তাপস পালের মৃত্যুর কথা শুনে শোকস্তব্ধ মমতা

নায়ক-রাজনীতিক তাপস পালের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Mamata and Tapas
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনেতা-রাজনীতিক তাপস পাল। ছবি: সংগৃহীত

নায়ক-রাজনীতিক তাপস পালের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আজ মঙ্গলবার এক টুইটার বার্তায় মমতা লিখেছেন, “তাপস পালের মৃত্যুর কথা শুনে আমি দুঃখিত ও শোকস্তব্ধ। তৃণমূল পরিবারের এই সদস্য ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার। তাপস দুই মেয়াদী এমপি ও এমএলএ হিসেবে জনগণের সেবা করেছেন। আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব। তার স্ত্রী নন্দিনী, কন্যা সোহিনী এবং ভক্তদের প্রতি রইল আমার আমার সমবেদনা।”

টালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক আইনপ্রণেতা তাপস পাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬১ বছর বয়সে আজ মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।

মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে জানুয়ারিতে মুম্বাই গিয়েছিলেন তাপস। হার্টের সমস্যা বেড়ে গেলে তাকে সেখানেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক এই লোকসভার সদস্যের স্ত্রী নন্দিনী পাল ও কন্যা সোহিনী।

নন্দিনী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে মুম্বাইয়ে বিমানবন্দরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১ ফেব্রুয়ারি তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল।

“তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। আজ স্থানীয় সময় ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।”

গত দুবছর ধরে তাপস পাল হৃদরোগে ভুগছিলেন এবং বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

হুগলী জেলার চন্দননগরে জন্ম নেওয়া এই অভিনেতা হুগলী মহসিন কলেজ থেকে জীববিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

১৯৮০ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’ দিয়ে তিনি প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে নিজেকে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তুলে ধরেন তাপস। ‘পরবত প্রিয়া’ (১৯৮৪), ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ (১৯৮৫), ‘অনুরাগের ছোঁয়া’, (১৯৮৬) ‘আমার বন্ধন’ (১৯৮৬) এবং ‘গুরু দক্ষিণা’ (১৯৮৭) সিনেমা দিয়ে তাপস পাল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

হিরেন নাগের ‘আবোধ’ (১৯৮৪) সিনেমার মাধ্যমে মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে বলিউডে পা রাখেন তাপস পাল।

মাধুরী তার টুইটে তাপস পালের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “হারিয়ে ফেললাম আমার প্রথম অভিনয় জীবনে যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের একজন তাপস পালকে। সৃষ্টিকর্তা তার পরিবারকে এই শোক সহ্য করার ক্ষমতা দিন।”

১৯৮১ সালে ‘সাহেব’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তাপস পাল ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার পেয়েছিলেন।

প্রায় তিন দশকের অভিনয়-জীবনে তিনি কাজ করেছেন ভিক্টরি ব্যানার্জি, প্রসেনজিৎ, সৌমিত্র চ্যাটার্জী, রঞ্জিত মল্লিক এবং রাখে গুলজারের মতো স্বনামধন্য অভিনয় শিল্পীদের সঙ্গে।

সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র ‘খিলাড়ি’ এবং ‘আটটা আটের বনগাঁ লোকাল’ সিনেমায় তার উপস্থিতি দেখা যায়।

অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক তাপস পালের মৃত্যুকে ‘অকাল মৃত্যু’ উল্লেখ করে বলেন, “আমি এখনও এই খবর বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি আমার ছোট ভাইয়ের মতো ছিলেন।”

চলচ্চিত্র ও রাজনীতিতে তাপস পালের সহকর্মী তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক অভিনেতা দেবাশ্রী রায় এবং চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছেন, তারা প্রিয় বন্ধু এবং চলচ্চিত্র জগত একজন দারুণ অভিনেতাকে হারিয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের দুবছর পর ২০০০ সালে তাপস এই দলে যোগ দেন।  নির্বাচনী রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করে ২০০১ সালে আলিপুর আসন থেকে পশ্চিমবঙ্গ আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি টানা দুই মেয়াদে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রোজ ভ্যালি চিট-ফান্ড কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তারের পর তাপস পাল রাজনীতি এবং টালিউড থেকে সরে আসেন। তার পরিবারের সদস্যরা বারবার অভিযোগ করেছিলেন যে দল তার খোঁজ রাখেনি। গ্রেপ্তারের ১৩ মাস পর তাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন:

নায়ক-রাজনীতিক তাপস পালের চিরবিদায়

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago