চাকরি চলে টিপসইয়ে, চিঠিপত্র আসে ইংরেজিতে

কোনো রকমে নাম সই বা টিপসই দিয়ে কাজ করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের দাপ্তরিক চিঠি আসে ইংরেজিতে। জবাবও দিতে হয় ইংরেজিতে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্সের আলীনগর ও শমসেরনগর চা বাগানের শ্রমিকদের বছরের পর বছর ধরে এই বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
ছবি: স্টার

কোনো রকমে নাম সই বা টিপসই দিয়ে কাজ করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের দাপ্তরিক চিঠি আসে ইংরেজিতে। জবাবও দিতে হয় ইংরেজিতে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ডানকান ব্রাদার্সের আলীনগর ও শমসেরনগর চা বাগানের শ্রমিকদের বছরের পর বছর ধরে এই বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।

চা শ্রমিকেরা জানান, কেউ কেউ কোনো মতে নাম লিখতে শিখেছেন। অন্যরা টিপসই দিয়ে কাজ চালান। বর্তমানে তাঁদের সন্তানেরা কিছু কিছু লেখাপড়া শিখছে, কিন্তু ইংরেজিতে দাপ্তরিক চিঠি বোঝা বা তার জবাব দেয়ার মতো অবস্থায় তারা নেই। অফিসের চিঠির জবাব দিতে তাই তাঁদের বাগানের বাইরের শিক্ষিত লোকদের কাছে ধর্ণা দিতে হয়।  

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, “ইংরেজি চার্জশিটের ফলে চা শ্রমিকদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই চা বাগানে উচ্চ আদালতের আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হওয়া উচিত”। প্রসঙ্গত সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারে জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে।

তবে শমশেরনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন দাবি করেন, বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই চিঠি দেয়া হয়। তিনি বলেন, “আমরা আগামী দিনগুলোতে কেবল বাংলাতে দেয়ার চেষ্টা করব”। 

কোনো কারণে কোনো নিয়ম পালনে ভুল হলে কিংবা বাগান কর্তৃপক্ষ কাওকে সতর্ক করতে চাইলে চিঠি দেয়। এটা শ্রমিকদের কাছে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট হিসেবে পরিচিত। নির্দিষ্ট সময়ে এই চিঠির জবাব দিতে হয়। কিন্তু ইংরেজিতে লেখা এই চিঠি নিয়ে শ্রমিকেরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়। এতে চাকরি ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পাশাপাশি কোম্পানির দাপ্তরিক গোপনীয়তাও নষ্ট হয়। চা শ্রমিকেরা যাদের বেশিরভাগই কেবল নিজেদের নাম লিখতে পারেন আর বাকি কাজ চলে টিপসইয়ে তাদের কাছে এ যেন এক বিভীষিকা! 

চা শ্রমিককে ইংরেজিতে দেয়া চার্জশিট।
 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে সব চা বাগানে ইংরেজিতে চিঠিপত্র দেওয়া হতো। বর্তমানে কিছু বাগান এ ক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহার করলেও ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন চা বাগানগুলোতে এখনো ইংরেজিতে চিঠি দেয়া হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলস্থ কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান বলেন, কিছু কিছু চা বাগানে ইংরেজিতে অভিযোগ ও চিঠিপত্র দেয়া হচ্ছে এমনটি দেখা যায়। আশা করা হচ্ছে তারাও বাংলা ব্যবহার করবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago