চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে ৩টি সরকারি পুকুর
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর বাজার এলাকায় সরকারি তিনটি পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। চারপাশ থেকে পুকুরের জমি দখল করে তারা স্থায়ী ভবন নির্মাণ করছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস মোট ৫২ জন দখলকারীর নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে। ছয় মাস আগে সেই তালিকা কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়রা বলেন, এক সময় কালীবাড়ি পুকুর-১, কালীবাড়ি পুকুর-২ ও কাচারিবাড়ি পুকুরের পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো। গোসল, রান্নার কাজে স্থানীয় সবাই পুকুরের পানিই ব্যবহার করতেন। স্থানীয় প্রভাবশালীরা চারপাশ থেকে পুকুর দখল করে নিয়েছেন। নানা ধরনের বর্জ্য ফেলায় পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মহিপুর বাজার এলাকায় প্রায় ১০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বহুতল আবাসিক ভবন গড়ে উঠেছে। আরও নতুন নতুন স্থাপনার নির্মাণকাজ চলছে। আর এসব স্থাপনা নির্মাণে একটু একটু করে দখল করা হয়েছে পুকুরের জমি।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। একটি টিনশেড বাড়ির পাশে স্থায়ী ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। সামনে সাইনবোর্ডের লেখা রয়েছে, জমির মালিক নূরুল হক ও মো. শহীদ। নূরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “দুই বছর আগে ১০ গজ লম্বা এবং ১০ গজ চওড়া জমিটি আমি ৪ লাখ টাকায় কিনেছি। আগে এর মালিক ছিলেন মো. সেলিম। মৌখিক চুক্তিতে কেনা হলেও আমি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ) নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
নূরুল হকের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় রয়েছেন মো. শহীদ। এ বিষয়ে কথা বলতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়রা আরও বলেন, দখলদার প্রত্যেকেই প্রভাবশালী। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে তারা ভবন নির্মাণ করছেন। কখনো যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, পুকুরের পানি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে তারা এই দখল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। দখলদাররা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের আত্মীয় কিংবা বন্ধু দাবি করেন। আর্থিকভাবেও তারা বিত্তশালী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম রাকিবুল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে অনেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়। কিন্তু আমরা এ ধরনের কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই না। আমিও চাই, যারা অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়কে যেন পাত্তা না দেওয়া হয়।”
গত বছরের ২২ আগস্ট মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস মোট ৫২ জন দখলকারীর নামের তালিকা কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে পাঠায়। তাতে দেখা যায়, কালীবাড়ি পুকুর-১ দখল করেছেন ৩১ জন, কালীবাড়ি পুকুর-২ দখল করেছেন ১৭ জন এবং কাচারিবাড়ি পুকুর দখল করেছেন ৪ জন।
দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এই নামের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়েও পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে মহিপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান বলেন, “আমরা দখলদারদের নামের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তারাই পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেবেন। দখলদাররা প্রভাবশালী, তারা একটু একটু করে দখল করেই চলেছেন।”
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা তালিকা পেয়েছি। পুকুর দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। কাউকে সরকারি জমি দখল করতে দেওয়া হবে না। যে কোনো মূল্যে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Comments