উচ্ছেদ অভিযান বাধা দিতে এসে এমপি আসলামুল হক যা বললেন

বছিলা সেতুর পশ্চিম পাশে বুড়িগঙ্গার তীরে বিআইডব্লিটিএর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিয়েছেন ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক।
বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন এমপি আসলামুল হক। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বছিলা সেতুর পশ্চিম পাশে বুড়িগঙ্গার তীরে বিআইডব্লিটিএর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিয়েছেন ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক।  

আজ বুধবার সকালে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন এই সংসদ সদস্য। আসলামুল হকের বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। এমপিকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংবিধানে রয়েছে কোনো নদী দখলদার জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। আপনি কি পদত্যাগ করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে যখন জরিপে প্রমাণ হবে, তখন দেখা যাবে।’

সাংবাদিকরা বারবার জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, ‘জরিপটা হোক না…আগে জরিপটা হোক…আমি এটার উত্তর এখন দেব না আপনাকে, সরি।’

আরেকজন সাংবাদিক তখন জানতে চান, এখন আপনি কি বাধা দিচ্ছেন? জবাবে বলেন, ‘না, আমি বাধা দিচ্ছি না। জরিপ যেটা করছে…আমি মন্ত্রণালয়ের অর্ডারকে সম্মান করে বলছি যে, সেই জরিপ দিয়ে তারা মাপুক।’

আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যদি তারা অবৈধভাবে উচ্ছেদ চালায় আপনি বাধা দেবেন নাকি আদালতের প্রতিকার চাইবেন? তখন তিনি বলেন, ‘আমি তো বাধা দিচ্ছি না…প্রতিকার তো চাইতেই পারি। আদালতে চাইবো না মিনিস্ট্রিতে চাইবো…যেহেতু এটি আপনার ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিষয় আছে। যেহেতু এটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিষয় আছে। যেহেুত এটি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিষয় আছে…আর আপনার নৌ মন্ত্রণালয়ের বিষয় আছে। আমি সকল মন্ত্রণালয়ে এইটার প্রতিকার চাইতে পারি। এটা আমার অধিকার রয়েছে।’

সাংবাদিক জানতে চান, আপনি এসেই বলছেন—এখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে দেব না যতক্ষণ না আমাকে… সাংবাদিকের প্রশ্ন শেষ করার আগেই তিনি বলনে, ‘উচ্ছেদ অভিযান আমি বলছি না। আমি বলছি যে আপানারা যে পতাকা লাগাচ্ছেন, কোন জরিপের ভিত্তিতে পতাকা লাগাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়েল যে নিদের্শনা অনুযায়ী জরিপটা করা হয়েছে সেইটা দেখান। দেখায়া আপনি মাপেন।’

একজন সাংবাদিক বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি তো আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন, সেই জায়গায় একটা চলমান কাজকে বাধা দিচ্ছেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘না না চলমান কাজ না… না না আমি বাধা… তাহলে কালকে উচ্ছেদ হলো কী করে ভাই।’

এ সময় সাংবাদিকরা সমস্বরে বলেন, কালকে তো আপনার প্রতিনিধি বাধা দিয়েছিল, আপনি লোক পাঠিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে আর কথা বলব না। আপনারা যেহেতু…না না সরি।’

অন্য একজন সাংবাদিক বলেন, আপনার লোক এসে কাজ বন্ধ করেছিল…তাকে আটকও করা হয়েছিল, জরিমানা করা হয়েছিল। তখন আসলামুল হক বলেন, ‘তার নিয়ম অনুযায়ী সে কাজ করেছে।’

তার মানে সরকারের এই কাজটিকে আপনি স্বাগত জানাচ্ছেন না এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাধুবাদ জানাই। সাধুবাদ জানাই…সাধুবাদ জানাই….সাধুবাদ জানাই…সাধুবাদ জানাই…সাধুবাদ জানাই….সাধুবাদ জানাই… আমি বিআইডব্লিউটিএর এই উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে একমত। কিন্তু, আমার কথা হচ্ছে… আমাকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে যে জরিপটি করা হয়েছিল আমার এই এলাকাটি…সেই জরিপ অনুযায়ী আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক।’

ঢাকায় তো আরও এমপি আছেন, আপনার এই মায়িশা গ্রুপের বিরুদ্ধে কেন এত দখলের অভিযোগ। মিরপুর ও আশুলিয়াতে রয়েছে এবং তা দৃশ্যমান। জবাবে এই সংসদ সদস্য জানান, ‘আই ডোন্ট নো…আই ডোন্ট নো…আশুলিয়ায় আমার কোনও জমি নেই…সরি।’

এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, মিরপুর বেড়িবাধে রয়েছে। এসব তথ্য অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তখন তিনি বলেন, ‘না না…এইটা সঠিক না। এ বিষয় আপনি প্রমাণ করেন…প্রমাণ করেন… প্রমাণ করেন না…’

সাংবাদিকরা তখন বলেন, এগুলো যে দখল না এটা প্রমাণ করা আপনার দায়িত্ব। জবাবে আসলামুল হক বলেন, ‘আমার দায়িত্ব তো আমি পালন করবোই…এইগুলো সব আমার মালিকানা। আমার তিন পর্চা সিএসএস আরএস অনুযায়ী, আমি এই মালিকানা…মালিকানা জমি সেটি আমি ক্রয় করেছি। আমার বক্তব্য একটাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ক্রমে আমার এই পাওয়ার প্লান্টটি, পাওয়ার প্লান্টের জায়গাটি যেভাবে জরিপ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেটি এই আজকের এই কাগজ এই চিঠি মাধ্যমে এই জরিপটি করা হয়েছিল। এই জরিপ অনুযায়ী কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান চলছে না।’

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এই জরিপে কী আছে, কী বেরিয়ে আসছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা তো আমি জানি না। আমি জানি না কী বেরিয়ে আসছে।’

তাহলে আপনি কীভাবে নিশ্চিত হয়ে বলছেন ওনারা এই জরিপটি ফলো করছে না? তখন তিনি বলেন, ‘…তাহলে বিআইডব্লিউটিএ কিন্তু মিনিস্ট্রির নির্দেশও মানছে না। তার কারণ হল মিনিস্ট্রির নির্দেশেই ওই জরিপটি হয়েছিল। সেই জরিপ অনুযায়ী…’

ওনারা যদি না মানে সেক্ষেত্রে আপনি মিনিস্ট্রিতে যোগাযোগ করেছেন কিনা কিংবা আদালতে যাবেন কিনা। স্পটে এসে কথা বলার চেয়ে তাদের কাছে প্রতিকার চাওয়া উত্তম কিনা? প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। তখন তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কাছে প্রতিকার চাচ্ছি না। আমি একই কথা বলছি। আমার দুইটা বিষয়। একটি হল আপনি অনাপত্তিপত্র দিয়েছেন কেন?… দিয়ে আমাকে এই ক্ষতির সম্মুখীন করলেন কেন? আমাকে সমাজে হেয় করলেন কেন? সেই সময়ে যদি আপনি জমিটা চিহ্নিত করে দিতেন, তাহলে কিন্তু আমি আজকে এই ফেন্সি ওয়ার্ল্ডটা করতাম না এইখানে। আমর জায়গায় আমি করতাম। সেটা সঠিক হইলো না। এজন্য আমি বলছি আপনি উচ্ছেদ করছেন…আপনি আপনার মত এই খুটা গাড়লে তো হবে না। আপনি যৌথ জরিপে যে কাজটা করেছেন সেই যৌথ জরিপের ম্যাপটা নিয়ে আসেন। ম্যাপনা নিয়ে এসে দেখান আমাকে। আমাকে তো বুঝায়ে দিতে হবে। কয়দিন পরপর আপনি আসবেন বলবেন এখানে… তারপর আবার একটা অনাপত্তিপত্র দেবেন…বলবেন ওখানে। এইভাবে তো হয় না ভাই। আমাকে পার্মানেন্ট সলিউশন দেন। আপনারা অনাত্তিপত্র দিয়েছেন বলেই আমরা এটা করেছিলাম। এখন যদি আপনাদের মনে হয় যে ওইটা সঠিক হয় নাই…তাহলে তো আমাবে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দিতে হবে…নাকি না। পার্মানেন্ট সলিউশন চাই আমি।’

আজকে ওনারা জরিপ করছেন, করে লাল নিশানা দিচ্ছেন- আপনি এটাকে মানছেন কিনা? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপানকে বুঝতে হবে…ওনারা কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী একটি জরিপ করা হয়েছিল… সেই জরিপ অনুযায়ী আমরা কাজটা চাই। আর আপনারা কালকে দেখেছেন আমার এখানে তারা সঠিকভাবে কাজ করেছে। আর  আমার পাওয়ার প্লান্ট গুড়িয়ে দিয়েছে এই ধরনের সংবাদ আসটা সঠিক হয়নি। আমার পাওয়ার প্লান্ট কিন্তু দিব্যি আছে। আমার মালিকানার জায়গাতেই আমার পাওয়ার প্লান্ট আছে। শুধুমাত্র আমার ফেন্সি করার জায়গাটি উচ্ছেদ করছেন ওনারা। কেন করছেন, কী জন্য করছেন আমি কিন্তু আদৌ জানি না। আমাকে কোনও নোটিশ করা হয় নাই।’

