শতবর্ষী মায়ের মানবেতর জীবন!
একটি জীর্ণ-শীর্ণ ঘরের মেঝেতে ধানের খড়ের ওপর পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকেন রেণু বালা শীল। বয়স প্রায় ১০০ বছর। বড় ছেলে মারা গেছেন। অন্য দুই সন্তানের কারো বাড়িতেই ঠাঁই মেলেনি তার।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব দাশরা নাগ বাড়িতে থাকেন শতবর্ষী নারী রেণু বালা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, রেণু বালা শীলকে একটি আধভাঙা ঘরে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে।
দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক যেতেই তালা খুলে দেন রেণু বালার প্রয়াত বড় ছেলের স্ত্রী বেলা শীল।
তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ির বয়স এখন প্রায় ১০০ বছর। আমার ছেলে সঞ্জিত শীল একটি সেলুনে কাজ করে। সেই আয়েই স্ত্রী, কন্যা ও আমাকে নিয়ে তার সংসার। সাধ্যমতো শাশুড়ির দেখাশোনা করছি।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন রেণু বালা। কথা বলতে কিংবা চলাফেরা করতে পারেন না। তার মেজ ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী। মানিকগঞ্জ শহরে স্বর্ণের দোকান আছে। ছোট ছেলে থাকেন ভারতে।
দুই সন্তানের কারো বাড়িতে ঠাঁই না মেলায় নাতি সঞ্জিত শীলের আশ্রয়ে থাকছেন তিনি। সেলুনে কাজ করে যে সীমিত আয়, তা দিয়েই চলছে সঞ্জিত শীলের স্ত্রী-সন্তান, মা ও দাদির ভরণপোষণ।
সঞ্জিত শীল বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমি নিজেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু, দাদিকে তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। যতটুকু সম্ভব করছি।’
রেণু বালা শীলের মেজ ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু, মায়ের বয়স হয়ে যাওয়ায় নানা ধরনের সমস্যায় স্ত্রীর সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়। সে কারণে মা এখন আমার বাসায় থাকছেন না।’
অন্যদিকে, শতবর্ষী রেণু বালার মানবেতর জীবন দেখে তাকে সহায়তা করতে চান প্রতিবেশীরা। কিন্তু, তাকে তালাবদ্ধ ঘরে রাখায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিবেশীরা বলছেন, শতবর্ষী রেণু বালার যত্নের প্রয়োজন। তারা যত্ন করতে চান। কিন্তু, পুত্রবধূ ঘরে তালা দিয়ে রাখায় তারা কোনো সহায়তা করতে পারছেন না।
রেণু বালাকে যাতে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা না হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রতিবেশীরা।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতাম না। খোঁজ-খবর নিয়ে আমি তার সব দায়-দায়িত্ব নেব।’
Comments