বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব: প্রধানমন্ত্রী

পিআইডি ফাইল ফটো

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাওয়া অনুযায়ী নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মুজিব বর্ষ’ উদ্বোধনকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।’

আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’

বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত ভাষণে তিনি দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।’ 

বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা দেশের ভেতরে ও বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিক এবং একইসঙ্গে বিশ্ববাসীকে মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাত ৮টায় আতশবাজি প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুজিব বর্ষ উদযাপন শুরু হয়।

মুজিব বর্ষ উদ্বোধনের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।

এ দেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নামের এ দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা।’

এ বাংলায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে সংগ্রাম করেছেন আজীবন। ‘বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে ব্যথিত করত। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এ বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- তাই তিনি বঙ্গবন্ধু।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন। ‘অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তার জামাকাপড়, বই। যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। দুর্ভিক্ষের সময় গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সাথে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ, জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ঘাতকের নির্মম বুলেট বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নিয়েছে ও তার দেহ রক্তাক্ত করেছে। ‘তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের।’

বাংলাদেশের মানুষ আজ সত্যের অন্বেষণে জেগে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়।’

তিনি জানান, আজ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ উদযাপন করা হবে। ২০২১ সালে উদযাপিত হবে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মুজিব বর্ষ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মুজিব বর্ষ উদযাপন করব। একই কারণে বিদেশি অতিথিবৃন্দের সফর স্থগিত করা হয়েছে।’

তিনি মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানোই ভুটানের রাজা, নেপালের রাষ্ট্রপতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের মহাসচিব ও ওআইসি মহাসচিবকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম দেশ, ইউনেসকো ও ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিব বর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মুজিব বর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি- যারা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিব বর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।’

শেখ হাসিনা তার নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে দেশের সব বয়সের এবং শ্রেণি-পেশার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন গান সম্প্রচার করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago