বাজার থেকে যা উধাও
দেশে করোনাভাইরাসে তিন জন আক্রান্ত হওয়ার ঘোষণা আসার পর রাজধানীর ওষুধের দোকানগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আজ সোমবার রাজধানীর অন্তত আটটি এলাকায় পাইকারি ও খুচরা ওষুধের দোকানদার এবং ক্রেতা এই পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীর কাফরুলের ওষুধ ব্যবসায়ী হাসান আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল বিকেল থেকেই তার দোকানে উদ্বিগ্ন লোকজন ভিড় শুরু করেন। মাস্ক তার দোকানে আগে থেকেই কম ছিল। যে কয়েক বোতল হেক্সিসল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ফুরিয়ে যাওয়ার পর অনেক ক্রেতা শেষে স্যাভলন ও ডেটল কিনে নিয়ে গেছেন।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কালোবাজারিরা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার মধ্যেই বেশিরভাগ দোকানের স্যানিটাইজার ও মাস্ক শেষ হয়ে যাওয়ার নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে দালালের মাধ্যমে ৩৫ টাকার ৫০ মিলিলিটার হেক্সাসল ১০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়। দেশের ওষুধের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কালোবাজারি ঠেকানোর জন্য তারা সক্রিয় রয়েছেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দালালের মাধ্যমে গোপনে এই কাজ করছেন।
পুরান ঢাকার বাবুবাজারের আমির মার্কেটের একজন মাস্ক ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর কথা স্বীকার করে জানান, একবার ব্যবহারযোগ্য ফেস মাস্কের পাইকারি দাম গতকালও ছিল ১ টাকা ৪০ পয়সা। নিম্নমানের স্থানীয়ভাবে তৈরি এই মাস্ক বিক্রি করাই দায় ছিল তার। এখন এই মাস্ক ৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, পাকারিতে আড়াই টাকার ফেস মাস্কের দাম ৪০ টাকা পর্যন্ত চাইছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
বাবুবাজারের পাইকারি ওষুধ মার্কেটের এম ইসলাম সার্জিক্যাল নামের একটি দোকানের সামনে মাস্ক ফুরিয়ে যাওয়ার কথা লিখে রাখা হয়েছে। দোকান মালিক বলেন, ‘মাস্ক ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বললেও অনেকেই পীড়াপিড়ি করেন। ক্রেতারা বেশি দাম দেওয়ার প্রস্তাব করেন। বিরক্ত হয়ে দুপুরে এই নোটিশ লাগিয়ে দিয়েছি।’
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চীন থেকে আমদানি করা মাস্ক। গতকালও এই মাস্ক ৪০ টাকার বিক্রি হয়েছে। সামান্য যে কটি দোকানে ছিল সেটিও আজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়।
এই মার্কেটের চ্যালেঞ্জার মেডিসিনের সত্ত্বাধিকারী নুরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জন্য ক্রেতারা ভিড় শুরু করেন দোকানে। পাইকারি ব্যবসা হলেও চাহিদার কথা বিবেচনা করে খুচরা বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। তবে কারও কাছেই এক বোতলের বেশি বিক্রি করেননি। আশপাশের দোকানগুলোর মধ্যে একমাত্র তার দোকানেই সোমবার দুপুর পর্যন্ত স্যানিটাইজার ছিল।
এই দোকানের সামনে কথা হয় তেজকুনিপাড়া থেকে আসা ক্রেতা আবুল কালামের সঙ্গে। রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফার্মগেট, তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও রেলগেট ও তেজগাও রেল স্টেশন এলাকা ঘুরে কোনো দোকানে হেস্কাসল স্যানিটাইজার পাননি। আজ সোমবার সকালেও বিভিন্ন দোকানে খোঁজ করে না পেয়ে শেষে মিটফোর্ডে ওষুধের পাইকারি বাজারে আসেন তিনি। বিকেল পর্যন্ত তিনি স্যানিটাইজার কিনতে পারেননি তিনি।
হেক্সিসলের প্রস্তুতকারী এসিআই কোম্পানির একজন বিক্রয় প্রতিনিধি সরদার ড্রাগ-এর সত্বাধিকারী মো. জাকারিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইসলামপুর রোডে শতাধিক দোকানে হেক্সিসল সরবরাহ করেন তিনি। আজ ১০০ কার্টুন হেক্সিসলের অর্ডার দিয়েছিলেন। কিন্তু সরবরাহ পেয়েছেন মাত্র দুই কার্টুন। কোম্পানি থেকে বলা হয়েছে, হাসপাতালে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দোকানে সরবরাহ কমানো হয়েছে।
Comments