রেলপথ আগলে নিরাপত্তা দিচ্ছেন ফাতেমা

ফাতেমা বেগম

সমাজের বাঁকা চাহনি-কুমন্তব্যের মুখে পড়লেও হার মানেননি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সোনাপুর রেলগেটের গেইট কিপার ফাতেমা বেগম। গত বছরের নভেম্বর থেকে রেলপথ আগলে রাস্তার মানুষের নিরাপত্তা দিচ্ছেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘কেবল স্বামীর উপার্জনে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব। আমার মেয়ে খাদিজা নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে সোহান পড়ছে সপ্তম শ্রেণিতে। বেতনের টাকায় ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি।’

ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় ফাতেমা (৩৪)। নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেছেন। স্বামীর উপার্জনের টাকায় চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালানো কঠিন হয়ে পড়লে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

ফাতেমা বলেন, ‘২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটের ছাতক রেলপথে কাজে যোগ দেই। গত বছর নভেম্বর থেকে কুলাউড়া উপজেলার সোনাপুর রেলগেটে কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী হিসেবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেটম্যানের কাজ করব বিষয়টি আমার কাছে প্রথমে খারাপ লেগেছিল। লোকজন আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের কুমন্তব্য করত। আত্মসম্মানে লাগলেও সবকিছু সহ্য করতাম। আর কোনো উপায় ছিল না। চাকরি না করলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। সবকিছু বিবেচনা করেই আমি এই কাজে যোগ দেই।’

অভাবের সংসারের হাল ধরতেই চাকরির সন্ধানে ছুটতে হয়েছে ফাতেমাকে। রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগে একাধিক বার আবেদন করেছিলেন। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। কিন্তু, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে পারেননি। শেষে গেটকিপার পদে পরীক্ষায় নির্বাচিত হন।

‘চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনরা অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। কেউই আমার এই পদে চাকরি করাটা মেনে নেয়নি।’ 

ফাতেমা আরও বলেন, ‘এখানে লজ্জা বা খারাপ লাগার কিছুই নেই। পৃথিবীতে কোন কাজকেই ছোট করে দেখা ঠিক না।’

তিনি জানান, কাজের জায়গায় উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সব নারীই নিজ নিজ অবস্থান থেকে উপার্জন করতে পারবে। প্রবল মনোবল, আগ্রহ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে নারীদের যেকোনো পেশায় আসা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English

Govt looking to defuse trade tensions with India

Bangladesh does not want any further escalation in tension with India, as the recent retaliatory moves are affecting bilateral trade

8h ago