যেভাবে ক্ষতি করে, বাঁচার উপায় কী?
নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত আট হাজার মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ। যতই দিন যাচ্ছে এ সংখ্যা বাড়ছে।
মানব শরীরে প্রবেশের পর এই ভাইরাসটি কী এমন করে যে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়?
ইতোমধ্যে আমরা মোটামুটিভাবে জেনে গেছি যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের উপসর্গ— জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। আশেপাশের কারো চোখ-নাক-মুখের মাধ্যমে এটি শরীরে প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গেই এই অণুকণা কণ্ঠনালীতে পৌঁছে যায়। সেখানে স্পাইকের মতো দেখতে করোনাভাইরাসের অণূকণা মানবদেহের সেলে ঢুকে পড়ে।
এই ভাইরাস, সেলে তার অনুলিপি তৈরি করতে থাকে। যা আশেপাশের সেলগুলোকেও সংক্রমিত করে। যার উপসর্গ দেখা যায় গলা ব্যথা ও শুকনো কাশিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম শেফনার নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, এই ভাইরাসটি এরপর নিচের দিকে নেমে ব্রনকাল টিউবে প্রবেশ করে। যখন এটি ফুসফুসে পৌঁছে যায় সেখানকার ঝিল্লিকে সংক্রমিত করে। এটি ফুসফুসের অ্যালভেলি বা থলিগুলোকে ক্ষতি করতে পারে। তখন রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ও শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিতে ফুসফুসকে আরও কষ্ট করতে হয়।
যদি ফুসফুস ফুলে উঠে তবে সেই ঝিল্লি পার হওয়া অক্সিজেনের জন্য বেশ কষ্টকর। ফুসফুস ফুলে যাওয়া এবং অক্সিজেনের প্রবাহ ব্যাহত হলে সেইসব জায়গা তরল ও মরা কোষে পূর্ণ হয়ে যায়। এসময় তীব্র শ্বাসকষ্ট অনুভব হয়। অনেককে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। আর অবস্থা আরও খারাপ হলে, যাকে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম বলা হয়, যেখানে ফুসফুসে তরল এতোটাই বেড়ে যায় যে, কোনো সহায়তাই আর কাজ করে না। এই পর্যায়ে চলে যাওয়া রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব।
শিকাগো স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. শু ইউয়ান শিয়াও জানিয়েছেন, ফুসফুসের দুই পাশের পেরিফেরিয়াল এরিয়ায় ভাইরাসটি ক্ষতি করা শুরু করে। এরপর ফুসফুসের উপরের দিকে যেতে কিছুটা সময় নেয়। তিনি বলেন, চীনের উহানে অনেককে শুরুতে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এ কারণে। এই পরীক্ষা না করেই অনেককে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর এ কারণেই করোনাভাইরাস সেখানে এতটা ছড়িয়ে পড়ে।
কেবল কি ফুসফুসই আক্রান্ত হয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ফুসফুসই আক্রান্ত হয় না। নাক থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত সংক্রমিত হতে পারে। ফুসফুস ছাড়াও ভাইরাসটি পরিপাকতন্ত্রের সেল আক্রান্ত করতে পারে। এ কারণেই কোনো কোনো আক্রান্তের ডায়রিয়ার ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
ভাইরাসটি রক্তপ্রবাহেও যেতে পারে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন থেকে বলা হয়েছে, নতুন করোনাভাইরাসের জিনগত উপাদান বা আরএনএ মানুষের রক্ত ও মলে পাওয়া গেছে।
অস্থিমজ্জা ও যকৃতও আক্রান্ত হতে পারে। করোনাভাইরাস হৃৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃতের মতো অঙ্গের সরাসরি ক্ষতি করতে পারে বলে জানিয়েছেন ড. শেফনার। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীর উচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়, আর তখনই কিছু অরগ্যানে ত্রুটি দেখা দেয়।
আর তখন কিছু রোগী, কেবল ভাইরাসের কারণে নয়, নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
মস্তিষ্কে এই ভাইরাস ক্ষতি করে কি না, এখনও পর্যন্ত তা জানা যায়নি। তবে, গতমাসে জার্নাল অব মেডিকেল ভাইরোলজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্সের সঙ্গে কোভিড-১৯’র মিল থাকায় নার্ভ সেলের ক্ষতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
কেন অনেকে বেশি অসুস্থ হচ্ছেন, অনেকে কম
নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় ৮০ ভাগেরই হালকা উপসর্গ। ২০ ভাগ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে এটি। যারা বয়স্ক ও অন্যান্য জটিল রোগ রয়েছে তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
সাবান দিয়ে হাত ধোবেন কেন
কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে ভাইরাসটি দেহের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণার তথ্য জানা গেছে, তাতে করোনাভাইরাস কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত উন্মুক্ত পরিবেশে টিকে থাকে এবং আরও অনেককে সংক্রামিত করতে পারে।
ভাইরাসটি সাবান-পানির সংস্পর্শে এলে এর বাইরের লিপিড আবরণ গলে যায়। এতে ভাইরাসের অভ্যন্তরীণ উপাদান ধ্বংস হয়ে যায়। এ কারণে নিয়মিত সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ করা যাবে না। কারণ মুখ, নাক, চোখ দিয়ে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
Comments