স্বীকৃতি মেলেনি পাবনার দুই ভাষাসৈনিকের

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৮ সালে, যখন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বাংলাকে প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। ১৯৪৮ এবং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি প্রগতিশীল নারীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ভাষাসৈনিক সেলিনা বানু (বামে) ও সাবেরা মোস্তফা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৮ সালে, যখন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান বাংলাকে প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। ১৯৪৮ এবং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে পুরুষদের পাশাপাশি প্রগতিশীল নারীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মহান ভাষা আন্দোলনে পাবনার বিপ্লবী নারীনেত্রী সেলিনা বানু এবং সাবেরা মোস্তফার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকলেও এই প্রজন্মের অনেকেই তাদের অবদান সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না।

সেলিনা বানু ১৯২৬ সালে পাবনা শহরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ফেডারেশনের সংগঠকও ছিলেন সেলিনা।

১৯৪৮ সালে ভাষার জন্য যখন সারা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেসময় সেলিনা বানু এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সে বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিল-সমাবেশ, বিক্ষোভ ও হরতালসহ নানা কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন সেলিনা।

একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক রনেশ মৈত্র বলেছেন, “সেসময়ে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে নারীনেত্রী সেলিনা বানু সম্মুখ মিছিলে অংশ নিতে না পারলেও থেমে থাকেনি তার আদর্শিক চিন্তা চেতনা ও দেশ গঠনের কাজ। সেসময় তিনি তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছিলেন ভাষা আন্দোলনের জন্য। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের শেষ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের পুরো সময়টাই তিনি সক্রিয় থেকেছেন।”

পাবনার আরও একজন প্রগতিশীল নারী সাবেরা মোস্তফা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৩৩ সালে পাবনা পৌর এলাকার গোবিন্দা মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন সাবেরা। ছাত্রজীবন থেকে সাবেরা দেশের বাম রাজনৈতিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করছেন। ভাষা আন্দোলনের সময় সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন তিনিও এই অঞ্চলের ছাত্রসমাজের সঙ্গে আন্দোলন-কর্মসূচিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।

বিশিষ্ট গবেষক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম বলেন, “পাবনার ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এখানকার নারী ভাষা সৈনিকদের মধ্যে সেলিনা বানু, সাবেরা মোস্তফাসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়।”

“ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরেও পাবনার নারী ভাষাসৈনিকদের স্বীকৃতি মেলেনি,” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ভাষার ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হলে এই সংগ্রামী নারীদের সঠিক মূল্যায়ন করা সময়ের দাবি।”

এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago