শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন সমাজকর্মী ফেরদৌসী বেগম

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পশ্চিম বড়ুয়া গ্রাম। কুসংস্কারে ঘেরা গ্রামটিতে ছিল না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। অহরহই হতো বাল্যবিয়ে। শিশু শ্রম নিয়ে কারো মাথাব্যথা ছিল না।
গ্রামের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ইতিহাসের কথা বলছেন সমাজকর্মী ফেরদৌসী বেগম। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পশ্চিম বড়ুয়া গ্রাম। কুসংস্কারে ঘেরা গ্রামটিতে ছিল না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। অহরহই হতো বাল্যবিয়ে। শিশু শ্রম নিয়ে কারো মাথাব্যথা ছিল না।

কিন্তু, ধীরে ধীরে গ্রামটি পরিণত হয়েছে আদর্শে। এখন সেখানে কোনো কুসংস্কার নেই। পরিবর্তন এসেছে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। সন্তানদের শিক্ষিত করতে এবং বাল্যবিয়ে ও শিশু শ্রমসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সচেতন স্থানীয়রা।

এসবই হয়েছে গ্রামটিতে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পর। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে— পশ্চিম বড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম বড়ুয়া রোটারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

স্থানীয়রা জানান, এক যুগ আগে গ্রামটিতে ভ্রমণ করেন কবি ও সমাজকর্মী ফেরদৌসী বেগম। গ্রামের অবস্থা দেখে এখানকার উন্নয়নে ছুটে আসেন তিনি। তিনি সচেষ্ট ভূমিকা রেখেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলেন। শিশুদের শিক্ষিত করতে গ্রামের মানুষকে করে তোলেন একাত্ম।

‘আমরা লেখাপড়া শিখতে পারি নাই। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া শেখাতে পারি নাই। কিন্তু, নাতি-নাতনিরা এখন পড়াশোনা করতেছে। ভালো লাগতেছে,’ এমনটি বলেন ওই গ্রামের ময়েজ উদ্দিন (৯৭)।

তিনি বলেন, ‘আগে শিক্ষার গুরুত্ব বুঝি নাই। এখন নাতি-নাতনিরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। এ ছাড়া, গ্রামে এখন আর কোনো কুসংস্কার নাই।’

একই গ্রামের সুবল চন্দ্র মোহন্ত (৯৮) অনেকটা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘গ্রামে অনেক বিত্তশালী আছেন। কিন্তু, তারা কখনোই গ্রামের মানুষের কথা ভাবেননি। তাদের ছেলে-মেয়েদের শহরে নিয়ে শিক্ষিত করেছেন। গ্রামের শিশুরা অশিক্ষার আঁধারে ডুবে ছিল।’

‘এখন গ্রামটিতে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। সবসময়ই লেখাপড়ার উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। কিন্তু, এক সময় শিশুরা বই-খাতার পরিবর্তে কোদাল-কাঁচি নিয়ে মাঠে কাজ করতো’, বলেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, সময় পেলেই গ্রামের বিদ্যালয় দুটিতে ছুটে আসেন কবি ও সমাজকর্মী ফেরদৌসী বেগম। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন। শুধু পাঠদানই নয়, শিক্ষার্থীদের বলেন ইতিহাসের কথা। শিক্ষার পাশাপাশি আদর্শ মানুষ হওয়ার মন্ত্রণা দেন শিক্ষার্থীদের।

ফেরদৌসীর ছোঁয়ায় গ্রামটিতে বাল্যবিয়ে বন্ধে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও সোচ্চার হয়েছে। স্কুলে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। তাদের পোশাক ও প্রয়োজনীয় বই, খাতা, কলম দিয়েও সহযোগিতা করছেন এই সমাজকর্মী।

শুধু শিশুদের শিক্ষিত করার কাজ করছেন না তিনি। পাশাপাশি দাঁড়াচ্ছেন সমাজের অবহেলিত, নিগৃহীত নারীদের পাশে। তার কারণেই গ্রামের বীরাঙ্গনারা স্বীকৃতি পেয়েছেন। ফেরদৌসি বেগম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন শীত, বন্যা ও খরাসহ নানা দুর্যোগে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দিকে।

সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা কবি ও সমাজকর্মী ফেরদৌসী বেগম লালমনিরহাট শহরের সাপ্টানা সড়কের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আয়েত আলী ভূঁইয়া ও প্রয়াত হাসনারা ভূঁইয়ার মেয়ে। তার স্বামী খুটামারা এলাকার প্রখ্যাত আইনজীবী মতিয়ার রহমান। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স ও লালমনিরহাট ল কলেজ থেকে এলএলবি করেছেন।

বেসরকারি একটি কোম্পানির হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ফেরদৌসি বেগম। তার আয়ের ৮০ শতাংশই ব্যয় করছেন সমাজসেবার কাজে।

সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক সাহিত্য পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন কবি ফেরদৌসী বেগম।।

ফেরদৌসী বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সামাজিক কাজে আমার স্বামী সব সময় অনুপ্রেরণা দেন এবং সহযোগিতা করেন। আমি যতদিন এ বাঁচবো, ততদিন সমাজের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে রাখবো। বিশেষ করে শিক্ষার আলো ছড়াতে আর নিগৃহীত নারীদের অধিকার পাইয়ে দিতে আমি সদা জাগ্রত থাকবো।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago