ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের অনীহা
লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসী জানায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিকবার জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।
এলজিইডি সূত্র জানায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে আদিতমারীর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দুর্গাপুর পর্যন্ত ৬ হাজার ২৪০ মিটার সড়কে সংস্কার কাজ চলছে। আব্দুল হাকিমের লাইসেন্সে কাজটি করছেন ঠিকাদার দাউদ আলী। ৬ কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৪ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উত্তরবঙ্গ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পটি (এনওবিআইডিইপি) চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের জুন মাসের আগেই শেষ হওয়ার কথা।
গ্রামবাসী অভিযোগ করে, সড়কটি প্রশস্ত ও মজবুত করার কথা থাকলেও প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। কোথাও কোথাও রাবিশ ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সড়কটির ডব্লিউবিএম কাজে তিন ইঞ্চি পুরু ইটের খোয়া ব্যবহার করার কথা। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে এক থেকে দেড় ইঞ্চি। পর্যাপ্ত পানি না ছিটিয়ে রোলার চালানো হয়েছেন। সড়কের পাশের মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এসব গর্তের কারণে বর্ষা এলেই সড়কটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী এলজিইডি প্রকৌশলীদের বারবার অভিযোগ করে আসছি কিন্তু ফল আসছে না। এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সাইটে আসেন, ঘুরে ফিরে চলে যান। আই ওয়াশের মতো। সড়কটি কিছু দিনের মধ্যেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।’
একই গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ঠিকাদার যে ইট ব্যবহার করেছেন, তা পা দিয়েই ভাঙা যাচ্ছে। আমরা কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। ঠিকাদার পাত্তাই দেন না। সাইটে এলজিইডি’র কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখতে পাওয়া যায় না।’
কুমারটারী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সড়কের পাশে গভীর গর্ত করে মাটি তুলে রাস্তায় ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ষা এলে সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় আশঙ্কায় রয়েছে। এলজিইডি প্রকৌশলী সরেজমিন দেখে গেছেন। কিন্তু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিচ্ছেন না।’
গ্রামবাসী অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদার দাউদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাজের মান নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ আছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। কর্তৃপক্ষ যদি আমার কাজে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে বাইরের মানুষ যতই লাফালাফি করুক তাতে কোনো ফল নেই।’
আদিতমারী উপজেলা এলজিইডি’র সেকশন অফিসার ফজলুল হককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী সব জানেন।
লালমনিরহাট এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশল আশরাফ আলী খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ চূড়ান্ত না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজেই কাজটি দেখভাল শুরু করেছি।’
Comments