বইকর্মীদের ভালোবাসার বইমেলা

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা- বাঙালির প্রাণের মেলা।কেউ আসেন বইয়ের খোঁজে, কেউ আসেন ঘুরতে। অনেকে আবার প্রিয় লেখকের সঙ্গে দেখা কিংবা অটোগ্রাফ পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘসময়। চলে বই নিয়ে আড্ডা, তর্ক, আলোচনা। তবে, এ সবকিছুর পেছনে অনুচ্চারিত থেকে যায় বিক্রয়কর্মীদের কথা।
ছবি: স্টার

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা- বাঙালির প্রাণের মেলা।কেউ আসেন বইয়ের খোঁজে, কেউ আসেন ঘুরতে। অনেকে আবার প্রিয় লেখকের সঙ্গে দেখা কিংবা অটোগ্রাফ পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘসময়। চলে বই নিয়ে আড্ডা, তর্ক, আলোচনা। তবে, এ সবকিছুর পেছনে অনুচ্চারিত থেকে যায় বিক্রয়কর্মীদের কথা।

প্রতিদিন বিকেল ৩টায় মেলা শুরু হলেও বিক্রয়কর্মীদের মেলা প্রাঙ্গণে আসতে হয় অন্তত এক ঘণ্টা আগে। স্টল গুছিয়ে, বই সাজিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত পাঠকের হাতে পছন্দের বই তুলে দেন তারা।

মেলার বেশ কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।

"বই পড়তে ভালোবাসি। সে জায়গা থেকেই আমার বইমেলায় কাজ করার ইচ্ছা। এখানে সরাসরি লেখক আর পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, অনেক ধরনের বই সম্পর্কে জানা যায়," বলছিলেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া ইসলাম। শব্দভূমির স্টলে বিক্রয়কর্মীর কাজ করছেন তিনি।

মেলাঘুরে বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় একই উত্তর পাওয়া যায়। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তারা পড়াশোনার চাপ সামলে এখানে কাজ করছেন।

ছুটির দিনগুলোতে মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তানিয়া জানান, "বাসায় ফিরতে প্রতিদিনই রাত হয়। অন্যান্য স্টলের অনেকে একসঙ্গে বাসায় ফিরি। সবাই বেশ সহযোগিতা করে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সাউদা প্রথমবারের মতো বইমেলার নন্দিতা প্রকাশনীর স্টলে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বইমেলায় কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের স্টলে আমরা ছয় জন কাজ করি। সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আনন্দ নিয়েই আমরা কাজ করি"। 

নুসরাত আরো জানান, "ক্রেতা-পাঠকের চাপ অনেক বেশি। লেখকরাও আসেন। শুক্র-শনিবার সারাদিনই প্রায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। আর বিশেষ দিনগুলোতে বাড়তি চাপ তো আছেই। বিশ্রামের সুযোগ কম"।

শুরুর দিকে ক্রেতা-পাঠকের চাপ কিছুটা কম থাকলেও মেলার শেষ দিনগুলোতে ভীড় ক্রমেই বাড়ছে জানালেন, নওরোজ কিতাবিস্তানের বিক্রয়কর্মী আকিফ আহমেদ। বলেন, "ক্রেতা-পাঠকের চাপে একেবারেই বিশ্রাম কিংবা স্টল ছেড়ে বের হওয়ার সুযোগ নেই। ছুটির দিনগুলোতে আমাদের সারাদিনই কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে দুপুরের খাবার খরচ স্টল থেকেই দেয়া হয়। এছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাস্তার ব্যবস্থা থাকে"।  

তার সঙ্গে কাজ করা পাঁচ বিক্রয়কর্মীই ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন বলে জানান আকিফ।

হাতে সৈয়দ মুজতবা আলীর উপন্যাস 'শবনম' নিয়ে পড়ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আমরিন খাতুন। প্রথমবারের মতো বইমেলায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। কেবল বইয়ের হিসাব রাখা নয়, নিজের জন্যও এ পর্যন্ত আটটি বই কিনেছেন বলে জানান তিনি।

লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের ঘাসফুল স্টলে কাজ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রনজিত দাশ। নিজেও লেখালিখি, সাহিত্যচর্চার সঙ্গে জড়িত।

"গতবারের বইমেলায় আমি প্রায় ১৫-১৬ দিন এসেছি। তাই এবার মনে হলো যদি কোনো স্টলে বসি তাহলে পুরোটা সময়ই থাকা যাবে।"

প্রতিদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেলাচত্বরে আসা যাওয়ায় প্রায় ৫ ঘণ্টা চলে যায় রাস্তায়, জানালেন রনজিত।

দিনের অধিকাংশ সময় বইমেলায় কাটানো মানুষগুলোর কাছে শৌচাগার ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তারা প্রত্যেকেই অভিযোগ করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নতুন টয়লেটের দুরাবস্থা নিয়ে।  

"নতুন তৈরি টয়লেটের মেঝে থেকে সিমেন্ট উঠে আসছে। পানির পাইপ ফেটে মেঝেতে নোংরা ছড়িয়ে আছে। সেখানে যাওয়ার কোনো অবস্থাই নেই," বলেন রনজিত।

বিকাল ৩টার আগে টয়লেটে পানির সরবরাহ করা হয় না বলে অভিযোগ করেন অধিকাংশ কর্মী।

"আমাদের তো ৩টার আগে আসতে হয়। সে সময় পানি থাকে না। একদিন তো বিকেল ৫টার সময়েও পানি আসেনি," জানান আদর্শ স্টলের তরিকুল।

নন্দিতা স্টলের কর্মী সাউদা জানান, "এখানকার টয়লেট ব্যবহার না করার চেষ্টা করি। বিশেষ করে নারীদের ব্যবহারের জন্য এগুলো একদমই উপযুক্ত না"।

তবে বাংলা একাডেমি চত্বরের শৌচাগার ব্যবস্থা বেশ ভালো বলে জানান অনেকে।

বিক্রয়কর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, সারা মাস কাজ করার জন্য কোনো স্টলে তিন হাজার, কোনোটাতে ছয়, কোনোটাতে আট-দশ হাজার টাকার মতো পারিশ্রমিক পান তারা। কাজের চাপ আর সময় বিবেচনায় পারিশ্রমিক বাড়ানো উচিত বলে মত তাদের।

তবে প্যাভিলিয়নগুলোতে পারিশ্রমিক তুলনামূলক ভালো বলে জানা গেছে।

পাঠক-ক্রেতার চাপ, দিনভর কাজ কিংবা স্বল্প পারিশ্রমিকের পরও বেশিরভাগ বিক্রয়কর্মী জানালেন, বইয়ের তালিকা করা আছে। কোনো একদিন কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিজের জন্য বই কিনতে বের হয়ে যাবেন।

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

The government last night gave magistracy power to commissioned army officers with immediate effect for 60 days in order to improve law and order.

4h ago