প্রিয় অধিনায়ককে জয় দিয়ে বিদায় দিল বাংলাদেশ

লিটন দাসের রেকর্ড ইনিংস ও তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ চড়ল রানের পাহাড়ে। গড়া হলো একগাদা রেকর্ড। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাইজুল ইসলামরা জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে দিলেন অল্প রানে। টানা তিন জয়ে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। নেতৃত্বের বিদায় বেলায় মাশরাফি বিন মর্তুজা পেলেন দারুণ তৃপ্তি।

লিটন দাসের রেকর্ড ইনিংস ও তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ চড়ল রানের পাহাড়ে। গড়া হলো একগাদা রেকর্ড। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাইজুল ইসলামরা জিম্বাবুয়েকে গুঁড়িয়ে দিলেন অল্প রানে। টানা তিন জয়ে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। নেতৃত্বের বিদায় বেলায় মাশরাফি বিন মর্তুজা পেলেন দারুণ তৃপ্তি।

শুক্রবার (৬ মার্চ) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ১২৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারণে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ৩২২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় টাইগাররা। এরপর বৃষ্টি আইনে জিম্বাবুয়ের সামনে দাঁড়ায় ৩৪২ রানের বিশাল লক্ষ্য। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৩৭.৩ ওভারে তারা পৌঁছাতে পারে ২১৮ রান পর্যন্ত।

শেষবারের মতো বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করতে নেমে দারুণ এক মাইলফলক গড়লেন মাশরাফি। বাংলাদেশের প্রথম দলনেতা হিসেবে ওয়ানডেতে জয়ের হাফসেঞ্চুরি করলেন তিনি। ৮৮ ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফির জয় ঠিক ৫০টি।

জিম্বাবুয়েকে টানা চতুর্থ ও সবমিলিয়ে পঞ্চমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এই সাফল্যের সবগুলো নজির লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা গড়েছে ঘরের মাঠে।

এদিন বড় কোনো জুটি না গড়তে পারলেও ইনিংস জুড়ে জিম্বাবুয়ের রান তোলার গতি ছিল বেশ। ধারাবাহিকভাবে ওভারপ্রতি ৬ বা তার কাছাকাছি রান করেছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্যটা তাদের নাগালের বাইরে থেকে যায়।

ইনিংসের চতুর্থ বলেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। মাশরাফির আউট সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউই। ব্যাট হাতে বাজে একটি সিরিজ কাটানো ব্রেন্ডন টেইলরকে এদিনও টিকতে দেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ২৮ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

আরেক ওপেনার রেগিস চাকাভা ও অধিনায়ক শন উইলিয়ামস মিলে সচল রাখেন রানের চাকা। ১৪তম ওভারে আক্রমণে আসা অভিষিক্ত আফিফ হোসেন দ্বিতীয় বলেই ভাঙেন জুটি। অফ স্টাম্প হারানো উইলিয়ামসের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ বলে ৩০ রান। ৪৬ রানের এই জুটি হয়ে থাকে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের সর্বোচ্চ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক সিরিজে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা ওয়েসলি মাধেভেরে আরও একবার আলো ছড়ান। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ চতুর্থ উইকেটে চাকাভার সঙ্গে ৩৯ ও পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার রাজার সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি গড়েন।

চাকাভাকে বোল্ড করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। ৪৫ বলে তার সংগ্রহ ৩৪ রান। আর ৪২ বলে ৪২ রান করে মাধেভেরে হন সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটের ফাঁদে পড়েন রিচমন্ড মুটুমবামি। এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের কাটারে কাটা পড়েন টিনোটেন্ডা মুটমবোডজি। ২৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট খুইয়ে লড়াই থেকে একেবারে ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ে।

আগের ম্যাচে ঝড় তুলে বাংলাদেশকে ভড়কে দিয়েছিলেন পেসার ডোনাল্ড টিরিপানো। এদিনও মোস্তাফিজের এক ওভারে দুই ছক্কা মেরে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দারুণ কিছুর। কিন্তু তাকে এগোতে দেননি তাইজুল। মোস্তাফিজের বলে লিটনের হাতে জীবন পেয়েও তিনি সাজঘরে ফেরেন ১৮ বলে ১৫ রানে।

হারের ব্যবধান কমাতে লড়ে যাচ্ছিলেন রাজা। ৫০ বলে ৬১ রান করা এই ডানহাতিকে বিদায় করার পরের বলে চার্লটন শুমাকে বোল্ড করে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে দেন সাইফউদ্দিন। তিনি আগামী ম্যাচে নামবেন হ্যাটট্রিকের সুবাস নিয়ে। সবমিলিয়ে সাইফউদ্দিনের শিকার ৪১ রানে ৪ উইকেট। তাইজুলের ঝুলিতে গেছে ২ উইকেট।

এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসের মাঝে বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা বন্ধ ছিল ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট। দুদলের ক্রিকেটাররা মাঠ ছাড়ার আগে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ছিল ৩৩.২ ওভারে বিনা উইকেটে ১৮২ রান। মাঠ প্রস্তুত হওয়ার পর ফের খেলা মাঠে গড়ালে বাংলাদেশ ৯.৪ ওভারে ৩ উইকেট খুইয়ে যোগ করে ১৪০ রান। এর মূল কৃতিত্ব লিটনের। তিনি ১৪৩ বলে ১৭৬ রান করেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১৬ চারের সঙ্গে ৮ ছক্কা মারেন তিনি। সবগুলো ছয়ই আসে বৃষ্টির বাধা পেরিয়ে ফের খেলা শুরু হলে। তিনি অবশ্য জীবন পান তিনবার। ব্যক্তিগত ১০২, ১২২ ও ১৪২ রানে।

একই ভেন্যুতে আগের ম্যাচে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই আগের ১৫৪ রানের কীর্তি ভেঙে ১৫৮ রান করে নতুন উচ্চতায় উঠে গিয়েছিলেন বাঁহাতি তারকা। কিন্তু তার রেকর্ড টিকল না তিনদিনও! ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিকে লিটন দান করলেন আলাদা মহিমা। এই ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে এক হাজার রানও পূরণ করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

তামিম ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখান। এই সংস্করণে টানা দুই ম্যাচ সেঞ্চুরির কীর্তি এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো করলেন তিনি। সিরিজের আগের ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। এদিনও ব্যাটিংয়ে আলো ছড়িয়ে তিনি ১০৯ বলে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে ঢাকায় টানা দুই ম্যাচে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন তামিম।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইনিংসের শুরু থেকেই তামিম ছিলেন সাবলীল। আগের ম্যাচে স্বস্তির সেঞ্চুরি পাওয়ায় তার মাঝে যে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে, তা এদিন ব্যাট হাতে বুঝিয়ে দেন দেশসেরা ওপেনার। লিটন শুরুতে ছিলেন সাবধানী। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যাট হয়ে ওঠে তরবারি। লিটন সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১১৪ বলে, এরপর তামিম ৯৭ বলে একই লক্ষ্যে পৌঁছান।

লিটন-তামিম মিলে ওপেনিং জুটিতে ৪০.৫ ওভারে যোগ করেন ২৯২ রান। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০ ওভারের সংস্করণে যে কোনো উইকেট এটি সবচেয়ে বেশি রানের জুটির রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দখলে। তারা ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ২২৪ রান যোগ করেছিলেন তিনি।

কেবল বাংলাদেশের নয়, ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেছে তামিম-লিটনের স্মরণীয় জুটি। তাদের সম্মিলিত ২৯২ রান ওপেনিংয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাদের আগে আছে কেবল জন ক্যাম্পবেল-শেই হোপ (৩৬৫ রান) ও ইমাম উল হক-ফখর জামান (৩০৪) জুটি। আর যেকোনো উইকেট বিবেচনায় নিলে তামিম-লিটনের জুটির রান ওয়ানডে ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ।

১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে লিটন মারেন ৮টি ছক্কা। তিনি ভেঙে দিয়েছেন তামিমের রেকর্ড। লিটনের ওপেনিং সঙ্গী ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হাঁকিয়েছিলেন ৭টি ছক্কা। সবমিলিয়ে এদিন বাংলাদেশ মেরেছে ১৪ ছক্কা। এটিও রেকর্ড। ম্যালাহাইডে গেল বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের ১১ বার ছক্কা মেরে সীমানাছাড়া করেছিল টাইগাররা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ৩২২/৩ (তামিম ১২৮*, লিটন ১৭৬, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ৭; মুম্বা ৩/৬৯, শুমা ০/৪৮, সিকান্দার ০/৬৪, মাধেভেরে ০/২৯, টিরিপানো ০/৬৫, উইলিয়ামস ০/৪৬)

জিম্বাবুয়ে: (লক্ষ্য ৩৪২) ৩৭.৩ ওভারে ২১৮ (কামুনহুকামউই ৪, চাকাভা ৩৪, টেইলর ১৪, উইলিয়ামস ৩০, মাধেভেরে ৪২, রাজা ৬১, মুটুমবামি ০, মুটমবোডজি ৭, টিরিপানো ১৫, মুম্বা ৪*, শুমা ০; মাশরাফি ১/৪৭, সাইফউদ্দিন ৪/৪১, মিরাজ ০/৪৭, মোস্তাফিজ ১/৩২, আফিফ ১/১২, তাইজুল ২/৩৮)।

ফল: বাংলাদেশ রানে ১২৩ জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: লিটন দাস।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। 

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago