বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, বাড়ছে শঙ্কা
বর্ষা আসতে আরও মাস দুয়েকের বেশি বাকি। এরই মধ্যে গত বছরের এমন সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে সম্প্রতি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ২৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ জন।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গত বছর দেশে সবচেয়ে খারাপ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ বছরও এমন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এড়াতে অনতিবিলম্বে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। যাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৫৪৪ জন ছিলেন ঢাকার বাইরে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৯ জন মারা যান বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার একদল গবেষক নিয়ে তিন বছরের গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেছেন এডিস মশার উপর। তিনি জানান, এডিস মশার লার্ভার পরিমাণ গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি রয়েছে।
ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার উচ্চ ঘনত্ব দেখে তিনি জানান, ডেঙ্গু মৌসুমের আগে এটি একটি উদ্বেগজনক চিত্র।
গত বছরের মতো পরিস্থিতি এড়াতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে জনগণকে একত্রিত করা এবং তাদেরকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে জড়িত করা অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি বলেন, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) মতো সংস্থাগুলোর তাদের সদস্যদের নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলতে হবে।
তিনি আরও জানান, সিটি করপোরেশনগুলোকেও বছরব্যাপী এডিস মশা নিধনে কাজ করতে হবে।
জিওলজিকাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কীটতত্ত্ববিদ ডা. মনজুর চৌধুরী একমত পোষণ করে জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এখনই মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।
এডিস মশার বিস্তারের মাত্রা এখনও কম বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এটাই সঠিক সময়। বর্ষায় এটি আরও ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
মনজুর চৌধুরী আরও জানান, এরই মধ্যে গতবছরের তুলনায় চারগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া একটি অশুভ লক্ষণ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা জানান, তারা মশা মারতে এবং মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি প্রয়োগের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, ৭ মার্চ থেকে কিউলেক্স ও এডিস মশা প্রতিরোধের জন্য ডিএনসিসির ১১টি দল মশা নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন জমা দেবে।
ডিএনসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. এমদাদুল হক জানান, তারা সারা বছরই মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও রিহ্যাবের মতো বেসরকারি সংস্থাকে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া এবং জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও যোগ করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ জানান, তারা সারা বছর ধরেই মশার বংশ বিস্তার বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে কিউলেক্স মশার বংশবিস্তার বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ডিএসসিসির অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের পরে তারা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করবেন। অধিদপ্তরের চিহ্নিত এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে মেয়র সাঈদ খোকন ২৫ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া সাত দিনের এই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধন করেছেন বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসি মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজউক, রিহ্যাব, ডিএমপি, ওয়াসা ও বিডাব্লিউডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠিও দিয়েছে।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন জানান, তারা ইতিমধ্যে দুবার তাদের সব সদস্যকে চিঠি দিয়েছে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করার জন্য এবং তাদের নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিষ্কার রাখার জন্য।
Comments