ঋণ করে বই কেনা

ছবি: স্টার

বইমেলায় এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মাহমুদুল। স্টল ঘুরে অনেক বই পছন্দ হলেও মাসের শেষে এসে টিউশনির টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় পছন্দের বইগুলো কিনতে পারছেন না।

বইপ্রেমীরা প্রায়ই এমন সংকটে পড়েন। সীমিত পকেট-খরচের টাকা বাঁচিয়ে বই কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনা করে বই কেনার জন্য ঋণ দিচ্ছে আইপিডিসি। বিনা সুদে ঋণ নিয়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকার বই কেনা যাবে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের ১২৭ নম্বর স্টল থেকে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল জানান, "আমি যদি ১৫০০ টাকা লোন নিই সেটা দিয়ে অনেক বই কেনা যাবে। আগামী তিন মাসে ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করাটা খুব বেশি কঠিন হবে না।"

আইপিডিসি স্টলের কর্মী সুমাইয়া সুমি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী এখানে ঋণ নিতে আসছে। কয়েকজন চাকরিজীবীও এখান থেকে ঋণ নিয়ে বই কিনেছেন। তিনি বলেন, "১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো মানুষ এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন। ঋণ নেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, পেশাগত পরিচয়পত্র, এক কপি ছবি জমা দিতে হয়। সঙ্গে বিকাশ ওয়ালেট এবং একটি স্মার্টফোন থাকলেই ঋণ নেওয়া যাবে।"

টাকা ছাড়ের প্রক্রিয়াটি কিভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ঋণ নেওয়ার পর যেকোনো স্টলে গিয়ে বই কেনা যাবে। বইয়ের মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১৫০ টাকা হলে বিকাশ ওয়ালেট থেকে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ১৫ টাকা পরিশোধ করলে বাকি ৯০ শতাংশ আমরা এখান থেকে পরিশোধ করে দিই।"

"আমি নিজেও একজন শিক্ষার্থী। ফেব্রুয়ারি মাসে যদি আমার টাকা না থাকে তাহলে বই না কিনেই আমাকে ফিরে যেতে হবে। ঋণ পরিশোধের জন্য হাতে যেহেতু তিন মাস সময় থাকছে তাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি," জানাচ্ছিলেন ঢাকা কমার্স কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া।

ঋণ নিয়ে বইমেলা থেকে বই কিনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন। তিনি বলেন, "আমি ১৫০০ টাকা ঋণ নিয়েছি। ১৪৫০ টাকার বই কিনেছি। যত টাকা খরচ করেছি তত টাকাই পরিশোধ করব। ঋণ না নিলে হয়তো এত টাকার বই আমি কিনতে পারতাম না। এটা বেশ ভালো উদ্যোগ।"

তবে, ব্যস্ত দিনগুলোতে ভিড় সামলে এই প্রক্রিয়ায় বই কেনা কিছুটা কঠিন বলে জানান তিনি। "টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ। প্যাভিলিয়নগুলো যেখানে ভিড় থাকে অনেক সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে বই কেনা কঠিন।"

আইপিডিসির সহকারী ব্যবস্থাপক তারিফ শেরহান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনা। বই কেনার জন্যই আমরা 'সুবোধ' লোন দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত চারশ এর বেশি মানুষ ঋণ নিয়েছেন। 

১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঋণদান কার্যক্রম শুরু হয়। চলবে বইমেলায় শেষ দিন পর্যন্ত। আগামী মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে তিন কিস্তিতে ঋণ শোধ করা যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নোশিন আঞ্জুম প্রবাহ জানান, "আমার এটা অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। লোন না নিয়ে আমি হয়তো পরে হাতে টাকা পাওয়ার পর দোকান থেকে কিনে নিতে পারতাম। কিন্তু বইমেলা থেকে বই কেনার আনন্দই আলাদা।"

Comments

The Daily Star  | English

July charter implementation: What notes of dissent could mean

The July National Charter, finalised after weeks of consensus talks, faces a delicate challenge over notes of dissent, most of them from the BNP and its allies.

15h ago