বাংলাদেশ করোনার ঝুঁকিতে আছে, অস্বীকার করার উপায় নেই: ডা. আব্দুল্লাহ

গত দুই মাসে সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিবেশী ভারতে ক্রমশই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট চিকিৎসক এবিএম আব্দুল্লাহ দেশের মানুষকে দিলেন আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ।
এ বি এম আব্দুল্লাহ

সারাবিশ্বে এখন আতঙ্ক একটাই, তা হলো করোনাভাইরাস। চীন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের উৎসস্থল হলেও গত দুই মাসে তা সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী ভারতে ক্রমশই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট চিকিৎসক এ বি এম আব্দুল্লাহ দেশের মানুষকে দিলেন আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ।

আজ বুধবার দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। বাস্তবতা হলো, করোনাভাইরাস এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়া মানেই যে এটি সিরিয়াস বিষয় তা না। কোনো কোনো দেশে এক-দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, এটা সত্য। মৃতের সংখ্যা বেড়েছে, এটাও সত্য। এখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়া কোনও উপায় নাই।’

‘আমরা সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি, সরকার সেই মোতাবেক কাজ করার চেষ্টা করছে। সরকারকে বলেছি, ট্রাভেল রেস্ট্রিকশন লাগবে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ দেশের বাইরে যাবে না। বাংলাদেশ আসতে গেলেও ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি করতে হবে। কোনো দেশ থেকে কেউ আসতে চাইলে সেই দেশের ডাক্তার দেখিয়ে ‘করোনা ফ্রি’ সার্টিফিকেট আনতে হবে। শুধুমাত্র এই সার্টিফিকেট পাওয়া ব্যক্তিদের ভিসা দেওয়া উচিত। এটি মেনে চলা খুবই জরুরি।’

‘বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং আরও জোরদার করতে হবে। প্রতিবেশী ভারতে যেহেতু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাই আমাদেরকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। বন্দরগুলোতে স্ক্র্যানিংয়ের ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।’

‘সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে তখন আরও প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’

সরকার কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে?

‘যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় তাকে কোনও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে না। বিশেষ হাসপাতাল লাগবে। জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখান থেকে আরও রোগীর মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে। সেই মোতাবেক ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

সারাদেশের জন্যে কী ধরনের প্রস্তুতি আছে?

‘সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও কমিটি আছে। কাউকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করা হলে তাকে দ্রুত ঢাকায় আনার জন্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কোথাও কোথাও করা হয়েছে। বাকিগুলোতে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

‘সব জায়গায় তো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে না। মানুষ ভয়ও পাবে। ডাক্তার-নার্সরাও ভয় পেয়ে যেতে পারেন। সেজন্যে ঢাকাতেই করোনার চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পারসোনাল প্রটেকশন দিয়ে চিকিৎসক টিম গঠন করা হচ্ছে।’

এটা মোকাবেলায় দেশ কতটা সক্ষম?

‘এধরনের সমস্যায় পড়লে আমরা তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হব বলে আশা করি। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছেন, চীনের মতো এতো শক্তিশালী দেশ হিমশিম খাচ্ছে, আমরা কীভাবে পারব? আমি বলি, যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে তাতে আশা করা যায়, আমরা করোনা মোকাবিলা করতে পারব।’

দূরের কোনো জেলায় কেউ আক্রান্ত হলে তা কীভাবে বোঝা যাবে?

