করোনাভাইরাস: ঢাবির কোনো হলে সাবান-হ্যান্ডওয়াশ আছে, কোনো হলে নেই
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। মহামারি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে আক্রান্ত দেশগুলো। সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রতিবেশী ভারতসহ ইউরোপের অনেক দেশ স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রয়োজন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৩৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী করোনাভাইরাস আতঙ্কে রয়েছেন। ১৮টি আবাসিক হলে সাড়ে ১২ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থী আছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার ব্যাপারে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী।
‘ঢাবির একজন শিক্ষার্থী কোনোভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করবে’ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরে থাকার সতর্কবার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা। এমতাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি কী, গতকাল সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম কয়েকটি হলে। কথা হয়েছে একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে।
ছেলেদের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হল, কবি জসীমউদ্দীন হল, বিজয় একাত্তর হল ও জগন্নাথ হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের হলের টয়লেটে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ নেই। হল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এমন কিছু সরবরাহ করেনি।
কবি জসীমউদ্দীন হলের শিক্ষার্থী আসিফ করিম চৌধুরী বলেন, ‘ক্যান্টিনে টুকরো সাবান আছে। হলের টয়লেট খুবই অপরিষ্কার। সেখানে কোনো ধরনের সাবান রাখা হয়নি।’
‘কোন উপায় না পেয়ে আমার হলের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান কিনে এনে ব্যবহার করছে’, বলেন জগন্নাথ হলের সন্তোষচন্দ্র ভবনের শিক্ষার্থী সুপ্রিয় সাহা।
একই কথা জানিয়েছেন শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হল ও হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের একাধিক শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে হল কর্তৃপক্ষের নির্বিকার থাকা নিয়েও অভিযোগ করেছেন তারা।
ছেলেদের হলের তুলনায় মেয়েদের হলে কর্তৃপক্ষ কিছু পরিষ্কারক সামগ্রী সরবরাহ করলেও, সেগুলো অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শামসুন্নাহার হল ও বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ের বেসিনে সাবান থাকলেও, টয়লেটের বেসিনে কোনো সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী তানজুম তুষী বলেন, ‘তিন-চারদিন আগে হলের কর্মচারীরা রুমে রুমে এসে কেউ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত কি না খোঁজ নিয়েছেন। কয়েকজন অসুস্থ শিক্ষার্থীর রুম নম্বর ও তথ্য লিখে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এর বাইরে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। টয়লেটে কোনো সাবান নেই। হলের মেয়েরা ব্যক্তিগতভাবে সাবান ও স্যানিটাইজার কিনে এনে ব্যবহার করছে।’
শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি জানান, মেয়েরা ব্যক্তিগতভাবে সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে। টয়লেটে সাবান দেওয়া হয়নি।
এদিক থেকে ব্যতিক্রম দেখা গেল রোকেয়া হলে। হলের চারটি ভবনে টয়লেটের বেসিনে সাবান রাখা হয়েছে। হলের শিক্ষার্থী কনক ফারজানা বলেন, ‘হল কর্তৃপক্ষ সব টয়লেটেই সাবান রেখেছে। পাশাপাশি মেয়েরা নিজেদের মতো করে রুমে হ্যান্ডওয়াশ রেখেছে।’
রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘হলের মূল গেটের পাশে হ্যান্ডওয়াশ এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হচ্ছে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ভবনের গেটেও একই ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এ ছাড়াও হলের কর্মচারীদের মাস্ক বিতরণ ও ছাত্রীদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য আবাসিক শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, হল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সম্প্রতি সবগুলো টয়লেটেই পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী নাহিদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকেই নিয়মিত টয়লেট পরিষ্কার করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশ রাখা হচ্ছে।’
জিয়া হলের প্রতিটি রুমে হল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে টিস্যু ও হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হলের শিক্ষার্থী সাহাদ আমীন।
জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে একদিন হল পরিষ্কার করা হচ্ছে। সবগুলো রুমের শিক্ষার্থীদের এবং ৪৯ জন কর্মচারীকে হ্যান্ডওয়াশ দেওয়া হয়েছে। টয়লেটে অতিরিক্ত সাবান রাখা হচ্ছে।’
ছাত্রদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং কেউ অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে কারণে দুজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ছোট পরিসরে কোনো ওয়ার্কশপ করা যায় কি না বিবেচনা করছি।’
কলাভবনে মেয়েদের কমনরুমে সাবান রাখা হলেও, সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই ছেলেদের টয়লেটগুলোতে। তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আকিফ আহমেদ বলেন, ‘নিচতলায় ছেলেদের টয়লেটটি খুবই অপরিষ্কার। এখানে কখনোই সাবান রাখা হয় না।’
উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নীলা রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে মেয়েদের কমনরুমের বেসিনে নিয়মিত সাবান রাখা হচ্ছে।’
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সবকটি টয়লেটে সাবান রাখা হলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) নিচতলা ও দোতলার টয়লেট দুটির কোনোটিতেই কোনো সাবান ছিল না।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাগমা জাবিন বলেন, ‘টিএসসির টয়লেটে সাবান রাখা হলে সেই সাবান চুরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেয়ালে সংযুক্ত করে হ্যান্ডওয়াশের বক্স রাখা যেতে পারে। আর নিয়মিত টয়লেটগুলো পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত হ্যান্ডওয়াশ আছে কি না, তা দেখার জন্য একজন কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’
টয়লেট থেকে সাবান চুরির বিষয়ে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আনিকা বুশরার অভিযোগ, ‘হলের ৭ মার্চ ভবনের একটি টয়লেটে হল কর্তৃপক্ষ সাবান দেওয়ার পরপরই সেগুলো চুরি হয়ে যায়। আমার মনে হয়, দেয়ালে সংযুক্ত করে করে হ্যান্ডওয়াশের বক্স এবং টিস্যু রাখা উচিত।’
Comments