দিল্লিতে যা ঘটছে তা ‘দাঙ্গা’ নয়

দিল্লিতে যা ঘটছে তা ‘দাঙ্গা’ নয়, একে যারা দাঙ্গা বলছেন তাঁরা ইচ্ছায় বা অজ্ঞতাবশত ভারতের গেরুয়া বাহিনীর ভাষ্যকার হচ্ছেন। একে ‘সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ’ বলতে আমি নারাজ। যা ঘটছে তা হচ্ছে রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট গেরুয়া সন্ত্রাসী আক্রমণ— মুসলিম জনগোষ্ঠী তার প্রথম লক্ষ্যবস্তু কিন্তু একমাত্র লক্ষ্যবস্তু নয়। আগামীতে অন্যরাও আক্রান্ত হবেন। লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বহুত্ববাদী ভারত।
Delhi clash
দিল্লিতে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির স্বজনের আহাজারি। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ছবি: রয়টার্স

দিল্লিতে যা ঘটছে তা ‘দাঙ্গা’ নয়, একে যারা দাঙ্গা বলছেন তাঁরা ইচ্ছায় বা অজ্ঞতাবশত ভারতের গেরুয়া বাহিনীর ভাষ্যকার হচ্ছেন। একে ‘সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ’ বলতে আমি নারাজ। যা ঘটছে তা হচ্ছে রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট গেরুয়া সন্ত্রাসী আক্রমণ— মুসলিম জনগোষ্ঠী তার প্রথম লক্ষ্যবস্তু কিন্তু একমাত্র লক্ষ্যবস্তু নয়। আগামীতে অন্যরাও আক্রান্ত হবেন। লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বহুত্ববাদী ভারত।

দিল্লিতে হামলা ও হত্যাকাণ্ড হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপের একটি। ৩৭০ ধারা বাতিল, এনআরসি, সিএএ— এগুলো হচ্ছে সেই পদক্ষেপের অংশ; তারই ধারাবাহিকতায় ভারতের নাগরিকদের মধ্যে যারা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে এখন সশস্ত্রদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে, পুলিশ গেরুয়া বাহিনীর সঙ্গেই আছে।

দিল্লির নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জিঘাংসায় মত্ত বিজেপি ও সংঘ পরিবার এখন দেখাতে চাইছে শক্তির প্রয়োগেই তাঁরা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। যে কোনো বাধাকে তাঁরা বল দিয়ে মোকাবেলা করবে। সারা দেশে গত নির্বাচনে পাওয়া সাঁইত্রিশ শতাংশ ভোটের জোর নয়, বিজেপি এখন আদর্শিক ফ্যানাটিকদের ওপরেই নির্ভরশীল; তাদেরকেই লেলিয়ে দিয়েছে।

দিল্লির কেজরিওয়াল প্রশাসনের ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত কয়েকমাসে ভারতের নাগরিকদের এক বড় অংশ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, দিল্লিতে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকছেন—  রাজপথে থাকছেন তাদের এই অসম সাহসিকতাকে শুভেচ্ছা। দিল্লিতে হত্যাকাণ্ডের রক্তের দাগ লেগে আছে মোদির হাতে— তাকে যারাই বুকে টেনে নিচ্ছেন, ট্রাম্পের মতো যারা তাকে জড়িয়ে ধরছেন/ আগামীতে ধরবেন তাদেরকেও এই হত্যার দায় নিতে হবে।

মনে রাখা দরকার যে, এই লড়াই কেবল ভারতের নাগরিকদের নয়— এর ভবিষ্যতের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের স্বার্থ জড়িত। ভারতে হিন্দুত্ববাদী মোদীর উত্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর দেশের ওপরে ভারতের আচরণের প্রভাব পড়েছে, পড়ছে এবং পড়তে থাকবে। সেই কারণেই এই লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়ানো, সহমর্মিতা প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে মোদী এবং সঙ্ঘ পরিবারের উপস্থিতিতেই প্রতিবাদ জানানোর জন্যে প্রস্তুতি দরকার।

(ফেসবুক থেকে)

আলী রীয়াজ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ) রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

2h ago