু সময় লাগে। সবকিছু জানার পরে মনে হয়েছিল এই মানুষটার সঙ্গে সম্পর্ক করা যায়। তার তিন সপ্তাহ পরে মিথিলার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসি।
মিথিলা: মোটামুটি দুই সপ্তাহ কথা হওয়ার পর। কথাবার্তা যখন সিরিয়াস দিকে এগোতে থাকে তখন বলি- আমি আপনাকে কখনও সামনাসামনি দেখিইনি। তারপর দেখা করতে সে ঢাকা চলে আসে।
মিথিলার কোন বিষয়টা ভালো লাগলো, যার কারনে আগ্রহ নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসা?
সৃজিত: স্পষ্ট বক্তা, সুন্দরী, শিক্ষিত- সবমিলিয়ে সার্বিক যে গুণাবলি তা তার মাঝে ছিল। আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে বাস করেও সে নিজের নিয়মাবলিতে জীবনযাপন করছে। তার বক্তব্য এবং অবস্থান তুলে ধরছে। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
মিথিলা : প্রথমে এত কিছু ভেবেছিলাম না। এমনিই কথা বলতে ভালো লাগছিলো। সৃজিত যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় আসে, তারপর থেকে আমাদের সব কথাবার্তা বিয়ে নিয়ে হয়েছে।
তাহলে প্রেমে কখন পড়লেন?
মিথিলা: কখন প্রেমে পড়েছি সেটা জানি না। কিন্তু একসময় বুঝতে পারলাম প্রেমে পড়েছি এবং আমার সৃজিতকে বিয়ে করা প্রয়োজন।
দুজনেই জনপ্রিয়, যারা আপনাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখত সেই ভক্ত অনুরাগীদের মনে পানি ঢেলে দিয়েছেন?
মিথিলা: আমি জানি না সৃজিতকে কেউ সুইসাইড নোট পাঠিয়েছে কিনা।
সৃজিত: না, এমন কিছুই হয়নি, সবাই দুহাত তুলে আশির্বাদ করেছে। কেউ হয়তো দুফোটা চোখের জল ফেলেছে, সে ব্যাপারে অবগত নই। নিজের মতো করে সবাই সুখে থাকুক, ভালো থাকুক। তবে মিথিলার টুইটারে মাঝে মাঝে দেখি মানুষজন বলে- ভারতীয়, হিন্দু, তারপরে বুড়ো। এমন পরিচালককে কেন বিয়ে করলেন- এগুলো দেখে আমার দারুণ লাগে।
মিথিলা: অনেকে আবার লেখে- দেশে কাউকে পেলেন না? আমরা কি এতই খারাপ ছিলাম? ইন্ডিয়া তো সবই নিয়ে গেল। আবার আপনাকে নিয়ে চলে গেল।
সংসার নিয়ে এখন কী পরিকল্পনা?
সৃজিত: আমরা তিন জন মিলে একসঙ্গে এক জায়গায় থাকব। দুজনের ক্যারিয়ার একেবারে অক্ষত রেখে। আর আয়রা বহুমুখীভাবে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ। মিথিলা এবং তাহসান আয়রাকে এত ভালোভাবে মানুষ করেছে যে কোথাও বিষাদের একফোঁটা ছায়াও ওর ওপর পড়েনি।
ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলুন?
সৃজিত: ঢাকার দুলাভাই হতে পেরে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি। কখনও মনে হয় না যে এটা আমার দেশ না। মনে করি এটাও আমার দেশ। কবে কোন সাহেব সীমান্তরেখা টেনে গিয়েছে যার ফলে আলাদা। কিন্তু আমার মনে কোনো সীমারেখা নেই।
মিথিলা: আমাকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকার কোন কারণ নেই। আমি আমার জীবনটাকে সামাল দেই। আপনারা আপনাদের জীবন নিয়ে সুখে থাকুন, খুশিতে থাকুন। আমরা সবাই ভালো চিন্তা করতে শিখি এবং ভালো ভালো কথা বলি।
Comments