শীর্ষ খবর
‘এ’-‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিলো ডেইলি স্টার

অর্জনের স্বীকৃতি

ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছে দ্য ডেইলি স্টার। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তরুণদের উপস্থিতি আশা জাগায়— তারাই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে।
ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ছবি: রাশেদ সুমন

ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছে দ্য ডেইলি স্টার। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে তরুণদের উপস্থিতি আশা জাগায়— তারাই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, “তোমরা যেমন নিজের মাকে দূরে রেখে তার চেয়েও সুন্দরী কোনো নারীকে মা বলতে পারবে না, ঠিক তেমনি মাতৃভূমির চেয়েও সুন্দর কোনো দেশ থাকলেও, সেটি তোমাদের মাতৃভূমি না।”

অনুষ্ঠানে ১ হাজার ৯৮৮ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০৪ জন শিক্ষার্থী ও-লেভেলে ছয় বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড এবং ৪৮৪ জন শিক্ষার্থী এ-লেভেলে দুই বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের স্বীকৃতি দিতেই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

শিক্ষার্থীদের বিশ্ব সম্পর্কে জানার উৎসাহ দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সেলিম আরএফ হুসাইন বলেন, “আমাদের আশা তোমরা আবার দেশে ফিরে আসবে। তোমরা কখনও ভুলবে না যে তোমরা বাংলাদেশি। তোমরা ফিরে এসে দেশের জন্য কাজ করবে। তোমাদের উদ্ভাবনী ভাবনা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিচ্ছে।”

বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেইসেসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার রোহাম মঞ্জুর বলেন, “তাদেরকেই অনুসরণ করো, যারা বিদেশে অনেক ভালো চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন এবং বাংলাদেশের জন্য কাজ করছেন। তোমরা কোন ধরনের বাংলাদেশি হতে চাও, সেটি তোমাদের সিদ্ধান্ত।”

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কলাস্টিকা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মোর্শেদ বলেন, “প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো বাচ্চাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু, এটি ঠিক নয়। তার প্রমাণ, এই অনুষ্ঠানেই ছাত্ররা আবেগের সঙ্গে তাদের নিজ সংস্কৃতি উদযাপন করেছে।”

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, “এই ২১ বছর ছিল স্বপ্নে ভরপুর। একজন সংকল্পবদ্ধ ও প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ জাতির জন্য কী করতে পারে, তা আমরা সমালোচকদের দেখিয়েছি।”

জ্ঞান অন্বেষণে শিক্ষার্থীদের বিশ্ব ভ্রমণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জ্ঞানার্জন শেষে জন্মভূমিতে ফিরে আসো। বিশ্বের তোমাকে প্রয়োজন, তবে তোমার নিজ দেশের প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি।”

“ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা হয়তো তোমাদের বৈশ্বিক নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু, সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে তোমাদের মাতৃভাষা,” যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও কয়েকজন উল্লেখযোগ্য বক্তা উপস্থিত ছিলেন। পিয়ারসন এডএক্সেলের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক প্রেমিলা পলরাজ বলেন, “এটা তোমাদের জীবনের প্রথম পরীক্ষা। যখন তোমরা তোমাদের বাসা থেকে দূরে যাবে, সেটা হয়তো খুব সহজ হবে না।”

“সাফল্য স্থায়ী নয়, ব্যর্থতা মানেই মৃত্যু নয়। আসল ব্যাপার হচ্ছে সাহস ধরে রাখা”— যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের এই উক্তিটি তুলে ধরেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান।

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম মনিরুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা গণিতে ভালো, তারা আমার মতো পেশা অনুসরণ করতে পারো। বাংলাদেশে বিমা ও আর্থিক শিল্পখাতে বিপুল সংখ্যক অ্যাকচুয়ারি (অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে যারা কাজ করেন) প্রয়োজন। অ্যাকচুয়ারি খুব ভালো পেশা।”

ইয়ুথ অপরচুনিটিজের প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন নূর বলেন, “তোমরা সবাই মেধাবী। কিন্তু স্রষ্টা সবাইকে একই ধরনের দক্ষতা দিয়ে পাঠাননি। উপস্থিত সবাইকে অনুরোধ করছি, যারা আজ এখানে নেই তাদের ভেতরেও যে সম্ভাবনা রয়েছে— সেটি জাগ্রত করতে তোমরা সহায়তা করবে।”

কোরআন, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষার্থী আজমাইন আজমি নাহিন, মেথডিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্ট্যালন প্রছায়া বিশ্বাস, অ্যাকাডেমিয়ার বিবেক চৌধুরী ও এজি চার্চ স্কুলের অথৈ বড়ুয়া নিজ নিজ ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করে।

অনুষ্ঠানে কৃষক, জেলে ও শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মেরি ক্যুরি স্কুল। সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বন ধ্বংস, পরিবেশ দূষণ ও দ্রুত নগরায়নের বিষয়গুলো তুলে ধরে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এর মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিদের কাছে ‘কীভাবে বিশ্ব রক্ষা করা যায়’ সেই বার্তা পৌঁছে দেন তারা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বিএএফ শাহিন, মাস্টারমাইন্ড ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল। এ সময় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে কীভাবে অধিকার ও মাতৃভাষার জন্য প্রতিবাদ হয়েছিল, সে চিত্র তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জুনায়েদ রাব্বানী। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বছরের পর বছর এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে আসছে।

Comments

The Daily Star  | English

US vetoes Security Council demand for Gaza ceasefire

13 Security Council members voted in favor of a brief draft resolution, put forward by the UAE, while Britain abstained

19m ago