‘গরমে কমে, শীতে বাড়ে’ করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষকরা যা বলছেন

Coronavirus-1.jpg
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে নতুন করোনাভাইরাস। প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন সাধারণ ফ্লুয়ের জীবাণুর মতো গরমকালে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার কমে যাবে।

গবেষকদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। গবেষকরা বলছেন, মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের তুলনায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার বেশি। মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তের মৃত্যুর হার ০.১ শতাংশ এবং নতুন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ২ শতাংশ।

সাধারণ ফ্লুয়ের মতোই এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক, টিকা কিংবা সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কৃত না হওয়ায় করোনাভাইরাস ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা এখনো আশা করছেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। যদিও নিশ্চিত তথ্য নেই তাদের কাছে।

মার্কিন সামরিক মেডিকেল গবেষক নেলসন মাইকেল বলেন, ‘এটি একটি ফুসফুসের ভাইরাস। স্পষ্টত এটি প্রতিবছর শীতকালেই ছড়াতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবাই বাসায় বন্দি। কেউ বের হচ্ছেন না। দরজা-জানালাও বন্ধ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মৌসুমি জ্বরও আমরা এইভাবেই মোকাবেলা করি।’

ইনফ্লুয়েঞ্জা শীতকাল ও শুষ্ক আবহাওয়াতেই বেশি ছড়ায়। উত্তর গোলার্ধের বেশিরভাগ অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি শীতকালীন মৌসুমি রোগ। মাইকেল জানান, নতুন করোনাভাইরাস যদি ফ্লুর মতো আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ছড়ায়, তবে এর প্রাদুর্ভাব প্রতি গ্রীষ্মে কমে এলেও শরৎ ও শীতকালে বাড়তে পারে।

যদি এ বছর গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটির সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে, তবে পরের মৌসুমের আগ পর্যন্ত গবেষকদের হাতে টিকা তৈরি করার সময় আছে।

মাইকেল বলেন, ‘আর এ কারণেই আমাদেরকে ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। গরমে সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর পরের মৌসুমে এটি ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই প্রস্তুত হতে হবে।’

এই মতে ভরসা রাখা যাচ্ছে না বলে জানান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বেশ কয়েকটি গবেষণা দল।

সিঙ্গাপুরের মতো গরম আবহাওয়ার দেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মতো গরম আবহাওয়ার দেশেও বেশ কয়েকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই নতুন করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লুয়ের মতো আচরণ নাও করতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন গবেষক। বছর জুড়েই এর সংক্রমণ হার একইরকম থাকার সম্ভাবনাও আছে বলে জানান তারা।

ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, প্রাথমিক গবেষণায় নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় করোনাভাইরাসের সক্রিয় হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চল- চীনের উহান, ইরান, ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান প্রায় একই অক্ষাংশে। এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে আবহাওয়ার মিলও আছে। এসব তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে মানচিত্রে অঞ্চলের অবস্থান নির্ণয় করে কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে আসন্ন প্রকোপের ঝুঁকির জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

প্রাথমিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ভাইরাসটি শীতকালে সক্রিয় হয়। তবে, গরম আবহাওয়ায় কতখানি বিস্তার করবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর গড় তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও অক্ষাংশের অবস্থান একইরকম হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়, শীতকালে এক মাসের মধ্যে ভাইরাসটি এইসব অঞ্চল থেকেই ছড়িয়ে পড়বে। তবে অন্যান্য ঋতুতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার কতখানি হবে সেটি এখনো অজানা।

নিউইয়র্কের সায়েরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ব্রিটানি মুশ বলেন, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্যান্য করোনাভাইরাস মানবদেহে একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে ছড়ায়। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না, কোভিড-১৯ একইরকম কোনো মৌসুমি রোগ কি না। এত দ্রুত কারো পক্ষেই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না যে গরমকালে এটির প্রাদুর্ভাব কমে যবে, শীতকালে বাড়বে। তাই এই ধরনের তথ্য মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। এখন সবারই উচিত সতর্ক থাকা।’

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago