রেকর্ডে তোলপাড় করা বাংলাদেশের ইনিংস

liton and tamim final
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন লিটন দাস। সেখানেই ক্ষান্ত হলেন না, ইনিংসটিকে টেনে নিলেন বহু দূর। গড়লেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী তামিম ইকবালও টানা দ্বিতীয় ম্যাচে স্পর্শ করলেন তিন অঙ্ক।

দুজনে মিলে গড়লেন ওয়ানডেতে যে উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। তাদের চোখ জুড়ানো ব্যাটিংয়ে চা বাগানে ঘেরা নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা তো বটেই, ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই পেলেন নিখাঁদ বিনোদন। জিম্বাবুয়ের বোলারদের কচুকাটা করে চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিলেন তামিম-লিটন। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজার বিদায়ী ম্যাচে রেকর্ড বই তোলপাড় করল বাংলাদেশ।

শুক্রবার (৬ মার্চ) বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে বৃষ্টির কারণে নেমে এসেছে ৪৩ ওভারে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিকরা ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৩২২ রান। আর ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে জিম্বাবুয়ে পেয়েছে ৩৪২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য।

মাঝে বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা বন্ধ ছিল ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট। দুদলের ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩৩.২ ওভারে বিনা উইকেটে ১৮২ রান। মাঠ প্রস্তুত হওয়ার পর ফের খেলা মাঠে গড়ালে বাংলাদেশ ৯.৪ ওভারে ৩ উইকেট খুইয়ে যোগ করে ১৪০ রান। এর মূল কৃতিত্ব লিটনের।তিনি ১৪৩ বলে ১৭৬ রান করেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১৬ চারের সঙ্গে ৮ ছক্কা মারেন তিনি। সবগুলো ছয়ই আসে বৃষ্টির বাধা পেরিয়ে ফের খেলা শুরু হলে। তিনি অবশ্য জীবন পান তিনবার। ব্যক্তিগত ১০২, ১২২ ও ১৪২ রানে।

একই ভেন্যুতে আগের ম্যাচে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই আগের ১৫৪ রানের কীর্তি ভেঙে ১৫৮ রান করে নতুন উচ্চতায় উঠে গিয়েছিলেন বাঁহাতি তারকা। কিন্তু তার রেকর্ড টিকল না তিনদিনও! ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিকে লিটন দান করলেন আলাদা মহিমা। এই ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে এক হাজার রানও পূরণ করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

তামিম ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান। এই সংস্করণে টানা দুই ম্যাচ সেঞ্চুরির কীর্তি এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো করলেন তিনি। সিরিজের আগের ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। এদিনও ব্যাটিংয়ে আলো ছড়িয়ে তিনি ১০৯ বলে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে ঢাকায় টানা দুই ম্যাচে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন তামিম।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইনিংসের শুরু থেকেই তামিম ছিলেন সাবলীল। আগের ম্যাচে স্বস্তির সেঞ্চুরি পাওয়ায় তার মাঝে যে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে, তা এদিন ব্যাট হাতে বুঝিয়ে দেন দেশসেরা ওপেনার। লিটন শুরুতে ছিলেন সাবধানী। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যাট হয়ে ওঠে তরবারি। লিটন সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১১৪ বলে, এরপর তামিম ৯৭ বলে একই লক্ষ্যে পৌঁছান।

লিটন-তামিম মিলে ওপেনিং জুটিতে ৪০.৫ ওভারে যোগ করেন ২৯২ রান। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০ ওভারের সংস্করণে যে কোনো উইকেট এটি সবচেয়ে বেশি রানের জুটির রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দখলে। তারা ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ২২৪ রান যোগ করেছিলেন তিনি।

কেবল বাংলাদেশের নয়, ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেছে তামিম-লিটনের স্মরণীয় জুটি। তাদের সম্মিলিত ২৯২ রান ওপেনিংয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাদের আগে আছে কেবল জন ক্যাম্পবেল-শেই হোপ (৩৬৫ রান) ও ইমাম উল হক-ফখর জামান (৩০৪) জুটি। আর যেকোনো উইকেট বিবেচনায় নিলে তামিম-লিটনের জুটির রান ওয়ানডে ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ।

১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে লিটন মারেন ৮টি ছক্কা। তিনি ভেঙে দিয়েছেন তামিমের রেকর্ড। লিটনের ওপেনিং সঙ্গী ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হাঁকিয়েছিলেন ৭টি ছক্কা। সবমিলিয়ে এদিন বাংলাদেশ মেরেছে ১৪ ছক্কা। এটিও রেকর্ড। ম্যালাহাইডে গেল বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের ১১ বার ছক্কা মেরে সীমানাছাড়া করেছিল টাইগাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ৩২২/৩ (তামিম ১২৮*, লিটন ১৭৬, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ৭; মুম্বা ৩/৬৯, শুমা ০/৪৮, সিকান্দার ০/৬৪, মাধেভেরে ০/২৯, টিরিপানো ০/৬৫, উইলিয়ামস ০/৪৬)।

Comments

The Daily Star  | English

Govt issues notification banning AL activities

A Public Security Division joint secretary confirmed the matter

38m ago