‘আসলে, এটাতো বোঝা মুশকিল। প্রথম কথা হলো, সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নাই। যদি কেউ দেশের বাইরে থেকে আসেন, সেটা যে দেশই হোক না কেন, এবং সেই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বর রেখে দেওয়া হয়। তাকে ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যে যদি তার সর্দি-কাশি বা কোনও ধরনের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে হট লাইনে (০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১) যোগাযোগ করবে।’

‘জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে টিম আছে। তারা আক্রান্ত ব্যক্তির স্যাম্পল সংগ্রহ করবে। সেগুলো আইইডিসিআর’এ পাঠাবে। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেকোনো জায়গায় করা সম্ভব না। সেখান থেকেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ ঢাকার বাইরে করা উচিত না, বা সেই সুবিধা ঢাকার বাইরে নেওয়া সম্ভবও না। তাই টেস্টগুলো আইইডিসিআর’এ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি পাল্টে গেলে তখন ঢাকার বাইরে বিশেষ হাসপাতাল করতে হতে পারে। এখন কোথাও কোথাও ওয়ার্ড বা বেড আলাদা করে রাখা হয়েছে। কিন্তু, অনেকেই রোগের চিকিৎসা দিতে পারবেন না, আবার অনেকে ভয়ও পাবেন।’

তাহলে ঢাকার বাইরে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় আনা হবে?

‘জ্বি, তাকে ঢাকায় আনা হবে।’

তাকে কি যথেষ্ট নিরাপত্তার মাধ্যমে আনা হবে?

‘অবশ্যই রোগীকে যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে ঢাকায় আনতে হবে। এটা অবশ্যই করতে হবে।’

কিন্তু, সেই ব্যবস্থা সরকারের আছে বলে আপনার মনে হয়?

‘কোথাও কোথাও সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে তখন সেই ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে, এটাও ঠিক। রোগটা নতুন তো। সবকিছু তাই একবারে প্রস্তুত রাখতে পারে না। যেমন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিট ছিল না, এখন কিট আনা হচ্ছে। মাস্ক-গাউন রেডি করা হচ্ছে। সরকার সক্ষম, আমাদের ডাক্তাররাও সক্ষম। তারা করোনা মোকাবেলা পারবে বলে আশা করছি।’

‘আমাদের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ বলে ঝুঁকি তো আছেই। তার মধ্যেই আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র বলেছ, বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছে।...

‘যেহেতু করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে তাই তারা বলেছে। ঝুঁকি তো আছেই, সেটা অস্বীকার করার উপায় নাই।’

উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছে যে দেশ সেই দেশের প্রস্তুতি আসলে কতটুকু?

‘প্রথম ব্যবস্থা হচ্ছে স্ক্রিনিংয়ের করা। তারপর কিছু হয়ে গেলে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া আছে।’

সেই ব্যবস্থা কি যথেষ্ট বলে মনে করেন?

‘আপাতত তো কোনও আক্রান্ত ব্যক্তি নাই। তারপরও, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২০০ বেডের ব্যবস্থা করা আছে। যা আছে তা যথেষ্ট। তবে এটা ভয়াবহ হয়ে গেলে কী হবে তা বলা মুশকিল।’

ওষুধ, কিট, মাস্ক, গাউনের কোনও সঙ্কট আছে কি?

‘না, এখন পর্যন্ত সবকিছুই পর্যাপ্ত আছে।’

জনসাধারণের জন্যে আপনার পরামর্শ কী?

‘প্রথম কথা হলো, এটা নিয়ে ভয় পাওয়া যাবে না। কেউ আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। রোগটা যদিও সিরিয়াস, কিন্তু এর মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে বেশি না। সাধারণত যারা বয়স্ক বা অন্য রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা নিতে হবে।’

‘দিনে তিন-চার বার সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে আসলে হাত না ধুয়ে কোনও কিছু ধরবেন না। ভালো করে সেদ্ধ করে খাবে। কারো হাঁচি-কাশি হলে টিস্যু ব্যবহার করবে। সেই টিস্যু আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। রুমাল ব্যবহার করলে তা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবে। এগুলো পারসোনাল প্রটেকশন। এগুলো করতে হবে।’

‘গৃহপালিত পশুকে অসুস্থ বা রোগা দেখলে সেটিকে সরিয়ে ফেলবেন। সেগুলোর পরিচর্যা করতে গেলে গ্লাভস, গাউন ব্যবহার করবেন।’

 

এ বি এম আব্দুল্লাহ: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now