আন্তর্জাতিক

দিল্লির ‘হিরো’ নীরাজ কুমার

দিল্লির সহিংসতায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪২ জন। আহত হয়েছেন আরো দুই শতাধিক। উত্তর-পূর্ব দিল্লির অনেক এলাকার বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অনেকেই সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে এনেছেন। বলা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উস্কানি থেকে এই সহিংসতা।
hero.jpg
গাজিয়াবাদের পুলিশ সুপার নীরাজ কুমার জাদন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

দিল্লির সহিংসতায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪২ জন। আহত হয়েছেন আরো দুই শতাধিক। উত্তর-পূর্ব দিল্লির অনেক এলাকার বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অনেকেই সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে এনেছেন। বলা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক উস্কানি থেকে এই সহিংসতা।

তবে, সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে, নিজের জীবন বাজি রেখে কেউ কেউ বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। তেমনই একজন গাজিয়াবাদের পুলিশ সুপার নীরাজ কুমার জাদন। দিল্লির কারাওয়াল নগরের অনেক পরিবারকে বাঁচিয়েছে তার সিদ্ধান্ত। তার প্রশংসা করা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিবিসির প্রতিবেদনে তাকে ‘হিরো’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীরাজ কুমার গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের কাছেই গাজিয়াবাদের একটি সীমান্তে টহল দিচ্ছিলেন। এসময় তিনি দিল্লির কারাওয়াল নগর এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। ওই এলাকাটি তার অবস্থান থেকে ২০০ মিটার দূরে ছিল।

তিনি দেখলেন, ৪০-৫০ জন মানুষ যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। উগ্র জনতার একজন পেট্রোল বোমা নিয়ে একটি বাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

ঠিক তখনই নীরাজ কুমার সিদ্ধান্ত নিলেন সীমান্ত পার হওয়ার। কিন্তু, পুলিশ প্রটোকল ভেঙে রাজ্য সীমান্ত পার হতে সুস্পষ্ট অনুমতির প্রয়োজন।

নীরাজ কুমার বিবিসিকে বলেন, ‘আমি সীমান্ত পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি জানতাম আমার সামনে বিপদ এবং যা করছি তার এখতিয়ার আমার নেই। তবুও, সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। আর ওই ১৫ সেকেন্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার দল আমাকে অনুসরণ করেছিল। সিনিয়ররাও আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। এজন্য সবাইকে আমার ধন্যবাদ।’

সেখানে অগ্নিসংযোগের জন্য প্রস্তুত ছিল উগ্র জনতা। খুব বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে ছিলেন নীরাজ কুমার ও তার সহকর্মীরা। পুলিশ উগ্র জনতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু, আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

‘আমরা তাদের বললাম, পুলিশ গুলি চালাবে। এ কথা শুনে তারা পিছু হটে। কিন্তু, কয়েক সেকেন্ড পরেই তারা আমাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। আমরা তখন গুলির শব্দও পেলাম’, বলেন নীরাজ কুমার।

নীরাজ কুমার এবং তার দল তাদের অবস্থান ধরে রাখেন এবং উগ্র জনতাকে ফিরে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন। এক সময় তারা চলেও যায়।

নীরাজ কুমার জানান, এ অঞ্চলে বাঁশ দিয়ে তৈরি অনেক দোকান ছিল। এখানে অগ্নিকাণ্ডের সুযোগ দিলে পুরো এলাকা পুড়ে যেত। সেক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ত।

উগ্র জনতা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছিল। তাদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কাও ছিল, তা সত্ত্বেও নীরাজ কুমার ও তার দলের সদস্যরা পিছু হটেননি।

নীরাজ কুমার অবশ্য নিজেকে নায়ক হিসেবে ভাবতে চান না। তিনি মনে করেন এসব কাজ তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি নায়ক নই। আমি যেকোনো ভারতীয়কে রক্ষার শপথ নিয়েছি। আমি কেবল আমার সেই দায়িত্ব পালন করছি। আমার সামনে কেউ মারা যাবে, তা আমি হতে দেব না। আমরা তখন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার মতো অবস্থানে ছিলাম। আমরা সেটাই করেছি।”

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পক্ষে এবং বিপক্ষের লোকদের মধ্যে দিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। যা ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

সহিংসতা শেষে সাম্প্রদায়িকতাকে বিচারের মাপকাঠি হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু, নীরাজ কুমারের মতো বীরদের কীর্তি কারো নজরে পড়ে না বলে উল্লেখ করেছেন হিন্দি দৈনিক আমার উজালার প্রতিবেদক রিচি কুমার।

রিচি কুমার উগ্র জনতাকে ‘রক্তপিপাসু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘উগ্র জনতা সশস্ত্র ছিল। তারা কারো কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এই অবস্থায় নীরাজ কুমারের সিদ্ধান্তের মতো সাহসী কাজ আমি কখনো দেখিনি।’

Comments

The Daily Star  | English

Sticker shock

Prices of onion increased by Tk 100 or more per kg overnight at kitchen markets across the country as traders began stockpiling following the news that India had extended a virtual restriction on its export.

2h ago