দোটানায় আছেন ক্রিকেটাররা

খেলা বন্ধ, বন্ধ দলগুলোর আনুষ্ঠানিক অনুশীলনও। বন্ধের মাঝেও মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহি, ইবাদত হোসেনদের পাওয়া গেল মাঠে।
Mustafizur Rahman
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

‘খবর-টবর আনতে পারলেন ভাই? একটা কিছু জানান, তাহলে বাড়ি চলে যেতে পারি।’ চেনা সাংবাদিক দেখে মোস্তাফিজুর রহমান জানতে চাইলেন খেলা চালু হবে কি-না তার খবর। সবকিছু ঠিকঠাক চললে, এখন ব্যাট-বলের লড়াইয়েই থাকার কথা ছিল তাদের। সূচিতে এদিন ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত সব বন্ধ। ফের খেলা কবে চালু হবে, তা অনিশ্চিত। খেলা বন্ধ থাকলে ক্রিকেটাররা ঢাকায় থাকবেন, না-কি ফিরে যাবেন যার যার বাড়িতে, তা নিয়েও আছে দোলাচল।

খেলা বন্ধ, বন্ধ দলগুলোর আনুষ্ঠানিক অনুশীলনও। বন্ধের মাঝেও মোস্তাফিজ, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহি, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, ইবাদত হোসেনদের পাওয়া গেল মাঠে। আপাতত তারা ঢাকায় আছেন। ঢাকায় বসেই ফিটনেস ঠিক রাখবেন, না-কি বাড়ি চলে যাবেন, এই নিয়ে অনেকের মধ্যেই আছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।

আজ বুধবার মিরপুর একাডেমি মাঠ আর জিমনেশিয়ামে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার যার যার মতো ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন। আড্ডায়, আলাপে সবার মাঝেই একরকম অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার খবর আসছিল মোবাইলের স্ক্রিনে। ফিটনেস ট্রেনিং করে ফেরার পথে আবু জায়েদ শুনে বললেন, ‘ভাই, এখন সত্যিই ভয় লাগছে। আগে এতটা ভয় লাগেনি। আর কী করব তা-ও বুঝতে পারছি না। লিগ শুরু না হলে তো সিলেট চলে যেতাম। এখন যেতেও পারছি না, আবার থেকেই-বা কী করব।’

খালেদ ও ইবাদতও আছেন সেই প্রতীক্ষায়। ইবাদত জানালেন, খেলা চালু না হলে সিলেট গিয়ে রাহি আর খালেদের সঙ্গে কাজ করবেন তিনি।

তাইজুলের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ রানিং করার পর জিরিয়ে নিচ্ছিলেন মিঠুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। লিগ আর শিগগিরই শুরু না হলেও অনেকের মতো তার বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তার মতে, ঢাকাতে থাকলেই বরং নিরাপদ থাকা যাবে বেশি, ‘না, বাড়ি যাব না। কারণ চিকিৎসার দিক চিন্তা করলে ঢাকাতেই ব্যবস্থা ভালো। খেলা বন্ধ থাকলে তখন হয়তো বাসায় বসে ফিটনেস নিয়ে টুকটাক কাজ করতে হবে। এছাড়া কিছু করার নেই।’

মোস্তাফিজ আবার বাড়ি যাওয়ার খবরটা পেতেই যেন উদগ্রীব। এসেছিলেন বোলিং নিয়ে কিছু কাজ করতে। কিন্তু পুরো আবহ অনিশ্চয়তায় এমনটাই মোড়ানো যে ঠিকমতো কাজে মন বসাতে পারেননি। এর-ওর সঙ্গে আড্ডা, খুনসুটির সঙ্গে ঘুরেফিরে এসেছে বৈশ্বিক মহামারির প্রসঙ্গ।

প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের গ্রামগুলো এখন নিরাপদ নয়। সরকারের নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টিনে না থেকে অনেক প্রবাসীর অবাধ চলাফেরার গল্প চাউর হয়েছে। বাড়ি যাওয়ার যাত্রাপথও এখন শঙ্কামুক্ত নয়।

গত সোমবার ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে সব খেলা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিসিবির ঘোষণা একটু ভিন্ন। তারা জানায়, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ থাকবে কেবল দ্বিতীয় রাউন্ড। সূচিতে ১৮ ও ১৯ মার্চ হওয়ার কথা ছিল দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা। তবে ১৯ মার্চেই ফের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নতুন সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথাও জানায় বোর্ড।

সে সিদ্ধান্ত এখন অনেকটা হয়েই আছে বলা যায়। প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন আভাস দিলেন, শিগগিরই শুরু হচ্ছে না খেলা। তবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান এসেই দেবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। জানা গেছে, সেই সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে নেতিবাচক। অর্থাৎ এপ্রিলের আগে আর মাঠে লিগ ফেরার সম্ভাবনা নেই।

পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় ক্রিকেটাররাও এমন সিদ্ধান্তের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানান মেহেদী হাসান মিরাজ, ‘সবার আগে কিন্তু জীবন-মরণ। এর থেকে তো বড় কিছুই হতে পারে না। নিরাপত্তা আগে, তারপর সবকিছু। যদি বাঁচতে পারি, অবশ্যই আমরা ক্রিকেট খেলতে পারব। ক্রিকেট বোর্ড আছে, বাংলাদেশ সরকার আছে, তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, অবশ্যই সবার ভালোর জন্যই নেবেন। সবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তারা সিদ্ধান্ত দেবেন।’

যদি লম্বা সময়ের জন্য খেলা বন্ধ থাকে, তাহলে ফিটনেস ঠিক রাখা হতে পারে মুশকিল। বাড়িতে গিয়ে রানিং করে ফিটনেস ঠিক রাখার চিন্তা মোস্তাফিজের। মিঠুনও জানালেন, ফিটনেস হয়তো ঠিক রাখা যাবে কিছুদিন। কিন্তু সময়টা যদি প্রলম্বিত হয়, তবে? ক্রিকেটারদের আশা, দোটানা আর এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে দ্রুত। আপাতত সবটাই তাই সময় আর পরিস্থিতির হাতে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago