বাংলা গানের ভবিষ্যৎ কী?

অনেক বছর হয়ে গেল গানের অডিও সিডি বের হচ্ছে না। বর্তমানে একটা করে ‘সিঙ্গেল’ গান বের হচ্ছে ইউটিউবে। ইউটিউবেই শ্রোতারা এখন গান শোনেন, দেখেন। সেখানে গানগুলো মিউজিক ভিডিও আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। কোনোটার আবার শুধুমাত্র লিরিক দিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে।
Music logo
ছবি: সংগৃহীত

অনেক বছর হয়ে গেল গানের অডিও সিডি বের হচ্ছে না। বর্তমানে একটা করে ‘সিঙ্গেল’ গান বের হচ্ছে ইউটিউবে। ইউটিউবেই শ্রোতারা এখন গান শোনেন, দেখেন। সেখানে গানগুলো মিউজিক ভিডিও আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। কোনোটার আবার শুধুমাত্র লিরিক দিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে।

ইউটিউবকে কেন্দ্র করেই অনেক নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অডিও ইন্ডাস্ট্রি এখন নেই বললেই চলে। এখন প্রায় সব অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে। শিল্পীরা সেখানে কিংবা নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই গান প্রকাশ করছেন।

এক বছর আগেও গানের ভিউ কোটি ছাড়িয়ে যেত। তবে, এখন সেটা বেশ কমে এসেছে। নাটক, শর্টফিল্ম প্রকাশের দিকে ঝুঁকছেন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কী ইউটিউবেও থাকছে না গানের বাজার?

গানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ইউটিউব চ্যানেল আজকাল গানের বাইরেও বিভিন্ন কনটেন্ট আপলোড করেছে বেশি মুনাফার আশায়। একটু ব্যাখ্যা দিয়ে বললে এমন দাঁড়ায়, তিন থেকে চার মিনিটের একটি গানে ইউটিউব বিজ্ঞাপন দেখায় একবার। কনটেন্টের দৈর্ঘ্য যত বেশি, তত বেশিবার বিজ্ঞাপন দেখানো যায় ইউটিউবে।

সেক্ষেত্রে একটি এক ঘণ্টার নাটকে বিজ্ঞাপন দেখানো যায় অনেকবার। স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের পরিমাণটাও বেড়ে যায়। তাই অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হলেও, বাড়তি লাভের আশায় তাদের লক্ষ্য এখন নাটক কিংবা দীর্ঘ কন্টেন্ট প্রযোজনা।

একটি ভালোমানের মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে খরচ হয় ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। এই টাকায় অনায়াসেই একটি নাটক কেনা যায়। তা হলে, কোন লাভের আশায় গানের পেছনে এত টাকা খরচ করবে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো?

আগে গান থেকে একটা প্রধান আয়ের উৎস ছিল ওয়েলকাম টিউন। এই ওয়েলকাম টিউনের বাজারও আগের মতো নেই। মোটের ওপর গান থেকে আয় কমে যাচ্ছে।

কয়জন সংগীতশিল্পীর গান ইউটিউবে বেশি ভিউ হচ্ছে? এই সংখ্যাও কিন্তু খুব বেশি নয়। আসিফ আকবর, হাবিব, তাহসান, কনা, মিনার, ইমরান, মাহতিম সাকিব প্রমুখ শিল্পীর গান ইউটিউবে ভিউ হচ্ছে বেশি।

আরও যারা শিল্পী যারা আছেন, অনেক ভালো গাইলেও তাদের অনেকেরই গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করতে হয় নিজের পয়সায়। অনেকেই মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরে শুধু প্রচারের আশায় গানটি শেষ পর্যন্ত বিনামূল্যেই দিয়ে আসেন।

অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি চয়েস তাদের ইউটিউব চ্যানেলে বড় ছেলে নাটকটি প্রচার করে আলোচনায় আসে। নাটকটির এখন পর্যন্ত ইউটিউবে ভিউ হয়েছে দুই কোটিরও বেশি। এরপর এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি গানের চেয়ে নাটক প্রযোজনায় বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে।

নাটক প্রকাশ করা প্রসঙ্গে সিডি চয়েসের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম সোহেল দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘গানে রেভিনিউ একেবারে কমে গেছে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে এখন বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। নতুন গান এখন খুব বেশি প্রকাশ করছি না। বর্তমানে চটুল গানের ভিউ বেশি হচ্ছে, তাই আপাতত কোনো গানে ইনভেস্ট করছি না।’

‘শিল্পীদের কাছ থেকে আমরা এককালীন গান কিনে নিই। কোন গান ৫০ লাখ ভিউ অতিক্রম করলে এক হাজার ডলার আসে। বেশি রেভিনিউ না এলে গান প্রকাশ করে লাভ কি?’ প্রশ্ন সোহেলের।

ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ব্যানারে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গান জনপ্রিয় হয়েছে। পাশাপাশি তারা নাটক, শর্টফিল্ম ও ওয়েব সিরিজে পয়সা ঢালছে। মুঠোফোনের অ্যাপস ও ইউটিউবে তাদের গান প্রকাশিত হয়। অ্যাপসগুলো থেকে মাসে রেভিনিউ আসে এক হাজার, দুই হাজার কিংবা বড়জোর পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করতেই গানের পাশাপাশি শর্টফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, নাটক প্রকাশ করছেন তারা। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী না হলে, আপনার গান যতই ভালো হোক না কেন, কানাকড়িও কেউ আপনার পেছনে খরচ করবে না।

সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘এখন অ্যালবাম তেমন আর প্রকাশ করা হয় না। একটা করে সিঙ্গেল গান প্রকাশিত হয়। অডিও কোম্পানি থেকে গান প্রকাশ হলে এককালীন টাকা দেওয়া হয়। এরপর, গানটা নিয়ে আর কী হয় সেটা জানি না। ইউটিউব থেকে এখন পর্যন্ত খুব বেশি আয় শুরু হয়নি। বিষয়টা আমাদের জন্য নতুন। তবে, এটা সত্য স্টেজ শো করেই শিল্পীদের চলতে হচ্ছে।’

সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘সব কিছুইরই ভালো-মন্দ দিক থাকে। এসব ডিজিটালাইজেশনের মন্দ ধাক্কাটা আমাদের শিল্পীদের বিপদেই ফেলে দিয়েছে। মঞ্চই একমাত্র উপার্জনের উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন শিল্পীরা কিভাবে কাজ করবে এটা ভয়ংকর কঠিন প্রশ্ন এবং উত্তর তার চেয়েও কঠিন। আমি চাই, নতুনরা যেন গানকে পেশা হিসেবে নিতে পারেন।’

সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘আমার নিজের গাওয়া ‘রেশমী চুড়ি’ গানটার জন্য ইউটিউব থেকে কিছু অর্থ পেয়েছি। শিল্পীদের জন্য এখন নতুন প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব। নতুন শিল্পীদের জন্য বিষয়টা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এখন আমাদের উপার্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন স্টেজ শো। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি কনটেন্টের ওয়াচ টাইমের ওপর ইউটিউব সিপিএম (প্রতি হাজারে কস্ট) নির্ভর করে। এজন্য স্বল্পদৈর্ঘ্যের মিউজিক ভিডিওর চেয়ে দীর্ঘ (ন্যূনতম ১০ মিনিট) কনটেন্টের দিকে সবাই আগ্রহী হচ্ছেন। তবে মিউজিক ভিডিওর ক্ষেত্রে নতুন টার্ম হচ্ছে প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট। এছাড়া কো-স্পন্সর নিয়েও অনেক ভালো মিউজিক ভিডিও তৈরি হচ্ছে। সুতরাং গান ও মিউজিক ভিডিওকে টিকিয়ে রাখতে হলে লেবেলগুলোর পাশাপাশি স্পন্সর কোম্পানিগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। শুধু ইউটিউবের মুনাফার দিকে নির্ভর করে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English

To maintain a stock fund, board spent millions on meetings

What does it take to manage  undistributed money of stock investors and hand it over to rightful recipients? You appear to be wrong if the answer is simply sincere effort.

1h ago