নাটকীয় জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

টানা দুই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।
bangladesh cricket
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তামিম ইকবালের। কেবল ফর্ম নয়, ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়েও চলছিল সমালোচনা। ছিলেন ভীষণ চাপের মধ্যে। ব্যাট হাতে তাই জ্বলে ওঠার বিকল্প ছিল না। সমালোচনার জবাব দিয়ে, চাপ জয় করে তামিম বিষাদের কালো মেঘ সরিয়ে ছড়ালেন দ্যুতি। সেঞ্চুরিকে রূপান্তর করলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে। তার রেকর্ডে বিশাল লক্ষ্য পাওয়া জিম্বাবুয়ে লড়াই করল শেষ বল পর্যন্ত। ডোনাল্ড টিরিপানো ও চার্লটন মুটমবোডজি অষ্টম উইকেটে গড়লেন অসাধারণ এক জুটি। তবে চরম নাটকীয়তার পর শেষ হাসি হেসে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজাদের ৮ উইকেটে ৩২২ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে পৌঁছাতে পারে ৮ উইকেটে ৩১৮ রান পর্যন্ত।

উত্তেজনায় ঠাসা দ্বৈরথের শেষ ৪ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১৮। টানা দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ টিরিপানো ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেদের দিকে। তবে ২ বলে ৬ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি তিনি। স্নায়ুচাপ এড়িয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান আল-আমিন হোসেন। তবে জিম্বাবুয়ে নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিটি টিরিপানোর মাথার বেশ উপর দিয়ে গেলেও আম্পায়ার ওয়াইড দেননি।

টানা দুই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। একই ভেন্যুতে প্রথম ওয়ানডেতে রান ব্যবধানে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের নজির গড়েছিল তারা, সফরকারীদের উড়িয়ে দিয়েছিল ১৬৯ রানে।

আগের ম্যাচেই ৬ উইকেটে ৩২১ রান তুলে এই সংস্করণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। তামিমের স্বস্তির শতকে সেই কীর্তি ভেঙে এদিন নতুন করে লিখেছে টাইগাররা।

ক্যারিয়ারের দ্বাদশ ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে তামিম থামেন দেড়শ পেরিয়ে। তার ১৫৮ রানের ইনিংসটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ১৩৬ বল মোকাবিলা করে ১০ চারের সঙ্গে ৩ ছক্কা মারেন তিনি। নিজের গড়া ১১ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠে যান বাঁহাতি ওপেনার। ২০০৯ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই বুলাওয়েতে ১৫৪ রান করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দেড়শ রান নেই আর কারও।

সাম্প্রতিক সময়ের ধীরগতির ব্যাটিং স্টাইল পাল্টে আগ্রাসী ঢঙে খেলে স্বস্তির শতক হাঁকিয়ে তামিম রেকর্ড গড়েন আরও। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ২০৬ ওয়ানডের ২০৪ ইনিংসে ৩৬.০৯ গড়ে তার সংগ্রহ এখন ৭ হাজার ৭৪ রান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিমের সৌজন্যে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। অপরপ্রান্তে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত রানআউটে কাটা পড়লেও রানের চাকা শ্লথ হয়নি। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৮৭ ও চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ১০৬ রানের জুটি গড়েন তামিম। তাতে বড় সংগ্রহ নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। ৪২ বলে হাফসেঞ্চুরি করা তামিম তিন অঙ্কে পৌঁছান ১০৬ বলে। আর দেড়শ ছুঁয়ে ফেলেন ১৩২ বলে। তার বিদায়ের পর মোহাম্মদ মিঠুনের কল্যাণে স্কোরবোর্ডে ৩২২ রান জমা করে বাংলাদেশ।

মুশফিক ৫০ বলে ৫৫ রান করেন ৬ চারে। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৫৭ বলে ৪১ রান। মিঠুন ১৮ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন কার্ল মুম্বা ও টিরিপানো।

লক্ষ্য তাড়ায় জিম্বাবুয়ে পায়নি ভালো শুরু। চতুর্থ ওভারে রেগিস চাকাভাকে ফেরান শফিউল ইসলাম। টিকতে পারেননি ব্যাটিং লাইনআপের দুই ভরসা ব্রেন্ডন টেইলর আর অধিনায়ক শন উইলিয়ামসও। একপ্রান্ত আগলে থাকা ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউইকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়েকে চাপে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। ৭০ বলে ৫১ রান করে দলীয় ১০২ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন তিনি।

পঞ্চম উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েন ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা। মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটিও ভাঙেন তাইজুল। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির স্বাদ নিয়ে ৫৭ বলে ৫২ করে বিদায় নেন মাধেভেরে। এরপর রিচমন্ড মুটুমবামিকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। আর বিপজ্জনক রাজাকে আউট করেন টাইগার দলনেতা মাশরাফি। ৫৭ বলে ৬৬ রান করেন রাজা।

বাংলাদেশ যখন আরেকটি সহজ জয়ের স্বপ্ন দেখছে, তখনই ম্যাচের ছবি পাল্টে যেতে শুরু করে। অষ্টম উইকেটে মাত্র ৪৪ বলে ৮০ রান তুলে দলকে জয়ের সুবাস দিচ্ছিলেন মুটমবোডজি ও টিরিপানো। তবে শেষটা রাঙাতে পারেননি তারা। মুটমবোডজি ২১ বলে ৫ চারে ৩৪ করে ফিরলেও টিরিপানো তাণ্ডব চালিয়ে ২৮ বলে ২ চার ও ৫ ছয়ে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২২/৮ (তামিম ১৫৮, লিটন ৯, শান্ত ৬, মুশফিক ৫৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, মিঠুন ৩২*, মিরাজ ৫, মাশরাফি ১, তাইজুল ০, শফিউল ৫*; মুম্বা ২/৬৪, টিশুমা ১/৩৫, টিরিপানো ২/৫৫, মাধেভেরে ১/৩৮, সিকান্দার ০/৫৯, উইলিয়ামস ০/৩৫, মুটমবোডজি ০/৩৪)

জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ৩১৮/৮ (কামুনহুকামউই ৫১, চাকাভা ২, টেইলর ১১, উইলিয়ামস ১৪, মাধেভেরে ৫২, সিকান্দার ৬৬, মুটুমবামি ১৯, মুটমবোডজি ৩৪, টিরিপানো ৫৫*, মুম্বা ০*; মাশরাফি ১/৫২, শফিউল ১/৭৬, মিরাজ ১/২৫, আল-আমিন ১/৮৫, তাইজুল ৩/৫২, মাহমুদউল্লাহ ০/২২)

ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago