প্রশ্নটি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের

Nazmul Hasan Papon & Mushfiqur Rahim
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানের বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে নানাবিধ কথাবার্তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান সফরে মুশফিকুর রহিমের না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি যে ধরনের সমালোচনা করেছেন, তাতে বিসিবি প্রধান সম্ভবত ক্রিকেটের মূল মন্ত্রটিকে লঙ্ঘন করেছেন, আর তা হলো- পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।

তিন দফার পাকিস্তান সফরের শেষ ধাপে মুশফিকুর রহিমের যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে গেল মঙ্গলবার বিসিবি কার্যালয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বোর্ড প্রধানের কাছে। প্রথমে তিনি জবাব দেন যে, এখনও মুশফিকের মুখ থেকে তিনি কিছু শোনেননি।

এটি একটি যুক্তিসঙ্গত উত্তর ছিল।

এরপর তিনি এমন কিছু বলেন, যা রাজনৈতিক কথোপকথনের সঙ্গেই কেবল যায়।

‘ক্রিকেটারদের দেশের কথাও চিন্তা করতে হবে, শুধু নিজের কথা চিন্তা করলে হবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটিই মনে করি। নিজের কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দেশ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এ কথাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে,’ তিনি জানান।

কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার তিনি বেশ কিছু কথা বলেন যা যৌক্তিক।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ঠিক আছে, একটা ভয় ছিল (পাকিস্তান সফরে যাওয়া নিয়ে)। আমাদের সবারই ছিল। কিন্তু যারা সফরে গিয়েছে, তাদের মধ্যে কি ভয় ছিল না?’

তবে তারপর এমন কিছু তিনি উচ্চারণ করেন- দেশের তারকা ব্যাটসম্যান এবং সবচেয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ক্রিকেটার মুশফিক কেন- যা যেকোনো পেশাদার অ্যাথলেটের জন্যই অবমাননাকর।

‘(মুশফিকের) বাড়ির লোকও তো খেলে এসেছে (পাকিস্তানে গিয়ে)! আমি বলতে চাচ্ছি, (তার ভায়রা ভাই মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদের কোনো কিছু হলে কী কিছু হবে না? শুধু তার (মুশফিক) বেলায় পুরো পরিবার কান্নাকাটি করবে না-কি? চিন্তিত নাকি? এরকম তো আমি বিশ্বাস করি না,’ বিদ্রূপের সুর বেরিয়ে আসে নাজমুলের কন্ঠ থেকে।

আগামী এপ্রিলে মুশফিকের পাকিস্তান সফরে যাওয়া নিয়ে বোর্ড প্রধানের যে উদ্ভট যুক্তি, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু এটা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। মূল প্রশ্নটি হলো, মুশফিক বা অন্য কোনো ক্রিকেটারের পারিবারিক অনুভূতি নিয়ে উপহাস করার কোনো অধিকার বোর্ড প্রধানের আছে কি-না?

১৫ বছরেরও বেশি সময়ের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বার বার দেশের জন্য সর্বোচ্চ উজাড় করে দেওয়া মুশফিকের মতো একজন খেলোয়াড় কেন, যেকোনো ক্রিকেটারকেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার কি বিসিবি প্রধানের আছে?

পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় মুশফিক পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং প্রিয়জনদের অনুরোধ রাখার অধিকার তার রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে এমন ঘটনা বিরল নয়।

ভক্ত মহলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, তবে ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া কেবল অপ্রত্যাশিতই নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভীষণ ব্যত্যয়। তদুপরি, এমন একজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে এসব বলা হয়েছে, যিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, মাঠের বাইরে থাকার সময়টা তিনি মোটেও উপভোগ করেন না।

বোর্ড সভাপতির অবশ্য হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টিতে ও প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে বেশ বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। আর এটাও বোধগম্য যে, মুশফিক দলে থাকলে তার ব্যাটে চড়ে আরও ভালোভাবে লড়াই করতে পারত বাংলাদেশ।

টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপে মুশফিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রমাণ মেলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুদিন আগে শেষ হওয়া একমাত্র টেস্টে। তিনি দুর্দান্ত এক ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে অপরাজিত ছিলেন ২০৩ রানে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মুশফিক টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করার পরদিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সহজ জয়ের প্রসঙ্গ টেনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল বলেছিলেন, বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সেদিনই বোর্ড প্রধান হাস্যোজ্জ্বল মুখে মুশফিকের হাতে ম্যাচসেরার পুরস্কারও তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আদৌ কোনো প্রশংসা ছিল কি-না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকছেই।

Comments

The Daily Star  | English

Drafting new constitution can take a long time: Asif Nazrul

He proposed that the next parliament can act as constitutional authority and amend the 1972 constitution until a new one is enacted

43m ago