এক সাংবাদিক বলেন, আপনার ট্যাংক কিন্তু তারা ভেঙে দিয়েছেন, এটা তো পাওয়ার প্লান্টের অংশ। সেসময় আসলামুল হক বলেন, ‘না এটা ভাঙতে পারবে না…এটা পাওয়ার প্লান্টের…প্লিজ আমি শেষ করি। আমাকে শেষ করতে দেন…’

এক সাংবাদিক জানতে চান, আমাদের কোথায় ভুল হয়েছে সেটা বলুন। তখন তিনি বলেন, ‘…আমি ভুলের কথা বলি নাইি…একটি থাকেন…একটু প্লিজ। আমি একটা কথা বলি সেটা হলো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ক্রমে জরিপ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই জরিপটি ১৭ দিন বা ২২ দিন জরিপ করে তারা সম্পূর্ণ করেছিল। সেই জরিপটি কিন্তু আদৌ দেখাচ্ছে না তারা। আমরা কিন্তু সেই জরিপটি চাচ্ছি। আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে সেই জরিপে আমাদের এই অংশটুকু পড়ে নাই।’

অভিযানের আগে সেই জরিপ কী বিআইডব্লিউটিএ আপনাকে দেখাতে বাধ্য, তারা তো বলছে পাওয়ার প্লান্টের ভিতরের অংশ নাম, পাওয়ার প্লান্টের যতটুকু অংশ অবৈধ ততটুকুই ভাঙছেন। তখন এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘জরিপ যেটা করেছে, আমি তাদের এই উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানাই। এ ব্যাপারে আমার কোন আপত্তিই নেই। আমার তো অনাপত্তিপত্র আছে…’

আরেক সাংবাদিক তখন বলেন, কিন্তু অনাপত্তিপত্র এবং বৈধ ও অবৈধ এখানে একটি বিষয় আছে। তখন তিনি জানান, ‘ভাই আমাকে শেষ করতে দেন। আমার অনাপত্তিপ্রত যেহেতু আছে, সেহেতু আমি বলতে চাই একই প্রতিষ্ঠান যদি আপনি অনাপত্তিপত্র দিয়ে যদি আমাকে নির্মাণের অনুমতি দিয়ে থাকেন। তাহলে, হঠাৎ করে আবার এটিকে উচ্ছেদ করবার এই পরিকল্পনা আপনারা কেন করলেন। তারপরে আবার জরিপ করলেন মিনিস্ট্রির নির্দেশ অনুযায়ী। সেই জরিপটা দিয়েই তো আমাকে উচ্ছেদ করতে হবে। যদি সেখানে অবৈধ থাকে ‘

এ সময় বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সিএস নকশা আছে। তখন আসলামুল হক বলেন, ‘সিএস নকশা অনুযায়ী, আদালতের রায় অনুযায়ী আপনি কাজ করবেন। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে আপনার যে জরিপটা করলেন… কালকে কিন্তু আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।’

বিআইডব্লিউটিএর ওই কর্মকর্তা তখন আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য আপনাকে জানাব। তখন তিনি বলেন, ‘না না দিবেন। আমি বক্তব্যে যাচ্ছি না। আমি কথা বলছি। আমি কালকে কিন্তু অনুরোধ করেছিলাম আপনারা যে জরিপটা করেছিলেন সেই জরিপটা নিয়ে আসলে আমাকে জায়গাটা বুঝিয়ে দেবেন। আপনি ১১ সালে একবার অনাপত্তিপত্র দেবেন, ১৫ সালে একবার অনাপত্তিপত্র দেবেন…’

বিআইডব্লিউটিএর আরেক কর্মকর্তা বলেন, কাল কিন্তু আমরা চেক করছি এ এলাকায় আমরা অনাপত্তিপত্র দেইনি। এই জায়গাটা আপনি পরবর্তীতে ভরাট করেছেন। তখন আসলামুল হক বলেন, ‘চেক করলে তো হবে না ভাই। আমাকে কাগজ দিতে হবে তো।

বিআইডব্লিউটিএ আরও বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছন সেই জায়গাও এটি না। তখন তিনি বলেন, ‘…আপনারা আমাকে ঠিক করে দেন… আমি আর কয়দিন পরপর এই যন্ত্রণা ভোগ করতে চাই না… আপনারা কাজ করেন… আমাকে ঠিক করে দেন। আমি পার্মানেন্ট সলিউশন চাই। নদী কখনো সোজা প্রবাহিত হয়ে এটা ইতিহাসে আমার জানা নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago