স্যানিটারি ন্যাপকিন এখনো বেশিরভাগ নারীর সামর্থ্যের বাইরে

বাংলাদেশে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বাজার।

বেশি দাম ও সচেতনতার অভাবে দেশের ৮০ শতাংশ নারী পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারেন না। ফলে, নানা ধরনের স্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়ছেন নারীরা।

স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে অনিয়মিত ব্যবহারকারীসহ মোট ১৪ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন। এখন ব্যবহার করেন ২০ শতাংশ।

ভারতে মানসম্পন্ন একটি স্যানিটারি প্যাডের মূল্য ৯ টাকা ১৪ পয়সা। বাংলাদেশে প্রায় ১২ টাকা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি বলেন, ‘এটা ঠিক, প্যাড ব্যবহারে যে খরচ হয় সেটি তুলনামূলক বেশি। তবে, অনেকেই ভাবেন এটা অতিরিক্ত খরচ। কিন্তু, এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে সেটি তারা বোঝেন না।’

স্যানিটারি ন্যাপকিনের দামও বিবেচনার বিষয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে তিন জন নারী। তাই আমাদের মাসে খরচ বেশি হয়।’

‘এ ছাড়া, নারীরা এখনো দোকান থেকে স্যানিটারি প্যাড কিনতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। কারণ, প্যাড কিনতে গেলে অনেকেই বাঁকাচোখে তাকায়। স্যানিটারি ন্যাপকিনের গুরুত্বের বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

যেসব উদ্যোক্তা স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি প্যাড তৈরি করেন, তাদের সহায়তা করছে ‘ইলা প্যাড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা মামুনুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক ট্যাবুর কারণে এ বিষয়ে মানুষ কথা বলতে চায় না। স্যানিটারি প্যাড কেনার সময় মানুষ সেটাকে প্যাকেট করে দিতে বলে। যাতে তিনি কী নিয়ে যাচ্ছেন, তা কেউ না বুঝতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আগের প্রজন্মের নারীরা এখনো পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহারের পরামর্শ দেন।’

নারীরা যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে, এ লক্ষ্যে ব্যাপকহারে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া, স্বল্পমূল্যে প্যাড তৈরিতে সরকারকে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

‘যারা বিভিন্ন গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় দিয়ে স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন, তাদের জন্য এসব ঝুট কাপড় সংগ্রহ করা অনেক কষ্টসাধ্য।’

সরকার যদি স্যানিটারি ন্যাপকিনে ভর্তুকি দেয়, তাহলে প্যাড ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন অধ্যাপক নীলোর্মি।

দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে প্যাড আমদানিতে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক কর আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে, স্যানিটারি বাজারের ৯০ শতাংশই দেশীয় উৎপাদকদের দখলে।

সূত্র জানায়, স্যানিটারি ন্যাপকিনের বাজার ২০০৮ সালে ২৫ কোটি থাকলেও ২০১৯ সালে বেড়ে ৩৫০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।

‘যেহেতু বাজার বিস্তৃত হচ্ছে, তাই স্যানিটারি প্যাড উৎপাদনে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু, তা হচ্ছে না। বরং দিনকে দিন দাম আরও বাড়ছে’, বলেন নীলোর্মি।

নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করার পেছনে দাম প্রধান কারণ—এ মতের সঙ্গে একমত নন স্কয়ার টয়লেট্রিজের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান জেসমিন জামান।

তিনি বলেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন বাবদ মাসে একজন নারীর সর্বোচ্চ ৫০ টাকা খরচ হবে। এটি খুব বেশি না। কারণ প্রসাধনীর জন্য তারা আরও বেশি ব্যয় করেন। ন্যাপকিন ব্যবহার কম হওয়ার পেছনে অভ্যাস, সচেতনতা ও দাম— এ তিনটি মূল কারণ।’

জেসমিন বলেন, ‘স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে ফেমিনা নামে স্বল্পমূল্যে প্যাড তৈরি করছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ। ফেমিনা প্যাড থেকে তারা কোনো মুনাফা নিচ্ছে না।’

সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে ও সচেতনতা বাড়াতে গত এক দশকে অন্তত ৫০ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীকে পিরিয়ড বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ। এ ছাড়া, টোল ফ্রি টেলিসার্ভিসের ব্যবস্থাও করেছে কোম্পানিটি। যেখানে ফোন করে নারীরা বিনা মূল্যে পরামর্শ পাবেন।

এ ছাড়া, এসিআই, বসুন্ধরা ও এসএমসি’র মতো বড় কোম্পানিগুলো এ ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান প্যাড উৎপাদন ও স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago