শতবর্ষী সংরক্ষিত বন ধ্বংস করে চা বাগান

Halda Tea Valley
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রামগড়-সীতাকুণ্ড সংরক্ষিত বনে হালদা টী ভ্যালির এক্সকেভেটর। ছবি: সংরক্ষিত

চা বাগানের জায়গা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের একটি শতবর্ষী সংরক্ষিত বনকে ধ্বংস করছে ‘হালদা টি ভ্যালি’, এমন অভিযোগ করেছে বনবিভাগ।

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রামগড়-সীতাকুণ্ড সংরক্ষিত বনটিতে চারা রোপণে বাধা, রোপিত চারা ধ্বংস এমনকি, বনকর্মীদের উপর হামলা করে বাগান কর্তৃপক্ষ বন দখল অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৮৮৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকার কলকাতা গেজেটে এ বনকে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করে। বর্তমানে বনটিতে শতাধিক প্রজাতির পাখি, ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, নানা প্রজাতির দেড় শতাধিক গাছ রয়েছে।

বন বিভাগের অভিযোগ. ২০০৩ সালে অন্য আরেকটি কোম্পানি থেকে ইজারা নেওয়ার পর থেকে ‘হালদা টি ভ্যালি’ নামের চা বাগান বন দখল করতে শুরু করে ২০০৬ সাল থেকে।

প্রায় ৭২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সংরক্ষিত বন ইজারা না দিতে বন আইন, সরকারি বিজ্ঞপ্তি, বননীতি ও উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে বনবিভাগ আরও জানিয়েছে, আরএস খতিয়ানে বাদুরখালি বিটের ১৩২ একর সংরক্ষিত বনের জায়গা বিএস খতিয়ানে ভুলভাবে জেলা প্রশাসকের নামে খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায় যা সংশোধনের জন্য বনবিভাগ রেকর্ড সংশোধনী মামলা করে ২০১৭ সালে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জুনে আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।

বনবিভাগ সে নির্দেশ মেনে চললেও হালদা টি ভ্যালি তা লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়ত বনের ভেতরের পাহাড় কাটছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

তাদের অভিযোগ, সংরক্ষিত বনের ভূমিদাগ নিদিষ্ট করে না দেওয়ার সুযোগে যেখানে বনবিভাগ বনায়ন করতে যায় সেটা নিজেদের জায়গা দাবি করে বনবিভাগকে ক্রমাগত বাধা দিয়ে যাচ্ছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ।

গত প্রায় ১৪ বছরে বনবিভাগের দায়েরকৃত মামলার তথ্যাদি ঘেঁটে দেখা গেছে, হালদা টি ভ্যালির ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে বনভূমি দখল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০১৯ সালের অগাস্টে সংরক্ষিত বনের বাদুরখালি বিটে বনের চারা গাছ নষ্ট ও বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা গত ১৪ জানুয়ারি বন আদালত শুনানি শেষে হালদা টি ভ্যালির ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলমের কারাগারে পাঠান।

বনবিভাগের হিসাবে, সংরক্ষিত বনের তিনটি পয়েন্টে জবরদখল অব্যাহত রয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষের বাধার মুখে কী পরিমাণ জায়গা জবরদখলের শিকার হয়েছে তা পরিমাপও করতে পারেনি বনবিভাগ।

সংরক্ষিত বনের তিনটি পয়েন্ট বাদুরখালি, ইদিলপুর ও বালুখালি পয়েন্টে চা বাগান কর্তৃপক্ষ এ দখল চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বনের ভেতর এক্সকেভেটর দিয়ে গাছ ও পাহাড় কেটে চা বাগানের জন্য জায়গা তৈরি করা হয়েছে বনের বাদুরখালি অংশে। একই ঘটনা ২০০৬, ২০১২, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯ ও চলতি ২০২০ সালে ঘটেছে।

প্রতিকার চেয়ে পুলিশ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে প্রায় ডজনখানেক চিঠি লিখলেও তেমন কোনো সহযোগিতা পায়নি উল্লেখ করে বনবিভাগ আরও জানিয়েছে, এ সুযোগে ক্রমাগত দখল চালিয়ে গেছে পেডরোলো গ্রুপের মালিকানাধীন এ চা বাগানের কর্তৃপক্ষ।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম (উত্তর) বখতেয়ার নুর সিদ্দিকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “লোকবল সংকটের সুযোগ নিয়ে হালদা টি ভ্যালি সংরক্ষিত বনের ভেতরে জবরদখল চালিয়ে যাচ্ছে।”

বনকর্মীদের উপর হামলা, বনের ভেতরের পাহাড় কাটা, বনের চারা গাছ নষ্ট করাসহ বনকর্মীদের উপর হুমকি অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হালদা টি ভ্যালি স্বত্বাধিকারী নাদের খান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বনবিভাগের লোকজনের উপস্থিতিতে ডিজিটাল জরিপ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে বাদুরখালি এলাকার জায়গাটি সংরক্ষিত বনের বাইরে পড়েছে।”

তিনি আদালতের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশও মেনে চলছেন বলে দাবি করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

27m ago