নতুন করোনাভাইরাসে শঙ্কা কতটা?

বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ এ তিন জন রোগী সনাক্তের কথা ঘোষণা করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তার অনেক কিছুই আছে।
coronavirus
ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ এ তিন জন রোগী সনাক্তের কথা ঘোষণা করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তার অনেক কিছুই আছে।

তবে কয়েকটা দিক আপনাকে সাহস জোগাবে। যেমন— এই ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হয় তাদের প্রায় ৮২ শতাংশই সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো ভালো হয়ে যায়। আর প্রায় ১৫ শতাংশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়। শুধু ২ দশমিক ৩ শতাংশের মৃত্যু হয়। আর যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের অধিকাংশই বয়স্ক ও আগে থেকেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, যেটাকে কো-মরবিডিটি বলে। গত দুই মাসে এই ভাইরাস সারা পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। ছড়িয়েছে শতাধিক দেশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চীনের যৌথ মিশন সেদেশের আক্রান্ত ও মৃতদের তথ্য বিশ্লেষণ করে যে তথ্য দিয়েছে তাতে বোঝা যায়, এটি সার্স কিংবা মার্সের মতো মরণঘাতী নয়। আক্রান্তদের ৭৮ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৬৯ বছর। অন্যদিকে, নতুন এই ভাইরাসে মৃতদের ৮৭ শতাংশই ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী। যাদের বয়স ১০ থেকে ৩৯ তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার মাত্র ০ দশমিক ২ শতাংশ; ৪০ থেকে উপরে মৃত্যুর হার ০ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫০ থেকে উপরে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, আর ৮০ বা  উপরে যাদের বয়স তাদের মৃত্যুর হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত ততটা ঝুঁকি তৈরি করছে না।

সুতরাং সিদ্ধান্ত আপনার কতটা ভীত হবেন?

আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা হচ্ছে প্রাথমিক লক্ষণ। কিন্তু, এই লক্ষণগুলো থাকলেই যে কোভিড-১৯ সেটা ভাবার কোন কারণ নাই। শুধুমাত্র তখনই সন্দেহ করবেন যদি আপনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারো নিবিড় সংস্পর্শে এসে থাকেন। সুতরাং অযথা ভয়ের কিছু নাই।

ধরুন, আপনার পাশের বাড়িতে রোগী আছে। সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে আপনি আক্রান্ত হবেন না। কারণ, ভাইরাসটি কোনো তরল কণার মাধ্যমে বাহিত হয়ে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় ঢুকতে হবে, নচেৎ নয়। তাহলে কোনো রোগী দেখলেই পালানোর দরকার নাই। রোগী থেকে তখনি ছড়াবে যখন নিকট-সংযোগে (Close Contact) যাবেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, রোগী থেকে নিরাপদ দূরত্ব হলো তিন ফুট। এর কারণ কি? কারণ হলো অন্যান্য ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসও Droplet বা জলকণার মতো কোনো বাহন ছাড়া ছড়ায় না। কোথাও কোনো রোগী নিশ্চিত হলে প্রথম কাজ হলো রোগীকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে রাখা। রোগীর সঙ্গে নিবিড় সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তিকেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন বা আলাদা করে রাখা। দুটোর উদ্দেশ্যই হলো নতুন করে অন্য কারো মধ্যে সংক্রমণ ঠেকানো। চৌদ্দ দিনের কারণ হলো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে লক্ষণ প্রকাশে ২ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে।

এজন্য শুধু সতর্ক থাকতে হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রোগীকে আলাদা করতে হবে- নির্দিষ্ট ঘরে বা অন্য কোথাও। রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিচর্যাকারীই ধরবেন; তবে উপযুক্ত হাতমোজা, মাস্ক এসব ব্যবস্থা নিয়ে। পরিচর্যা শেষে নিজেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

যদি রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয়, নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর এর হটলাইনে যোগাযোগ করুন। নম্বরগুলো হলো- +8801937000011 +8801937110011, +8801927711784।

বিশেষজ্ঞরা সবাইকে দিনে কয়েকবার বিশেষত খাবার আগে সাবার বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে বলেছেন। হাঁচি-কাশিতে টিস্যু দিয়ে মুখ ঢাকুন, তারপর নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলুন। টিস্যু না পেলে নিজের কনুই বাঁকা করে মুখ ঢাকুন; তবু হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি নয়। যদি হাঁচিতে মুখ না ঢাকেন, আপনার মুখ থেকে সামনের দিকে তিন ফুট পর্যন্ত ড্রপলেট ছড়াবে।  পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। আতঙ্ক নয়, সতর্কতা সবার আগে জরুরি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংক্রমণের মাত্রার উপর ভিত্তি করে চার স্তরের পরিস্থিতি বিবেচনার বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করে রেখেছে। হাসপাতাল প্রস্তুত করার পাশাপাশি প্রত্যেক উপজেলায় ইউএনও-র নেতৃত্বে ১০ সদস্যের ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই কমিটিগুলোই প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ বন্ধসহ নির্দিষ্ট এলাকা আবদ্ধ করা, কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র খোলা এসব ব্যবস্থা নেবে।

বিস্তারিত ইন্টারনেটের নির্ভরযোগ্য উৎসগুলো থেকে পাবেন, ঘুরে আসুন। জানুন, বুঝুন; জানান ও বোঝান।

মওদুদ আহম্মেদ সুজন, সাংবাদিক, ডেইলি স্টার

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

7h ago