স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে ইনিংস ব্যবধানে জিতল বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কাজটা আগের দিনই এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। সকালে নেমেই পর পর দুই উইকেট নিয়ে নেওয়ায় প্রথম সেশনেই মিলছিল জয়ের সুবাস। অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন, সিকান্দার রাজারা প্রতিরোধের চেষ্টায় সময়টা কেবল প্রলম্বিত করেছেন, বদলাতে পারেননি নিজেদের অনিবার্য পরিণতি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও নাঈম হাসানের ঘূর্ণি সামলাতে পারেনি জিম্বাবুয়ে, তার সঙ্গে তাইজুল ইসলামও জ্বলে ওঠায় খেলা শেষ হয়েছে দ্রুত। টানা ছয় টেস্টে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর অবশেষে সাদা পোশাকে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনেই হয়েছে দুদলের একমাত্র টেস্টের ফয়সালা। জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে বাংলাদেশের এটি ১৪তম জয়, যার সাতটাই এলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে ছিল বৃষ্টির শঙ্কা। ম্যাচের যা অবস্থা ছিল, তাতে কেবল খারাপ আবহাওয়াই টেস্ট নিতে পারত পঞ্চম দিনে। ফাল্গুনের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়েছে এদিন সকাল থেকে। কিন্তু সেই বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি বাংলাদেশের জন্য।

শেষ ছয় টেস্টের পাঁচটাই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। হার ছিল ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও। এই সময়ে টেস্টে মুমিনুলদের খেলার ধরণও ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। নানা কারণে তাই কোণঠাসা বাংলাদেশ খুঁজছিল স্বস্তির বাতাস। এই ম্যাচ দিয়ে পাওয়া গেছে সব। ব্যাটসম্যানরা বড় রান করে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস, পেসারদের থেকে মিলেছে ভরসার ছবি, স্পিনাররা দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা।

মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো কোনো প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানেও হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশের বড় অর্জন মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি, লম্বা রান খরা কাটিয়ে মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ২৬৫ রানে গুটিয়ে দিতে অবদান রেখেছিলেন পেসার আবু জায়েদ রাহি আর অফ স্পিনার নাঈম। পরে রানের ফোয়ারা দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। মুমিনুল করেন ১৩২, মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে চোখ ধাঁধানো অপরাজিত ২০৩। ফিফটি পেরিয়ে ছন্দে থাকার ইঙ্গিত দেন নাজমুল হাসান শান্ত, লিটন দাসরা।

২ উইকেটে ৯ রানে নিয়ে নেমে আর ৬ রান যোগ করেই জিম্বাবুয়ে হারায় কেভিন কাসুজাকে। তাইজুল ইসলামের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আগের দিনের শেষ বিকালের নায়ক নাঈম বল হাতে নিয়েই পান উইকেট। তার বলে স্লগ সুইপ করে ক্যাচ উঠিয়ে ফিরে যান ব্রেন্ডন টেইলর। এরপর পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার আর আরভিনের ৬০ রানের জুটি। ইনিংস হার এড়াতে এই জুটিই ছিল সফরকারীদের শেষ ভরসা।

দারুণ ফিল্ডিংয়ে জুটি ভেঙেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। ৪৩ করা আরভিন আউট হওয়ার পর বেশিক্ষণ টেকেননি সিকান্দার। তাইজুলের বলে কাভারে অনেকখানি লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে ফেলেন মুশফিক।

কোমর ভেঙে যাওয়া জিম্বাবুয়ে এরপর টপাটপ খুইয়েছে উইকেট। টিমসেন মারুমা আর রেজিস চাকাভ্যার ছোট্ট এক জুটি ম্যাচের আয়ু সামান্য বাড়িয়েছে শুধু। থিতু হয়ে তারা টিকতে পারেননি নাঈম, তাইজুলের সামনে।

প্রথম ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েও পাঁচ উইকেট না পাওয়া নাঈম হাসান এবার মেটান সেই খেদ। আইন্সলে এনডিলোভুকে আউট করে তোলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট। শেষ ব্যাটসম্যানকে আউট করে তাইজুলও নেন ৪ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৬৫

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৬০/৬ (ইনিংস ঘোষণা)

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস: ৫৭.৩ ওভারে ১৮৯ (মাসভাউরে ০, কাসুজা ১০, টিরিপানো ০, টেইলর ১৭, আরভিন ৪৩, রাজা ৩৭, মারুমা ৪১, চাকাভ্যা ১৮, এনডিলোভু ৪, টুসুমা ৩, নিয়াউচি ৭*; নাঈম ৫/৮২, তাইজুল ৪/৭৮, রাহি ০/৪, ইবাদত ০/১৬)

ফল: বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago