ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টানো ম্যাচে উইন্ডিজকে হারাল শ্রীলঙ্কা

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হাতছাড়া করার শঙ্কায় পড়ল দলটি। তবে আটে নামা ওয়ানিদু হাসারাঙ্গার বীরত্বে নাটকীয় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল লঙ্কানরা।
sri lanka v west indies
ছবি: এএফপি

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় সংগ্রহের ভিত দিলেন শাই হোপ। শেষদিকে কিমো পল আর হেইডেন ওয়ালশ ক্যামিও ইনিংস খেলে স্কোর নিয়ে গেলেন তিনশর কাছে। লক্ষ্য তাড়ায় আভিস্কা ফার্নান্দো আর দিমুথ করুনারত্নের ব্যাটে দুর্দান্ত শুরু পেল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হাতছাড়া করার শঙ্কায় পড়ল দলটি। তবে আটে নামা ওয়ানিদু হাসারাঙ্গার বীরত্বে নাটকীয় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ল লঙ্কানরা।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) কলম্বোতে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে উইন্ডিজকে ১ উইকেটে হারিয়েছে করুনারত্নের দল।। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৯ রান করেন কাইরন পোলার্ডরা। জবাবে ৫ বল বাকি থাকতে ৯ উইকেটে ২৯০ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। এতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে তারা।

হাসারাঙ্গা যখন উইকেটে যান, তখন জয় থেকে ৭৫ রান দূরে শ্রীলঙ্কা। মূলত লেগব্রেক বোলার হলেও এদিন পুরোপুরি ব্যাটসম্যান বনে যান তিনি। অন্যপ্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও তিনি থাকেন অবিচল। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ৩৯ বলে অপরাজিত ৪২ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শুরুতেই সুনিল আমব্রিসের উইকেট হারায় উইন্ডিজ। এরপর হোপ ও ড্যারেন ব্রাভো ৭৭ রান যোগ করে চাপ সামলে নেন। ৫২ বলে ৩৯ রান করে ব্রাভো ফিরলে ভাঙে এই জুটি।

তৃতীয় উইকেটে রোস্টন চেজকে নিয়ে আরেকটি দারুণ জুটি গড়েন হোপ। দুজনে যোগ করেন ৮৫ রান। তবে ৪৫ বলে ৪১ রান করে চেজ আউট হলে ছন্দপতন ঘটে উইন্ডিজের ইনিংসে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি।

নিকোলাস পুরান, অধিনায়ক পোলার্ড ও জেসন হোল্ডার- তিন আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ফেরেন দ্রুত। ৭৭ বলে ফিফটি করা হোপ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ১২৮ বলে। ইসুরু উদানার শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১১৫ রান। ১৪০ বলের ইনিংসে ১১ চার মারেন তিনি।

২৪০ রানে ৭ উইকেট খোয়ানো ক্যারিবিয়ানরা শেষ ২০ বলে যোগ করে ৪৯ রান। পল ও ওয়ালশ অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তাণ্ডব চালান লঙ্কান বোলারদের ওপর। ৪ চার ও ১ ছয়ে ১৭ বলে ৩২ রান করেন পল। ২ চার ও ১ ছয়ে ওয়ালশ অপরাজিত থাকেন ৮ বলে ২০ রানে।

শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে সফল বোলার উদানা নেন ৩ উইকেট। কিন্তু ইনিংসের শেষভাগে বেধড়ক মার খেতে হয় তাকে। তিনি খরচ করেন ৮২ রান। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন নুয়ান প্রদিপ ও থিসারা পেরেরা।

wanidu hasaranga
ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা। ছবি: আইসিসি

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য পেরোতে আগ্রাসী শুরু পায় শ্রীলঙ্কা। উইন্ডিজ বোলারদের হতাশ করে ১১১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন আভিস্কা ও করুনারত্নে। দুজনেই পান হাফসেঞ্চুরির দেখা। করুনারত্নে ৫৭ বলে ৫২ ও আভিস্কা ৫৫ বলে ৫০ রান করেন।

হোল্ডার এই জুটি ভাঙার পর আর কোনো ভালো জুটি পায়নি লঙ্কানরা। উইন্ডিজ বোলাররা পালাক্রমে উইকেট তুলে নিতে থাকেন। তাতে ম্যাচে ফেরে সফরকারীরা।

ম্যাথিউসকে টিকতে দেননি আলজারি জোসেফ। ওয়ালশ ফেরান থিতু হওয়া কুশল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে। কুশল পেরেরা ৫০ বলে ৪২ রান করে শিকার হন পলের।

শেষ ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন দাঁড়ায় ৫৯ রান, হাতে তখনও ৪ উইকেট। জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ভারী। কিন্তু মারমুখী হয়ে ওঠা থিসারাকে বিদায় করে আবার উইন্ডিজের আশা জাগিয়ে তোলেন জোসেফ। ২২ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩২ রান করেন থিসারা।

পরের গল্পটা হাসারাঙ্গার। নবম উইকেটে লাকশান সান্দাকানকে নিয়ে ২৭ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ এক জুটি গড়েন তিনি। দুদলের স্কোর যখন সমান, তখন ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলে সান্দাকান রানআউট হয়ে গেলে আবার রোমাঞ্চ ছড়ায় ম্যাচে।

কিন্তু পল পরের বলটি নো দিলে স্বস্তি নেমে আসে লঙ্কান শিবিরে। উইন্ডিজের হয়ে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন জোসেফ। পল ও ওয়ালশ নেন ২টি করে উইকেট। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৮৯/৭ (হোপ ১১৫, আমব্রিস ৩, ব্রাভো ৩৯, চেজ ৪১, পুরান ১১, পোলার্ড ৯, হোল্ডার ১২, পল ৩২*, ওয়ালশ ২০*; প্রদিপ ১/৪২, থিসারা ১/৪০, উদানা ৩/৮২, ম্যাথিউস ০/১৭, সান্দাকান ০/৪২, হাসারাঙ্গা ০/৪৭, ধনঞ্জয়া ০/১৬)

শ্রীলঙ্কা: ৪৯.১ ওভারে ২৯০/৯ (আভিস্কা ৫০, করুনারত্নে ৫২, কুশল পেরেরা ৪২, কুশল মেন্ডিস ২০, ম্যাথিউস ৫, ধনঞ্জয়া ১৮, থিসারা ৩২, হাসারাঙ্গা ৪২*, উদানা ০, সান্দাকান ৩, প্রদিপ ০*; কটরেল ০/৬৯, হোল্ডার ১/৪৪, পল ২/৪৮, জোসেফ ৩/৪২, চেজ ০/৩৮, ওয়ালশ ২/৩৮)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ১ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago